নতুন পদ্ধতিতে মাধ্যমিকের মূল্যায়ন, ব্যস্ততা বাড়বে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)
আগামী বছর থেকে মাধ্যমিকের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে কাজ করছে এনসিটিবি

মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল্যায়ন ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসছে। আগামী বছর থেকে এ স্তুরে ‘প্রকল্পভিত্তিক শিখন পদ্ধতি’ প্রবর্তিত হবে। এতে পরীক্ষার ২০ শতাংশ নম্বর থাকবে এই মূল্যায়নের জন্য। বাকি ৮০ শতাংশ পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে শিক্ষার্থীদের। এর মাধ্যমে প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমের রূপরেখার বাস্তবায়ন পর্ব শুরু হবে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির উপস্থিতিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সভায় সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এনসিটিবির সদস্য সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান এ প্রসঙ্গে জানান, পুরোনো শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়ন (সিএ) ২০ শতাংশ নম্বরের ব্যবস্থা যুক্ত থাকলেও বাস্তবায়িত হয়নি। আগামী বছর পুরোনো শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবই যাবে। তাতে সিএ বাস্তবায়িত হওয়ার কথা। এতে প্রকল্পভিত্তিক শিখন পদ্ধতি যুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীর শিখনফল মূল্যায়নে বাকি সব পদ্ধতি আগের মতোই থাকবে। ক্লাস টেস্ট, অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা সবই থাকবে।

সূত্র জানায়, এ পদ্ধতিতে ছাত্র-ছাত্রীরা গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকের দেওয়া নানা সমস্যা বাস্তবজীবন ও পারিপার্শ্বিকতার আলোকে সাক্ষাৎকার ও সরেজমিনর দলবদ্ধ কাজের মাধ্যমে চিহ্নিত করে সমাধানে প্রস্তাব করে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করবে। পুরোনো পাঠ্যক্রমে মূল্যায়ন ব্যবস্থার একটি অংশ প্রবর্তনে নাম দেওয়া হয়েছে ‘অন্তর্বর্তীকালীন প্যাকেজ’।

এনসিটিবির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, শিক্ষক শ্রেণিকক্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের গ্রুপে ভাগ করে দেবেন। পরে প্রত্যেক গ্রুপকে কাজ দেবেন। শিক্ষার্থীরা বাস্তবসম্মত, অপেক্ষাকৃত জটিল প্রশ্ন, চ্যালেঞ্জ অনুসন্ধান, সমাধান করার জন্য নির্ধারিত সময়ে হাতে-কলমে সংশ্লিষ্ট জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করবে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি সূক্ষ্মচিন্তন, সৃজনশীল, সহযোগিতা, সমস্যা সমাধান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রভৃতিতে দক্ষতা অর্জন করবে।

এই রূপরেখায় সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ ও সর্বনিম্ন ৫০ শতাংশ প্রকল্পভিত্তিক শিখন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে। মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান না রাখাসহ আরও কিছু প্রস্তাব এতে রাখা হয়েছে। এর একটি প্রস্তাব ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। এতে দেখা যায়, দশটি মূল থিমের ওপর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এসব বিষয়ে প্রকল্প ঠিক করবেন শিক্ষক। এ পদ্ধতি প্রবর্তনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, শিক্ষাক্রমের রূপরেখার সঙ্গে শিক্ষক এবং এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষারর্থীদের সঙ্গে পরিচয় ও অভ্যস্ত করা। এ জন্য শিক্ষক গাইড করা হবে এবং অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

ইউজিসির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলা পর্যন্ত আন্দোলন

এ শিখন কার্যক্রমে মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। এর ৫০ শতাংশ করবেন শিক্ষক। বাকিটা করবে শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা। সহপাঠীরাই ভালো-মন্দ বিচার করবে এবং তার ভিত্তিতে নম্বর দেওয়া হবে। কুইজ, লিখিত অ্যাসাইনমেন্ট, উপস্থাপনাও থাকবে। শিক্ষক মূল্যায়ন করবেন কোর্সের সময়জুড়ে বিভিন্ন পর্যায়ে।

নতুন শিক্ষাক্রম ও রূপরেখার সঙ্গে যুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. এম তারিক আহসান বলেন, মূল্যায়নের ২০ শতাংশ অন্তর্র্বতীকালীন পেডাগজির বা শিক্ষাতত্ত্বের জন্য ধরা হয়েছে। এ পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমে নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয় সমন্বয় করে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন অর্জন করবে। এতে তারা ভবিষ্যতের জন্য দক্ষতা অর্জন করবে। এতে নতুন শিক্ষাক্রমের প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। কোভিডকালীন শিখন-শিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগও তৈরি হবে বলে জানান তিনি।