সিলেটে বন্যায় ইটনা-মিঠামইন সড়ক কতটুকু দায়ী

অল ওয়েদার সড়ক

কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের তিনটি উপজেলার ( ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম)  মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে নির্মিত হয়েছিল ২৯.৭৩ কিলোমিটারের দীর্ঘ একটি সড়ক, কিন্তু ওই অঞ্চলে সুবিধা দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাস্তাটি। অকাল বন্যা দেখা যাচ্ছে, হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাচ্ছে। 

গত কয়েক দিনের পাহাড়ি ঢলের বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট-সুনামগঞ্জসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলা। সরকারের হিসাবে এখন পর্যন্ত দেশের ১০ জেলার ৬৪ উপজেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে কিশোরগঞ্জের হাওরে ইটনা-মিঠামইন সড়ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের একাংশের দাবি, এ সড়কটির কারণেই বন্যার পানি নেমে যেতে পারছে না। ফলে সিলেট-সুনামগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

আরও পড়ুন: চরে আটকা পড়েছে লঞ্চের শতাধিক যাত্রী— সবাই শিক্ষার্থী, উদ্ধারের আকুতি

সিলেট অঞ্চলের বন্যায় ইটনা, মিঠামইন সড়কের দায় আছে কি না জানতে চাইলে তা উড়িয়ে দেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে রাস্তার কথা বলছেন, সেখানে কিন্তু বড় বড় কয়েকটি সেতু আছে পানি সরে যাওয়ার জন্য। ওই অঞ্চলে এখনও পানিই আসেনি। পানি সরে যাওয়ার তাই প্রশ্নও আসে না। সেখানে দুটি বড় নদীও আছে, সেদিক দিয়েও পানি সরে যেতে পারে।

‘পানিটা এসেছে সিলেটের সুরমা নদীতে, কুশিয়ারাতেও এখনও পানি আসেনি। চেরাপুঞ্জি থেকে যে পানিটা আসে সেটা সাধারণত ফ্ল্যাশ ফ্লাড হয়। গত মাসের ১৬-১৭ তারিখে পানিটা বেড়েছিল, সেটি কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্য কমে এসেছিল। এবারও সেটি আশা করি কমে যাবে। এই পানি মেঘনা দিয়ে চলে যাবে।’

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত তিন দিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২ হাজার ৪৫৮ মিলিমিটার, যা সিলেটের সুরমা নদী হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পুরো বাংলাদেশে এক বছরে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২ হাজার ৩০০ মিলিমিটার। অর্থাৎ এ বছর এই অঞ্চলে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা পুরো মৌসুমের বৃষ্টিপাতকে এরই মধ্যে ছাড়িয়ে গিয়েছে। ভারত থেকে ঢল আকারে নেমে আসা এই বিপুল পরিমাণ বৃষ্টির পানি এবারের বন্যার মূল কারণ বলে মনে করছে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র।

পূর্বাভাস কেন্দ্র বলেছে, এ মুহূর্তে দেশের ১১টি নদীর পানি ১৭টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে।

পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমান বন্যার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে পরপর তিন দিনে প্রায় ২ হাজার ৪০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে, যা উজানে নামছে, যেখানে আমাদের দেশের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২ হাজার ৩০০ মিলিমিটার।

‘এত বেশি পানি বাংলাদেশের ভেতরে এসে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এবারের বন্যার এটাই মূল কারণ। এত অল্প সময়ে এত বৃষ্টি আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে সাধারণত বৃষ্টি বেশি হয়। বেশি বৃষ্টিপাতের মাস জুলাই এবং আগস্ট। মূল মাসের আগেই বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া পূর্বাভাস আছে, দেশের ভেতর ও বাইরে এবার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার। যেহেতু জুলাই মাস আসন্ন, তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে।

‘মূল মৌসুম শুরুর আগেই আমরা এবার বন্যা দেখেছি। মে মাসে একটা বন্যা হয়েছে। এবারকার বন্যা তৃতীয়বারের মতো বন্যা। এত বড় বন্যার আঘাত আসলে সেটা সহ্য করা কঠিন। এ কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হচ্ছে।’