নতুন পে স্কেল এক বছরেও বাস্তবায়ন নিয়ে ‘শঙ্কা’

সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করতে কাজ করছে পে কমিশন
সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করতে কাজ করছে পে কমিশন © টিডিসি সম্পাদিত

সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করতে শেষ ধাপের কাজ করছেন পে কমিশনের সদস্যরা। এরইমধ্যে রবিবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নতুন পে কমিশন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আগামী সরকার। তার এ বক্তব্যের পর বিভিন্ন সমীকরণ মিলিয়ে আগামী এক বছরেও পে স্কেল দেওয়া সম্ভব কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

যদিও কমিশনের কার্যক্রম শুরুর পর অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা বলেছিলেন, আগামী বছরের শুরুতে এ সরকারই নতুন স্কেল কার্যকর করবে। এখন তার নতুন বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন সরকারি চাকরিজীবীদের অনেকে। তারা বলছেন, বর্তমান সরকারই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিক। ইতঃপূর্বে ১৫ ডিসেম্বরের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন কর্মচারীরা। এখন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে পে স্কেল কার্যকরের দাবিতে পদক্ষেপ নেবেন তারা।

সরকার শেষ পর্যন্ত পে স্কেল ঘোষণার দায়িত্ব পরবর্তী সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে, এমন শঙ্কা আগে থেকেই ছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ সরকারের বিভিন্ন ব্যয় এবং ঋণের সুদ যে পরিমাণে পরিশোধ করতে হয়, সে তুলনায় আয় করে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। 

এ অবস্থায় অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করা সম্ভব না। পরবর্তীতে যে সরকার আসবে, তাদের পক্ষেও অর্থনৈতিক কাঠামো ঠিক করে এমন বেতন বাড়ানো কঠিন হবে।

দেশ এখন নির্বাচনমুখী মন্তব্য করে এই অধ্যাপক বলেন, নির্বাচন নিয়েও একটা ব্যয় আছে। গণভোট আলাদা করে হলে সেখানে বড় ধরনের ব্যয় হবে। সবকিছু মিলে এই সরকার চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন প্রণয়ন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।

আরও পড়ুন: তিন দাবি নিয়ে আজ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা

সরকারের আর্থিক সক্ষমতা না থাকার কারণেই অন্তর্বর্তী সরকার নতুন পে স্কেল বাস্তবায়ন থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, ‘অষ্টম পে কমিশনের পর নবম পে কমিশন হতে ১১ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সরকার পে স্কেল দেয়নি। এরইমধ্যে দেশে মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। গত চার বছর আমরা উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে রয়েছি।’

‘সার্বিকভাবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি নতুন বেতন স্কেল চাওয়া যৌক্তিক। চাকরিজীবীদের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একটা জোর দাবি ছিল, আশা ছিল তারা সব ধরনের সমস্যা দূর করে অর্থনীতিকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে। কিন্তু এ সরকার তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তার উজ্জ্বল প্রমাণ, এই পে স্কেল বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত পরবর্তী সরকারের দিকে ঠেলে দেওয়া’, যোগ করেন ড. সাহাদাত হোসেন।

দেশের ঘাটতি বাজেট বাড়ছে মন্তব্য করে এ অধ্যাপক বলেন, নতুন অর্থবছরে সবকিছু ভেঙেচুরে অর্থনীতিকে উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাবে। সেই পরিকল্পনা থেকেই কমিশন গঠনের পর বলা হয়েছিল, এ সরকারই নতুন বেতন স্কেল দেবে। কিন্তু আর্থিক জোগান নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়ে অর্থ উপদেষ্টা নতুন এই ঘোষণা দিয়েছেন।’