বাড়িতেই সিজার করলেন পশু চিকিৎসক, নবজাতকসহ মায়ের মৃত্যু

সিজার
নবজাতকসহ মায়ের মৃত্যু

নেত্রকোনার বারহাট্টায় পশু চিকিৎসকের করা সিজারের পর নবজাতকসহ শরীফা আক্তার (১৯) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

বুধবার (৪ মে) দুপুর দুইটার দিকে উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। প্রসূতি শরীফা একই গ্রামের বাকপ্রতিবন্ধী হাইছ উদ্দিনের মেয়ে।

অভিযুক্ত পশু চিকিৎসক হলেন একই উপজেলার জীবনপুর গ্রামের আবুল কাশেম। তিনি স্থানীয় এলাকার একজন পশু চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত। তবে কিছুদিন ধরে তিনি পশুর পাশাপাশি মানুষের চিকিৎসাও করেন। আবুল কাশেম গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে হেরে যান। 

নিহত শরীফার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শরীফা বারহাট্টা সরকারি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাস করেছেন। গত বছর পার্শ্ববর্তী সুনামগঞ্জের তাহেরপুর এলাকার মহসিন মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় শরীফার। সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে এলে গত সপ্তাহে স্বামীর বাড়ি থেকে চন্দ্রপুর বাবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। বুধবার হঠাৎ প্রসব ব্যথা ওঠলে চিকিৎসক আবুল কাশেম বাড়িতেই সিজার করেন। এরপর একটি ছেলে সন্তান জন্ম নিলেও মা-সন্তান দুজনই মারা যায়।

বুধবার ঘটনাটি ঘটার পর উপস্থিত লোকজন ওই পশু চিকিৎসকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে মারমুখী হয়ে উঠলে কয়েকজন ওই চিকিৎসককে বাড়ির পেছন দিয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।

ভুক্তভোগীর মা মাফিয়া আক্তার খাতুন বলেন, সকালে শরীফার প্রসব ব্যথা শুরু হলে কাশেম ডাক্তারকে খবর দেওয়া হয়। তিনি রোগীকে দেখে বললেন, সবকিছু স্বাভাবিক আছে কোনো সমস্যা নাই। আমরা নেত্রকোনা নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার কথায় ভরসা পেয়ে আর নেইনি। আমরা সাধারণ মানুষ। ডাক্তারের কথা মতই সব করেছি। পরে এক পর্যায়ে তিনি সিজার করেন। পরে ওষুধ সেলাইন না থাকায় এগুলো আনতে একজনকে মোহনগঞ্জ পাঠানো হয়। তবে ওষুধ নিয়ে আসার আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শরীফার মৃত্যু হয়। 

আরও পড়ুন: বেতন ছাড়াই ঈদ: নীরবে চোখের জল ফেলছেন শিক্ষকেরা

শরীফার চাচা গিয়াস উদ্দিন ও আবুল কালাম বলেন, আবুল কাশেম একজন পশু চিকিৎসক। তবে মাঝে মাঝে মানুষের চিকিৎসাও করেন। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ছাড়াই শরীফার সিজার করে ফেলেন। পরে রক্তক্ষরণ শুরু হলে একজনকে ওষুধ আনতে পাঠানো হয় মোহনগঞ্জে। অনেক দূরের পথ হওয়ায় ওষুধ নিয়ে আসতে আসতেই  অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শরীফার মৃত্যু হয়। এদিকে টানা হেঁচড়া করতে গিয়ে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া ছেলে সন্তানেরও মৃত্যু হয়। 

বারহাট্টার সিংধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসিম তালুকদার বলেন, কাশেম একজন পশু চিকিৎসক। মানুষের চিকিৎসা বিশেষ করে সিজার করা তো তার একেবারেই উচিত হয়নি।

অভিযুক্ত পশু চিকিৎসক আবুল কাশেম সিজারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সিজারের পর ওষুধ আনতে পাঠানো হয়েছিল। দূরের পথ ওষুধ ও সেলাই আনতে দেরি হওয়ার এ ঘটনা ঘটেছে। তবে শুধু পশু নয় মানুষের চিকিৎসার সনদও তার আছে বলে দাবি করেছেন। দীর্ঘদিন থেকে মানুষের চিকিৎসা করছেন বলে জানান তিনি।

মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসর (আরএমও) ডা. শাহরিয়ার জাহান ওসমানী বলেন, সিজার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি এমবিবিএস ছাড়া কারো করার নিয়ম নেই।

বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফুল হক বলেন, এ বিষয়ে কেউ কিছুই জানায়নি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।