‘নির্বাচনে বিজয়ী হতে দল বিলুপ্তের মচ্ছব’
- ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:২১
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘নিশ্চিত বিজয়ী’ হওয়ার আশায় দল বিলুপ্তির মচ্ছব চলছে। গেল সপ্তাহখানেক সময়ের মধ্যেই এখন পর্যন্ত চারটি রাজনৈতিক দলের আত্মাহুতির ঘটনা ঘটেছে। আত্মাহুতি দেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিষ্ঠাতারা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রত্যাশায় নিজ নিজ দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন।
গত ৮ ডিসেম্বর নিজের দল বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- বিএলডিপি (একাংশ) বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম। ওইদিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর হাতে ফুল দিয়ে সেলিম বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীতা নিশ্চিত করেন।
আমীর খসরু গণমাধ্যমকে জানান, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসন থেকে সেলিম ধানের শীষ প্রতীকে লড়বেন।
এরপর গত সোমবার নিজের দল বাংলাদেশ জাতীয় দল বিলুপ্ত করে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা। বিএনপি মহাসচিব ঘোষণা করেন, হুদা কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী। যদিও গত ২ নভেম্বর গুলশান কার্যালয়ে প্রথম দফার দল মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণার সময় মির্জা ফখরুল ওই আসনটিতে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মজিবুর রহমান ইকবালের নাম ঘোষণা করেছিলেন।
আরও পড়ুন : শনিবার হাদির কবর জিয়ারত করবেন তারেক রহমান
এদিকে, ঢাকা-১৩ সংসদীয় আসনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে বিএনপি। ববি আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে গড়া অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এনডিএম দু-একদিনের মধ্যে বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দেবেন বলে জানান মির্জা ফখরুল।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এতথ্য জানান।
একই সময়ে এক সময়ের বিএনপির সিনিয়র নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির(এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি জানান, কুমিল্লা-৭ আসন থেকে নির্বাচন করবেন তিনি।
এলডিপির মহাসচিবের পদ থেকে পদত্যাগ করে ধানের শীষের প্রত্যাশায় বিএনপিতে ফেরত আসেন রেদোয়ান আহমেদ। রেদোয়ানও পূর্বে বিএনপি নেতা ছিলেন। বিএনপি থেকে রেদোয়ান কুমিল্লার ওই আসনে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, হয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রীও।
এবার নির্বাচন কমিশনের বিধিমালার কারণে জোটবদ্ধ প্রার্থীরা জোটের মূল দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবেন না। নির্বাচনে যার যার নিজ দলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। সেই কারণে এলডিপির ছাতি প্রতীকে ভরসা না পেয়ে অবশেষে মহাসচিবের পদ থেকে পদত্যাগ করে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হলেন রেদোয়ান।
আরও পড়ুন : ‘কাল আমাদের ঈদের দিন’
এ ছাড়া নিজ দল ত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নড়াইল-২ আসন থেকে বিএনপির প্রতীকে নির্বাচনের ঘোষণা দেন।
এর আগে, দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দেন বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম। একই পথে হাঁটেন যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা-ও।
দল বিলুপ্ত করে ধানের শীষের প্রার্থী হওয়া ছাড়াও সমঝোতার মধ্য দিয়ে জোটবদ্ধভাবে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন- ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের শরিক সাতটি দলের নেতারা।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছিলেন তাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করে আমরা যে সেদ্ধান্তগুলোতে একমত হতে পেরেছি সেই আসনগুলোতে আমরা সমঝোতা করেছি তা আমি আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছি।
এই সমঝোতায় নাগরিক ঐক্য, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ইসলামী ঐক্যে জোট, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এনপিপি ও গণঅধিকার পরিষদকে আসন ছেড়ে দেবে বিএনপি।
যাদের সাথে নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছে, নতুন নিয়ম অনুযায়ী তারা নিজ নিজ প্রতীকে অংশ নেবেন বলে জানান ফখরুল।
আরও পড়ুন : জনগণের কাছে বিএনপির ‘অগ্রিম দুঃখ প্রকাশ’
বিএনপি জোটের প্রার্থীরা হলেন- বগুড়া-২: নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। পিরোজপুর-১: জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার। যশোর-৫: ইসলামী ঐক্যে জোটের মুফতি রশিদ বিন ওয়াক্কাস। পটুয়াখালীর-৩: গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর। ঝিনাইদহ-৪: গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন। ঢাকা-১২: বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া-৬: গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই তালিকার পরও আলোচনা চলবে, তারপরে সিদ্ধান্ত হলে দলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হবে।
এর আগে মঙ্গলবার জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় ৪ টি আসন ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। সব মিলিয়ে শরিকদের জন্য বিএনপি এ পর্যন্ত ১২টি আসন ছাড়ল।
এ ছাড়া বিএনপি দলীয়ভাবে দুই ধাপে ২৭২টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল। তার সঙ্গে রেদোয়ান ও ববির আসন ধরলে মোট ২৭৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত হল। সেই হিসেবে আরো ১৪টি আসনের ফয়সালা বাকি থাকল।