বিদেশে উচ্চশিক্ষা
জেনে নিন আয়ারল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনপ্রক্রিয়া, খরচ ও কাজের সুযোগ
- টিডিসি ডেস্ক
- ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:০৯
উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের দ্বীপরাষ্ট্র আয়ারল্যান্ড শুধু ইতিহাস–ঐতিহ্য নয়, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্যও বিশ্বব্যাপী পরিচিত। বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশটি। কিউএস র্যাংকিংয়েও আয়ারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে। এর মধ্যে ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিনের র্যাংক ৮১, ইউনিভার্সিটি কলেজ ডাবলিন ১৭১, গালওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ২৮৯ ও ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্ক ২৯২তম। এছাড়া ইউনিভার্সিটি অব লিমেরিক ও ডাবলিন সিটি ইউনিভার্সিটি যথাক্রমে ৪২৬ ও ৪৩৬তম অবস্থানে আছে।
ম্যানেজমেন্ট, অর্গানাইজেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, সাইকোলজি, মেডিসিন ও হেলথ বিষয় নিয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে দেশটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে বিশেষ জনপ্রিয়। পাশাপাশি ব্লক অ্যাকাউন্ট বা রেস্ট্রিকটেড ব্যাংক অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন না থাকায় শিক্ষার্থীদের জন্য প্রক্রিয়াটি তুলনামূলক সহজ।
ভিসার ধরন ও আবেদনপদ্ধতি
আয়ারল্যান্ডে দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের জন্য প্রয়োজন Long Stay ‘D’ Student Visa। আবেদন করতে হবে অনলাইনে AVATS ভিসা সিস্টেমের মাধ্যমে। আবেদনের সারসংক্ষেপ প্রিন্ট করে প্রয়োজনীয় নথিসহ জমা দিতে হয় নির্ধারিত ভিসা অফিসে। বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়াও বাধ্যতামূলক।
ভিসা ফি
*সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা: €60 (প্রায় সাড়ে ৮ হাজার টাকা);
*মাল্টি এন্ট্রি ভিসা: €100 (প্রায় ১৪ হাজার টাকার বেশি);
যদি পড়াশোনার অংশ হিসেবে অন্য দেশে যেতে হয়, মাল্টি এন্ট্রি ভিসা বাধ্যতামূলক। কিছু দেশ ফি থেকে অব্যাহতি পেলেও বাংলাদেশ তার মধ্যে নেই। ভিসার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিমাও বাধ্যতামূলক।
আরও পড়ুন: বিদেশে পড়তে যাওয়ার আগে ১৫টি করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন
টিউশন ফি
*ব্যাচেলর: €9,000–€13,000;
*মাস্টার্স: €10,000–€15,000;
আর্থিক প্রমাণ
২০২৫ সালের আপডেটে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সামর্থ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কঠোরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৮ মাস বা তার বেশি সময়ের কোর্সে প্রয়োজন €10,000, আর ৮ মাসের কম হলে মাসে €833 বা মোট €6,665 অভিভাবক বা নিজের ব্যাংক স্টেটমেন্টে গত ৬ মাসের আর্থিক লেনদেন দেখাতে হবে।
আরও পড়ুন: আইইএলটিএসের প্রস্তুতি শুরু করবেন যেভাবে
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
*বৈধ পাসপোর্ট (ন্যূনতম ১২ মাস মেয়াদ);
*দুই কপি ছবি;
*বিশ্ববিদ্যালয়ের Acceptance লেত্তের;
*SOP (Statement of Purpose);
*ব্যাংক স্টেটমেন্ট;
*স্বাস্থ্যবিমা;
*অ্যাকাডেমিক ও ইংরেজি ভাষাদক্ষতার সার্টিফিকেট;
*টিউশন ফি পরিশোধের রসিদ;
*স্টাডি গ্যাপ থাকলে ব্যাখ্যা;
*পূর্ববর্তী ভিসা রিফিউজ থাকলে তা উল্লেখ;
বি:দ্র সব নথি ইংরেজি বা আইরিশ ভাষায় জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুন: বিদেশে উচ্চশিক্ষা: রেফারেন্স লেটার কী
ইংরেজি দক্ষতা বাধ্যতামূলক
আয়ারল্যান্ডে MOI ভিত্তিক ভর্তি প্রায় অস্বীকৃত। IELTS/TOEFL/PTE/Duolingo—যেকোনো আন্তর্জাতিক মানের স্কোর লাগবে।
*ব্যাচেলর:
IELTS: 6.0–6.5
Duolingo: 105–110
*মাস্টার্স:
IELTS: 6.5–7.0
Duolingo: 110–120
আরও পড়ুন: বিদেশে উচ্চশিক্ষা: সাশ্রয়ী খরচ ও সহজে ভিসা সুবিধা প্রাপ্তিতে আদর্শ ৮ দেশ
পড়াশোনার সময় কাজের সুযোগ
স্টুডেন্ট ভিসা (Stamp 2) নিয়ে শিক্ষার্থীরা—সেমিস্টার চলাকালে ২০ ঘণ্টা/সপ্তাহ ছুটির সময় ৪০ ঘণ্টা/সপ্তাহ কাজ করতে পারবেন।
পড়াশোনা শেষে চাকরির
আয়ারল্যান্ডে কোর্স শেষ হলে শিক্ষার্থীরা Third Level Graduate Programme–এর অধীনে ১–২ বছরের Stamp 1G (গ্র্যাজুয়েট ভিসা) পেয়ে কাজের ভিসার পথে যেতে পারে।
আবেদন প্রক্রিয়া
প্রতি বছরের জানুয়ারি, মে–জুন ও সেপ্টেম্বর ইনটেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী গ্রহণ করে আয়ারল্যান্ড, যার মধ্যে সেপ্টেম্বর সবচেয়ে জনপ্রিয়। ভিসার আবেদন করতে হয় অনলাইনে AVATS স্বয়ংক্রিয় ভিসা আবেদন ও ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে।
১. পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে।
২. অনলাইনে ফর্ম পূরণ ও আবেদন ফি পরিশোধ।
৩. ট্র্যাকিং সিস্টেম জানিয়ে দেবে কোথায় নথি পাঠাতে হবে।
৪. নির্ধারিত ভিসা অফিস/দূতাবাসে নথি জমা দিলে শুরু হবে ভিসা প্রক্রিয়া।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভ্রমণের ৩ মাস আগে আবেদন করার নির্দেশনা রয়েছে।
অনলাইন আবেদন শেষে সারসংক্ষেপ ফর্ম প্রিন্ট করে স্বাক্ষরসহ প্রয়োজনীয় নথির সঙ্গে জমা দিতে হবে। ভিসা প্রক্রিয়ায় বায়োমেট্রিক তথ্য (ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট) দিতে হয়। তবে কোনো সাক্ষাৎকার নিতে হয় না।
স্টুডেন্ট ভিসা শিক্ষাক্রমের মেয়াদ পর্যন্ত বৈধ থাকে। কোর্সের মেয়াদ দীর্ঘ হলে প্রতি বছর ভিসা নবায়ন করতে হয়।
আরও পড়ুন: জেনে রাখুন বিশ্বসেরা ২৯ স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট
ভিসা প্রসেসিং সময়
সাধারণত ৪–৮ সপ্তাহ, তবে ইনটেক অনুযায়ী বাড়তে পারে।
আয়ারল্যান্ডের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ
*ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিন;
*ইউনিভার্সিটি কলেজ ডাবলিন;
*ডাবলিন সিটি ইউনিভার্সিটি;
*ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্ক;
*টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি ডাবলিন;
*ইউনিভার্সিটি অব লিমেরিক;
*আমেরিকান কলেজ ডাবলিন;
*মায়নুথ বিশ্ববিদ্যালয়;
*কুইন্স ইউনিভার্সিটি বেলফাস্ট;
*ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব আয়ারল্যান্ড, গালওয়ে;
আরও পড়ুন: বিদেশে উচ্চশিক্ষা: আবেদনপ্রক্রিয়া থেকে ফান্ডিং পাওয়া—সার্বিক বিষয়ে পরামর্শ
কেন আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো গন্তব্য?
*ইউরোপের অন্যতম নিরাপদ দেশ;
*ব্লক অ্যাকাউন্টের দরকার নেই;
*পড়াশোনা শেষে কাজের ভালো সুযোগ;
*ইংরেজি ভাষাভিত্তিক সমাজ ও পরিবেশ;
*ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া তুলনামূলক সহজ।