সেন্টমার্টিনগামী জাহাজের টিকিট-পণ্যের দ্বিগুণ-তিনগুণ দাম, বৈষম্যের শিকার পর্যটকরা
- ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০২
দীর্ঘ নয় মাস পর আবারও পর্যটকদের জন্য খুলেছে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। প্রতিদিন হাজারো মানুষ নীল জলরাশি আর অপরূপ প্রকৃতি উপভোগ করতে দ্বীপে ভিড় করলেও—ভ্রমণের আনন্দ ম্লান হয়ে যাচ্ছে টিকিট সিন্ডিকেট, অতিরিক্ত ভাড়া এবং দ্বীপে পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে। পর্যটনবান্ধব নীতিমালা ও কঠোর নজরদারি না থাকলে দেশের সবচেয়ে সুন্দর প্রবাল দ্বীপটির ভবিষ্যৎ আবারও সংকটে পড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন অনেকে।
পর্যটকদের অভিযোগ, কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত প্রায় ১১০ কিলোমিটারের নৌপথে যাওয়া–আসার জাহাজ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। কেবিন ভাড়া ৮ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ ঢাকা–ভোলা প্রায় ৩০০ কিলোমিটার নৌপথে সর্বোচ্চ ভাড়া থাকে ১ হাজার টাকার মধ্যে।
জানা গেছে, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটি থেকে সেন্টমার্টিনের দূরত্ব মাত্র ১৮ কিলোমিটার। স্থানীয়রা ৫০০–৭০০ টাকায় যাতায়াত করলেও পর্যটকদের সেই রুট ব্যবহার করতে প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে। স্পিডবোট চলাচল থাকলেও সাম্প্রতিক দুর্ঘটনায় মা–মেয়ের মৃত্যুর পর টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দেয়—ফলে স্বল্পদূরত্বের রুটটি এখন কার্যত অচল।
সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমন নিশ্চিতে উপজেলা প্রসাশন সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে। তবুও যদি কোনো অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করে তবে উপজেলা প্রসাশন জাতীয় ভোক্তা অধিকার আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে—মোহাম্মদ ইমামুল হাফিজ নাদিম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, টেকনাফ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইনানী থেকে সেন্টমার্টিনের দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার। এই রুটে ভাড়া কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এখানেও জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়নি। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে কক্সবাজার ঘাট ও বিশেষ কিছু জাহাজ কোম্পানির ওপরই পুরো ভ্রমণ নির্ভর হয়ে পড়েছে।
শুধু তাই নয়, জাহাজের টিকিট বিক্রিতেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। যাত্রার প্রথম দিনেই নিবন্ধনবিহীন টিকিট বিক্রির দায়ে ‘কেয়ারী সিন্দাবাদ’কে জরিমানা করে জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে ফটোকপি করা টিকিট দিয়ে একাধিক ব্যক্তি জাহাজে ওঠার ঘটনাও ধরা পড়ে, যার ফলে প্রকৃত টিকিটধারীরা ভোগান্তির শিকার হন।

অন্যদিকে, দ্বীপে খাবার, বিশুদ্ধ পানি, প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ সব পণ্যের দাম স্বাভাবিক মূল্যের দ্বিগুণ। ব্যবসায়ীদের দাবি—টেকনাফ হয়ে পণ্য আনতে খরচ বেশি, পরিবহন ঝুঁকিও রয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, মৌসুমে অতিরিক্ত লাভ তুলতে একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সক্রিয়।
চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিনে ঘুরতে যাওয়া সামিয়া হক নামের এক পর্যটক ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইতিহাসে এত খরচে সমুদ্র দেখা হয়নি। দ্বীপে গিয়ে দেখি এক বোতল পানি দ্বিগুন টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পরিবার নিয়ে গেলে বাজেট তিনগুণ হয়ে যায়।
আবীর রহমান নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, শাহপরীর দ্বীপ রুট খুলে দিলে সবাই কম খরচে যেতে পারত। কিন্তু ওই রুটটা বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়ার জাহাজ ধরতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ইমামুল হাফিজ নাদিম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমন নিশ্চিতে উপজেলা প্রসাশন সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের সহকারী কমিশনার (ভূমি) গত দুইদিন আগেও সেন্টমার্টিনে অবস্থান করে সবকিছু মনিটরিং করেছেন। তবুও যদি কোনো অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করে তবে উপজেলা প্রসাশন জাতীয় ভোক্তা অধিকার আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।’
সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুরের দাবি, পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী এবার আগের চেয়ে কম পর্যটক যাচ্ছে বলে জাহাজ ভাড়া বেশি নিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা৷
আরও পড়ুন: গুরু সক্রেটিসকে বানানো হয়েছে শিষ্য প্লেটোর বইয়ের লেখক!
তিনি বলেন, ‘আমাদের টিকিট অনলাইনে কাটা যাচ্ছে বলে নির্ধারিত ভাড়াটা পর্যটন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, জেলা প্রসাশন সবার চোখের সামনে দিয়েই নেওয়া হচ্ছে। কোনো অসংগতি থাকলে তারা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত। আবার সেন্ট মার্টিনে এলিট শ্রেণীর মানুষেরা যাচ্ছে তাই এই সামান্য ভাড়া নিয়ে তাদের কোনো অভিযোগ নেই।’

কক্সবাজার জেলা প্রসাশনের অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক জনাব মো. শাহিদুল আলম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এবারের ভাড়া থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়ই পরিবেশ অধিদপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আপনার মারফত জানা অতিরিক্ত ভাড়া বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব এবং সেন্টমার্টিনে পণ্যের বাড়তি দাম নেওয়ার জন্য টেকনাফ উপজেলা প্রসাশনের মোবাইল টিম অভিযান চালিয়েছে। প্রয়োজনে এমন অভিযান অব্যাহত রাখা হবে যেন আমাদের সম্মানিত পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে প্রবাল দ্বীপ উপভোগ করতে পারে।’
ফের স্পিডবোট চলাচলের ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আজ (৮ ডিসেম্বর) আমরা স্পিডবোট মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত হয়েছে সর্বমোট ১৩ টি নির্দিষ্ট স্পিডবোট আগামীকাল থেকেই সেন্টমার্টিনে চলাচল করতে পারবে৷ পরিবেশের কথা মাথায় রেখে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো মেনে তাদের চলতে হবে। পর্যটকদের ইমারজেন্সির কথা মাথায় রেখেই দ্রুত স্পিডবোট চলাচলের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।’