নন-এমপিও স্কুল এমপিওভুক্তি বাজেটপ্রাপ্তি সাপেক্ষে, পদোন্নতিতে দক্ষতা যাচাইয়ের প্রস্তাব

  • স্কুল-কলেজের সংশোধীত এমপিও নীতিমালা
  • অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক © ফাইল ছবি

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা–২০২৫ খসড়া বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে বিস্তারিত মতামত পাঠিয়েছে অর্থ বিভাগ। নীতিমালার বিভিন্ন ধারা, সংজ্ঞা, শর্ত ও প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজনের সুপারিশের পাশাপাশি বাজেট প্রাপ্তি সাপেক্ষে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে দক্ষতা যাচাইয়ের প্রস্তাবও করা হয়েছে মতামতে।

গত ২৭ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শিহাব উদ্দিনের স্বাক্ষরে পাঠানো প্রস্তাবনার বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মতামত গ্রহণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এখন সংশোধীত এমপিও নীতিমালা চূড়ান্ত করে তা প্রকাশের কাজ করছে মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক-৩) সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানোর পর আমরা মাউশির মতামত নিয়েছি। প্রস্তাব, মতামত নিয়ে আমরা কাজ করছি। যেহেত অর্থ বিভাগ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে, সেহেতু তাদের প্রস্তাবই চূড়ান্ত হতে পারে।’

নীতিমালার বিতর্কিত অংশগুলোর একটি ছিল উদ্বৃত্ত পদের সমন্বয়। প্রস্তাবিত নীতিমালায় বলা হয়েছিল, কোনো প্রতিষ্ঠানে প্যাটার্নভুক্ত পদ শূন্য হলে এমপিওভুক্ত উদ্বৃত্ত পদ থেকে শিক্ষক বা কর্মচারীকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সমন্বয় করতে হবে। একইভাবে উদ্বৃত্ত জনবল সমন্বয়ের পরও যদি শূন্য পদ থাকে, তবে এমপিওভুক্ত নয় এমন শিক্ষকদের সমন্বয় করা হবে। তবে অর্থ বিভাগ মনে করে, এসব প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই নীতিমালার ৯.২ ও ৯.৩ এই দুটো ধারা বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগের পাঠানো মতামতে কর্মরত সংজ্ঞায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের খসড়ায় উল্লেখ ছিল, কোনো শিক্ষক বা কর্মচারী বিনা অনুমতিতে একটানা এক বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে তিনি এমপিও বিবেচনায় আসবেন না। অর্থ বিভাগ এই সময়সীমা কমিয়ে ৬০ দিন করার সুপারিশ করেছে। অর্থ বিভাগের সুপারিশে বলা হয়েছে, বিনা অনুমতিতে ৬০ দিন অনুপস্থিত থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এমপিওর অযোগ্য হবেন এবং সময়সীমা শেষে বিধি অনুযায়ী পদটি শূন্য ঘোষণা করে নতুন নিয়োগ দিতে হবে।

এমপিও অনুমোদন নিয়ে অর্থ বিভাগ বলেছে, এমপিও নীতিমালার শর্ত পূরণের পাশাপাশি এমপিওভুক্ত হলে অতিরিক্ত যে বাজেট প্রয়োজন হবে, সেটি বিবেচনা করেই প্রতিষ্ঠান বাছাই কমিটি সুপারিশ করবে। বাজেট বরাদ্দ সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেওয়া হবে। এর ফলে এমপিও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় আর্থিক সক্ষমতা মূল্যায়ন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে দক্ষতা যাচাই পরীক্ষার প্রস্তাবও দিয়েছে অর্থ বিভাগ। তাদের মতামতে বলা হয়েছে, পদোন্নতি পেতে শিক্ষককে নির্দিষ্ট একটি দক্ষতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে, যা শিক্ষকতার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

পাবলিক পরীক্ষায় ন্যূনতম পাসের হার নির্ধারণেও পরিবর্তন প্রস্তাব করেছে অর্থ বিভাগ। খসড়া নীতিমালায় ৩৫ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশের মধ্যে বিভিন্ন স্তরের পাসের হার নির্ধারণের কথা বলা হলেও অর্থ বিভাগ বলেছে, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোর ন্যূনতম পাসের হার ৬০ শতাংশ এবং মফস্বলে ৪৫ শতাংশ নির্ধারণ করা যেতে পারে। তাদের মতে, একই মানদণ্ড সব অঞ্চলে প্রয়োগ করা যৌক্তিক নয়; শিক্ষার বৈষম্য বিবেচনায় অঞ্চলভেদে ভিন্ন মানদণ্ড প্রয়োজন।

এমপিওভুক্তি ও প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি নিয়ে অর্থ বিভাগ বলেছে, কোনো প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি বা অধিভুক্তির শর্ত পূরণ করলেই এমপিও নিশ্চিত হবে না; আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় সরকার এমপিও অনুমোদন দেবে। পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়েছে, এমপিও অনুমোদনের আগে অর্থ বিভাগের সম্মতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে, যা ভবিষ্যতে এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়াকে আরও নিয়ন্ত্রিত করবে।

অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষকদের এমপিও প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগ নীতিমালার খসড়ায় থাকা প্রস্তাবই বজায় রেখেছে।বিধিমতে নিয়োগপ্রাপ্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়-অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স বিভাগের অনধিক ৩ হাজার ৫০০ শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এর জন্য শিক্ষার্থী সংখ্যা, পরীক্ষার্থী সংখ্যা ও পাসের হার সংক্রান্ত নির্ধারিত শর্ত পূরণ বাধ্যতামূলক থাকবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ভর্তির আগেই এক বছরের সেশনজটে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা 

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভাগ খোলার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত নীতিমালায় শিক্ষার্থী সংখ্যার যে মানদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, তা অর্থ বিভাগ বহাল রেখেছে। তবে তারা ৬.৩ অনুচ্ছেদে বিভাগ খোলার শর্তাবলি এবং পরিশিষ্ট ‘খ’-তে মহিলা কলেজের জন্য নির্ধারিত শিক্ষার্থী সংখ্যার মধ্যে অসামঞ্জস্য রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগে এই দুই অংশের মধ্যে সঙ্গতি আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

নীতিমালার বিতর্কিত অংশগুলোর একটি ছিল উদ্বৃত্ত পদের সমন্বয়। প্রস্তাবিত নীতিমালায় বলা হয়েছিল, কোনো প্রতিষ্ঠানে প্যাটার্নভুক্ত পদ শূন্য হলে এমপিওভুক্ত উদ্বৃত্ত পদ থেকে শিক্ষক বা কর্মচারীকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সমন্বয় করতে হবে। একইভাবে উদ্বৃত্ত জনবল সমন্বয়ের পরও যদি শূন্য পদ থাকে, তবে এমপিওভুক্ত নয় এমন শিক্ষকদের সমন্বয় করা হবে। তবে অর্থ বিভাগ মনে করে, এসব প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই নীতিমালার ৯.২ ও ৯.৩ এই দুটো ধারা বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

পাবলিক পরীক্ষায় ন্যূনতম পাসের হার নির্ধারণেও পরিবর্তন প্রস্তাব করেছে অর্থ বিভাগ। খসড়া নীতিমালায় ৩৫ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশের মধ্যে বিভিন্ন স্তরের পাসের হার নির্ধারণের কথা বলা হলেও অর্থ বিভাগ বলেছে, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোর ন্যূনতম পাসের হার ৬০ শতাংশ এবং মফস্বলে ৪৫ শতাংশ নির্ধারণ করা যেতে পারে। তাদের মতে, একই মানদণ্ড সব অঞ্চলে প্রয়োগ করা যৌক্তিক নয়; শিক্ষার বৈষম্য বিবেচনায় অঞ্চলভেদে ভিন্ন মানদণ্ড প্রয়োজন।