ঠিকমতো চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন বেগম খালেদা জিয়া : ডা. জাহিদ
- ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:০৩
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী যে চিকিৎসা বেগম খালেদা জিয়াকে দেওয়া হচ্ছে, তিনি আলহামদুলিল্লাহ তা ঠিকমতো গ্রহণ করতে পারছেন। এ সময় তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমতে আবারও সুস্থ হয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি তথা দেশের জন্য তার যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেন সে মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও দোয়ার আহ্বান জানান।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর বসুন্ধরা এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশবাসীর মধ্যে নিশ্চয়ই আগ্রহ রয়েছে এই মুহূর্তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কেমন। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, কয়েকদিন আগেও যেভাবে বলা হয়েছিল, বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা সেই অবস্থাতেই রয়েছে। তার চিকিৎসা একটি মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এই মেডিকেল বোর্ডে বাংলাদেশের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসকরা সমন্বিতভাবে যুক্ত রয়েছেন।
ডা. জাহিদ হোসেন জানান, প্রতিদিন সকালে মেডিকেল বোর্ড বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে। সময় পার্থক্যের কারণে সন্ধ্যার পর বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে যৌথভাবে এমডিটি বা মেডিকেল মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিমের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসব বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই তাঁর চিকিৎসা পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী যে চিকিৎসা বেগম খালেদা জিয়াকে দেওয়া হচ্ছে, তিনি আলহামদুলিল্লাহ তা ঠিকমতো গ্রহণ করতে পারছেন। গত কয়েকদিন ধরে তাঁর শারীরিক অবস্থা যে অবস্থায় ছিল, সেটিই তিনি বজায় রাখতে পারছেন। এ কারণে চিকিৎসকরা এবং তাঁর চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই আশাবাদী যে ইনশাআল্লাহ তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবেন।
আরও পড়ুন: এনসিপি নেত্রী জান্নাত আরা রুমীর মরদেহ উদ্ধার
তবে একই সঙ্গে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও বয়সের বিষয়টি মনে রাখতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, অতীতে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে এমন অসুস্থ অবস্থার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে যথাযথ চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি বা দেওয়া যায়নি। এর ফলেই তাঁর শারীরিক জটিলতা বেড়ে যায় এবং এবার তিনি একটি কঠিন সময় পার করছেন।
এ সময় তিনি জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান সার্বক্ষণিকভাবে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে তদারকি করছেন। পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মধুমরাফাত রহমান কোকোর সহধর্মিণী, সৈয়দা আশরাফা রহমান, তাঁর ছোট ভাই শাহীন ইস্কান্দার, বড় বোনসহ পরিবারের সকল সদস্য নিয়মিতভাবে তাঁর চিকিৎসার খোঁজখবর নিচ্ছেন। যদিও তিনি বর্তমানে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) থাকায় সরাসরি পাশে থাকা সম্ভব নয়, তবুও পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালের ভেতরে কিংবা বাইরে অবস্থান করে সার্বক্ষণিকভাবে চিকিৎসার বিষয়টি নজরে রাখছেন।
ডা. জাহিদ হোসেন আরও বলেন, বিএনপির মহাসচিবসহ দলের স্থায়ী কমিটির সকল সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের অগণিত নেতাকর্মী এবং দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সর্বোপরি প্রধান উপদেষ্টা ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সহযোগিতার জন্য তারা কৃতজ্ঞ। একই সঙ্গে এভারকেয়ার হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা যে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন, সেজন্যও তিনি ধন্যবাদ জানান।
এ সময় তিনি গণমাধ্যমের মাধ্যমে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই হাসপাতালে আরও অনেক রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসায় যাতে কোনো ধরনের ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহযোগিতা করছে। তিনি অনুরোধ করেন, এভারকেয়ার হাসপাতাল সবার জন্য উন্মুক্ত এবং এখানে সেবা গ্রহণের অধিকার সবারই রয়েছে। যারা আগে এখানে চিকিৎসা নিতেন, তারা যেন নির্বিঘ্নে চিকিৎসা নিতে পারেন।
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার কারণে অন্য কোনো রোগীর চিকিৎসায় কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না এবং বিএনপির কোনো নেতাকর্মীও কোনো ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি করবে না। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন ও সহযোগিতাপূর্ণ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলন শেষে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার জন্য উপস্থিত সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।