বিজ্ঞান গবেষণায় সাফল্যের মাইলফলক ঢাবির, উপাচার্যের উচ্ছ্বাস
- ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৪২
এবারের টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) ইন্টারডিসিপ্লিনারি সায়েন্স র্যাংকিংস ২০২৬ -এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বিশ্বে ৫২তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে। যা ঢাবির বিজ্ঞান গবেষণার ইতিহাসে রেকর্ড। এ বিষয়টি জানিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান।
তিনি বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই সাফল্যের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও উচ্চমানের গবেষণা, আন্তর্জাতিক প্রকাশনা এবং আন্তঃবিষয়ক সহযোগিতার মাধ্যমে বৈশ্বিক পর্যায়ে স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজ অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে তিনি বিষয়টি জানান এবং উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আপনাদের আগ্রহ ও মমতার জন্য সবসময়ের মতো কৃতজ্ঞতা। র্যাঙ্কিং সংক্রান্ত ধারাবাহিক উন্নতির একটি ভালো খবর বিনীতভাবে জানাচ্ছি।
আমার সংশ্লিষ্ট সহকর্মী যারা কঠোর পরিশ্রম করেছেন তাঁদের ধন্যবাদ। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া। এখনও অনেক পথ বাকি…
এবারের Times Higher Education (THE) Interdisciplinary Science Rankings ২০২৬-এ আমরা বিশ্বব্যাপী ৫২তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ স্থান অর্জন করেছি। যা আমাদের বিজ্ঞান গবেষণার ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আমাদের সীমিত সংখ্যক কিন্তু অত্যন্ত দক্ষ বিজ্ঞানীরা এই সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে, আমাদের বিজ্ঞানীরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করেছেন, যা গবেষণার গুণমান এবং খ্যাতি উভয়কেই শক্তিশালী করেছে।
আরও পড়ুন: বিজয় দিবসে ঢাবিতে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা
এই অর্জন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তঃবিষয়ক গবেষণা পরিবেশ, উন্নত গবেষণা ফলাফল ও আন্তঃঅনুষদ সহযোগিতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। র্যাঙ্কিং বিশ্লেষণ করা হয়েছে তিনটি মূল সূচকে:
ইনপুটস (১৯%)-অর্থায়ন ও শিল্প-সংযোগ;
প্রক্রিয়া (১৬%)-আন্তঃবিষয়ক গবেষণাকে সহায়তা করে এমন কাঠামো ও
আউটপুটস (৬৫%)-গবেষণার পরিমাণ, গুণমান ও খ্যাতি।
মূল অর্জন:
ইনপুটস:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা তহবিলকে আন্তঃবিষয়ক থিম (জলবায়ু, জনস্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ)-এ বরাদ্দ করা হয়েছে।
ফার্মাসিউটিক্যালস, আইসিটি/এআই, পরিবেশগত পরীক্ষা ও কনসালটিং খাতে শিল্প-সংযুক্ত গবেষণা চুক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রক্রিয়া:
বিভিন্ন অনুষদে KPI ও প্রতিবেদন কাঠামো থাকায় আন্তঃবিষয়ক সাফল্য পরিমাপ করা সম্ভব হয়েছে।
শেয়ার্ড ল্যাব, কোর ফ্যাসিলিটি, কেন্দ্রীয় গবেষণা প্ল্যাটফর্ম ও প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
টেনিউর ও প্রমোশনে আন্তঃবিষয়ক প্রকাশনার স্বীকৃতি নিশ্চিত হয়েছে।
আউটপুটস:
পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, ন্যানোম্যাটেরিয়াল, অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স ও ডেটা সায়েন্সে প্রকাশনার পরিমাণ ও আন্তর্জাতিক যৌথ প্রকাশনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বহির্মুখী উদ্ধৃতি, গুণমান ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে।
আমরা গবেষকদের সর্বোচ্চ ফ্যাসিলিটেশন প্রদান করেছি। গবেষণার খরচ, প্রশাসনিক সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক প্রকল্পে অংশগ্রহণের সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাদেরকে সমর্থন করা হয়েছে। এছাড়া, আমাদের বৈশ্বিক ও স্থানীয় নেটওয়ার্ক সক্রিয় রাখা, বিদেশি বিশেষজ্ঞ এবং অতিথিদের সঙ্গে নিয়মিত সম্পর্ক বজায় রাখা ও সীমিত সম্পদের মধ্যেও গবেষকদের সম্মান প্রদানের উদ্যোগ এ সাফল্যের অন্যতম কারণ।
এই অর্জন আমাদের জন্য একটি বড় গর্ব এবং ভবিষ্যতে এই অবস্থান ধরে রাখাই আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। এই সাফল্যের পেছনে র্যাঙ্কিং কমিটি ও সহকর্মীদের অবদানও গুরুত্বপূর্ণ। আমি আমাদের গবেষক, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ এই সামান্য সফলতা সম্ভব হয়েছে তাদের সহযোগিতা ও অঙ্গীকারের মাধ্যমে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই সাফল্যের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও উচ্চমানের গবেষণা, আন্তর্জাতিক প্রকাশনা এবং আন্তঃবিষয়ক সহযোগিতার মাধ্যমে বৈশ্বিক পর্যায়ে স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব।