চাকরির সব দরজা বন্ধ, বয়স শেষ—বেকাররা যাবেন কোথায়?

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার দাবি জানিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা
চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ বছর করার দাবিতে আন্দোলন চলছে

করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় ১৪ মাস ধরে স্থবির দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। সে সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় সব ধরনের চাকরির দরজা। থমকে গেছে চাকরির বাজার। সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়া চরম সংকটে পড়ে গেছেন বেকার যুবসমাজ। এরমধ্যে চাকরিতে প্রবেশের বয়সও শেষ হয়ে যাচ্ছে অনেকে। ফলে দেশের লাখ লাখ বেকার জনগোষ্ঠী পড়ে গেছেন অথই সাগরে।

জানা গেছে, অধিকাংশ সরকারি চাকরির নিয়োগ কার্যক্রম এখন বন্ধ। বিসিএসও স্থগিত হয়ে গেছে। বিসিএস জটের কারণে বিপাকে রয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এরমধ্যে চাকরিপ্রার্থীদের বয়সও ঠিকই বেড়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের হতাশাও ক্রমশই বাড়ছেই। এ পরিস্থিতিতে অনেক কষ্টে ধার-দেনা করে চলতে হচ্ছে চাকরিপ্রার্থীদের।

চাকরিপ্রার্থী আবদুল হাই জানান, দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর বেকার বসে আছেন তিনি। চাকরির প্রস্তুতিও ঠিকভাবে নিতে পারছেন না। এরমধ্যে তীব্র আর্থিক সংকটে পড়েছেন। প্রতি মাসে মেসে থাকার খরচ জোগাড় করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় কি করবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, করোনার কারণে কর্মসংস্থানের ক্ষতি হচ্ছে। মানুষের জীবনযাপনেরও ক্ষতি হচ্ছে। এ বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় নেই। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সমাধানও দ্রুত করতে হবে। আশার আলো হচ্ছে, প্রতি বছরই বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে পিএসসি। স্নাতক সম্পন্ন করা চাকরিপ্রার্থীরা আবেদন করতে পারছেন। এটি ইতিবাচক বলে মনে করেন তিনি।

সূত্র জানায়, করোনার কারণে গত ৩১ মার্চ পিএসসির সকল পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। তবে মাঝে সাড়ে চার হাজার চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। তাও থমকে গেছে। গত ১৮ মে স্থগিত হয়ে যা ৪২তম বিসিএসের ভাইভা। গত ৩১ মার্চ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের লিখিত পরীক্ষাও স্থগিত হয়ে যায়।

এ ছাড়া করোনার কারণে ৪০তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ২০১৮ সালের আগস্টে এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। এমনকি ৩৮তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের ফলাফলও আটকে আছে। ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলও আটকে আছে। আর আগামী ৬ আগস্ট ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি নেওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে গেছে। তবে মহামারির মধ্যে ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে পেরেছে পিএসসি।

এ প্রসঙ্গে পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে পিএসসি আন্তরিক। কিন্তু মহামারির কারণে কিছুই করার নেই। পরিস্থিতি ভালো না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা বলেন তিনি।

শিক্ষা খাতের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ে ব্যর্থ দুই মন্ত্রণালয়

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে সরকারি ১৮ লাখ ২১ হাজার ২৮৪টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৬ জন কর্মরত রয়েছেন। বাকি তিন লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮ পদ ফাঁকা। করোনার কারণে এসব পদ পূরণের কাজ আটকে গেছে। তবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন নিয়েছে। এতে কিছুটা আশার আলো দেখছেন বেকাররা।

এদিকে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তথ্যমতে, দেশে এসএসসি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীদের এক-তৃতীয়াংশই বেকার। প্রতি বছর ২৬ লাখ তরুণ চাকরির বাজারে প্রবেশ করলেও ২০ লাখের কর্মসংস্থান হয়। আর সরকারি খাত মাত্র চার শতাংশ কর্মসংস্থানে সক্ষম। বাকি ৯৬ শতাংশ বেসরকারি, ব্যক্তিমালিকানা অন্যান্য কর্মসংস্থানের মাধ্যমে পূরণ হয়।

জানা গেছে, সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের পরীক্ষাও স্থগিত হয়ে যাওয়ায় চাকরি প্রত্যাশীরা কাজ ছাড়াই এখন ঘরবন্দি। টিউশন বা পার্টটাইম কাজও নেই। ফলে বেকার যুবসমাজ পড়েছেন চরম বিপাকে। একজন চাকরিপ্রার্থী চাকরির প্রস্তুতির জন্য গড়ে ৪/৫ বছর সময় পান। এরমধ্যে করোনার কারণে হারিয়ে গেছে প্রায় দেড় বছর। এরমধ্যেই অনেকের ওই বয়স শেষ হয়ে গেছে।

যদিও গত বছর ক্ষতি পোষাতেকয়েকমাসের ছাড় দিয়েছিল সরকার। তবে তা কোনো কাজেই আসেনি বলে জানিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীদের। এখন চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অন্তত ৩২ বছর করার দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা। তবে সরকার বয়স বাড়ানোর বিষয়ে আগ্রহী না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করা মারুফ হোসেন জানান, তার আবেদনের বয়স শেষ হচ্ছে ৩০মে। তিনি প্রকাশিত সব সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু নতুন কোনো বিজ্ঞাপন প্রকাশিত না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। এখন বয়স বৃদ্ধিসহ করোনাকালে বেকার জনগোষ্ঠীর হওয়া ক্ষতি সরকার পুষিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেবেন বলে তারা আশা করছেন।