মূল বেতনের ৭০% প্রণোদনা পাচ্ছেন বেসিক সাবজেক্টের শিক্ষকরা, প্রজ্ঞাপন জারি
- ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:৩৯
৫টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেসিক সাবজেক্টের শিক্ষকদের মূল বেতনের ৭০ শতাংশ হারে প্রণোদনার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ৮ বেসিক সাবজেক্ট ছাড়াও আরও দুটি বিষয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও এই প্রণোদনা কার্যকর হবে। আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের চিকিৎসা শিক্ষা-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন দুটিতে সিনিয়র সহকারী সচিব সঞ্জীব দাশ সই করেছেন।
এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) পাশাপাশি রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বিভাগের শিক্ষকরা মূল বেতনের ৭০ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন। বিভাগগুলো হল- অ্যানাটমি, ফিজিওলজি এবং ফার্মাকোলজি বিভাগ। এ ছাড়া ৩৭টি সরকারি মেডিকেল ও একটি ডেন্টাল কলেজ, সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশন (সিএমই) এবং ১৯টি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের ১০ বিভাগের শিক্ষকরা পাবেন এই প্রণোদনা। এর মধ্যে ৮টি বেসিক সাবজেক্ট হল-এনাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, ফার্মাকোলজি, ফরেনসিক মেডিসিন, কমিউনিটি মেডিসিন, প্যাথলজি ও মাইক্রোবায়োলজি। ভাইরোলজি ও এনেস্থেসিওলজি বিষয় বেসিক সাবজেক্ট না হলেও নন-প্র্যাকটিসিং হওয়ায় এ সুবিধার আওতায় আসবেন তারা।
বেসিক সাবজেক্টের চিকিৎসকদের প্র্যাকটিস বা স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষকতার বিকল্প কিছু করার সুযোগ না থাকায় এসব বিষয়ে অধ্যয়ন করতে চান না চিকিৎসকরা। এতে এসব বিষয়ে তীব্র শিক্ষক সংকটে ভুগছে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলো।
মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘চিকিৎসা শিক্ষায় বেসিক সাবজেক্টের শিক্ষক সংকট দূরীকরণের নিমিত্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ২৫ সেপ্টেম্বর স্মারকে মঞ্জুরকৃত বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৫টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ৩টি সাবজেক্টে পাঠদানরত শিক্ষকদের অনুকূলে নন-প্র্যাকটিসিং ভাতা হিসেবে মূল বেতনের ৭০ শতাংশ হারে শর্তসাপেক্ষে মাসিক প্রণোদনা ভাতা প্রদান করা হলো।’
আরও পড়ুন: মেডিকেল কলেজগুলোতে চাহিদার অর্ধেক শিক্ষকও নেই, শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন
অপর প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘চিকিৎসা শিক্ষায় বেসিক সাবজেক্টের শিক্ষক সংকট দূরীকরণের নিমিত্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ২৫ সেপ্টেম্বর একটি স্মারকে মঞ্জুরকৃত দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশন এবং ১৯টি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে ১০টি সাবজেক্টে পাঠদানরত শিক্ষকদের অনুকূলে নন-প্র্যাকটিসিং ভাতা হিসেবে মূল বেতনের ৭০ শতাংশ হারে শর্তসাপেক্ষে মাসিক প্রণোদনা ভাতা প্রদান করা হলো।’
চলতি বছরের শুরুতে নির্ধারিত হারের পরিবর্তে বেসিক বিষয়ের শিক্ষকদের বেতনের শতভাগ প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব দেয় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকেও এটি অনুমোদিত হয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে আটকে যায় এ উদ্যোগ।
তবে উভয় ক্ষেত্রে একই শর্ত রাখা হয়েছে। শর্ত হিসেবে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কর্মরত স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বেসিক সাবজেক্টের শিক্ষকদের মাসিক প্রণোদনা ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে তাদের নিকট থেকে দাপ্তরিকভাবে নন-প্র্যাকটিসিং ডিক্লারেশন নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সাবজেক্টের কোন শিক্ষক নন-প্র্যাকটিসিং ডিক্লারেশন দিতে ব্যর্থ হলে কিংবা প্র্যাকটিসিংয়ের সাথে জড়িত মর্মে প্রমাণ হলে তিনি প্রণোদনা ভাতা প্রাপ্তির জন্য বিবেচিত হবেন না।
চলতি ২০২৫-২০২৬ অর্থবছর হতে এই আর্থিক সুবিধা কার্যকর হবে উল্লেখ করে শর্ত হিসেবে আরও বলা হয়, এ ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে যাবতীয় আর্থিক বিধি-বিধান যথাযথভাবে অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে, ৯ম জাতীয় বেতন স্কেলে এই ভাতার হার অপরিবর্তনীয় থাকবে এবং ভাতা সংক্রান্ত ব্যয়ে ভবিষ্যতে কোন অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন।
আরও পড়ুন: অনুমোদনের অপেক্ষায় ১২০০ কোটি টাকার মাস্টারপ্ল্যান, বদলে যাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিত্র
উল্লেখ্য, মেডিকেল কলেজের বেসিক ৮টি সাবজেক্টের শিক্ষক সংকট মোকাবিলায় গ্রেড অনুযায়ী নির্ধারিত হারে ২০১৯ সাল থেকে প্রণোদনা দিয়ে আসছে সরকার। এই ৮ বিষয়ের চিকিৎসকদের প্র্যাকটিস বা স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষকতার বিকল্প কিছু করার সুযোগ না থাকায় এসব বিষয়ে অধ্যয়ন করতে চান না চিকিৎসকরা। এতে এ ৮ বিষয়ে তীব্র শিক্ষক সংকটে ভুগছে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলো। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশের ৩৭টি মেডিকেল কলেজে কিউরেটর ও লেকচারারসহ বেসিক সাবজেক্টের ২ হাজার ১৫৫টি পদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন ১ হাজার ৬২৪ জন। পদ শূন্য আছে ৫৩১টি, যা মোট পদের প্রায় ২৫ শতাংশ।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বেসিক সাবজেক্টের এই শিক্ষক সংকট নিরসনে ২০১৯ সাল থেকে গ্রেডভিত্তিক নির্ধারিত হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, ফরেনসিক মেডিসিন, কমিউনিটি মেডিসিন, ফার্মাকোলজি, মাইক্রোবায়োলজি ও প্যাথলজি বিষয়ের শিক্ষকরা এ ভাতা পেয়ে আসছেন। গ্রেডভিত্তিক এ প্রণোদনা পদ্ধতি অনুযায়ী, নবম গ্রেডে কর্মরত শিক্ষকরা ১০ হাজার, অষ্টম গ্রেডে ১১ হাজার, সপ্তম গ্রেডে ১৩ হাজার, ষষ্ঠ গ্রেডে ১৫ হাজার, পঞ্চম গ্রেডে ১৬ হাজার, চতুর্থ গ্রেডে ১৮ হাজার এবং তৃতীয় গ্রেডের শিক্ষকরা ২০ হাজার টাকা প্রণোদনা পান। পরবর্তীতে অ্যানেস্থেসিওলজি ও ভাইরোলজি বিষয়ের শিক্ষকরাও এ প্রণোদনার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে নির্ধারিত হারের পরিবর্তে বেসিক বিষয়ের শিক্ষকদের বেতনের শতভাগ প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব দেয় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকেও এটি অনুমোদিত হয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে আটকে যায় এ উদ্যোগ। গত জুলাই মাসে ৫০ শতাংশ হারে প্রণোদনার অনুমতি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই সময় অর্থ বিভাগ জানায়, বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এত বড় হারে প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব নয়। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ৭০ শতাংশ প্রণোদনা অনুমোদন হয়েছে।