‘টিকটকে আসক্ত’ স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখেন স্বামী
- ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৫
বগুড়ায় টিকটকে নাচের ভিডিও শেয়ার করাকে কেন্দ্র করে গৃহবধূ মারুফা বেগমকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখার অভিযোগে স্বামীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা ধায়ের করা হয়েছে। পরে প্রধান আসামি স্বামী মুকুল প্রামাণিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে নিহত মারুফার মা বেহুলা বেগম বগুড়া সদর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলার পর সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার প্রধান আসামি মুকুল প্রামাণিক বগুড়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন খাতুনের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। কোর্ট ইন্সপেক্টর শহীদুল ইসলাম ও বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার এজাহারে বাদী বেহুলা বেগম উল্লেখ করেন, প্রায় আট বছর আগে তিনি তার মেয়ে মারুফা বেগমকে বগুড়া সদরের শেখেরকোলা ইউনিয়নের নুরুইল গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে মুকুল প্রামাণিকের সঙ্গে বিয়ে দেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে নিসা মনি (৭) নামে একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। প্রায় এক বছর আগে মুকুল মারুফাকে তালাক দেন। পরে চার মাস আগে আবারও তাকে বিয়ে করেন। পুনরায় বিয়ের পর থেকে সামান্য কারণেও মুকুল মারুফাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন: হাদির জানাজায় আগতদের জন্য ডিএমপির নির্দেশনা
এজাহারে আরও বলা হয়, গত ১৪ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে মুকুল বাদীকে জানান, মারুফা বাড়ি থেকে কোথাও চলে গেছে। পরে ১৮ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ২টার দিকে বাদী জানতে পারেন, পুলিশ মুকুলের বাড়ির টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে তার মেয়ের লাশ উদ্ধার করেছে।
বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ওসি ইকবাল বাহার জানান, মারুফার টিকটকে আসক্ত থাকার বিষয়টি তার স্বামী মুকুল পছন্দ করতেন না। গত ১৩ ডিসেম্বর মারুফার চাচাতো বোনের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বিয়েতে মারুফা নিজের নাচানাচির ভিডিও ধারণ করে টিকটকে শেয়ার করেন। বিষয়টি নিয়ে ওই দিন রাত ১০টার দিকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এ সময় মুকুল প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে মারুফার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে বাড়ির টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে মরদেহ ফেলে দেন এবং সিমেন্ট দিয়ে ট্যাংকের মুখ প্লাস্টার করে বন্ধ করে রাখেন।
পুলিশ জানায়, ঘটনার পর মুকুল মিয়া বগুড়া সদর থানায় একটি সাধারণ অভিযোগ করেন, যাতে উল্লেখ করা হয় যে, তাকে কিছু না জানিয়ে মারুফা বাড়ি থেকে অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছেন। অভিযোগের পর বগুড়া পুলিশ সুপারের নির্দেশে জেলা গোয়েন্দা শাখা ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তের একপর্যায়ে বেরিয়ে আসে, মারুফাকে হত্যা করে নিজ বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে লাশ গুম করেছেন স্বামী মুকুল মিয়াই।
আরও পড়ুন: আইনজীবী আলিফ হত্যায় সাদা টি-শার্ট পরে অংশ নেওয়া সেই যুবক গ্রেপ্তার
ডিবি পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, প্রায় নয় বছর আগে পারিবারিকভাবে মারুফাকে বিয়ে করেন মুকুল মিয়া। বিয়ের পর থেকেই তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহ চলছিল। স্বামীর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে টিকটক করায় দীর্ঘদিন ধরেই মুকুল মারুফার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।
ডিবির ইনচার্জ ইকবাল বাহার বলেন, টিকটকে আসক্ত হয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে মুকুল মিয়া তার স্ত্রী মারুফাকে হত্যা করেন এবং লাশ সেপটিক ট্যাংকে গুম করে রাখেন। তাকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়া সদর উপজেলার শেখেরকোলা ইউনিয়নের নুরুইল মধ্যপাড়া এলাকায় মুকুল মিয়ার বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে মারুফার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত মারুফা বগুড়া সদর উপজেলার পীরগাছা নন্দীপাড়া এলাকার মাহাবুব আলমের মেয়ে। লাশ উদ্ধারের পর তা ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।