১৫ বছর ধরে ডিলারশিপ ও চাকরির নামে প্রতারণা, মূল হোতা গ্রেপ্তার

মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন
মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন © সংগৃহীত

ডিলারশিপ ও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী চক্রের মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। গ্রেপ্তার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন (৫২) কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার রামনগর গ্রামের রফিকুল ইসলাম ছেলে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কর্মী ও ডিলারশিপ নিয়োগের জন্য ভুক্তভোগীদের নাম ও ছবিসংবলিত আবেদনপত্র, কর্মী নিয়োগের ছবিসহ জীবনবৃত্তান্ত, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির বিভিন্ন পরিচয়সংবলিত ভিজিটিং কার্ড, পণ্যের ভুয়া মূল্য তালিকা, কোম্পানির পণ্যের নমুনা এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার জব্দ করা হয়। আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এসব তথ্য জানায়।

আরও পড়ুন: আবেদনেরই অযোগ্য, তথ্য গোপন করে ইবির প্রভাষক হচ্ছেন জাবি কর্মকর্তা হাফিজুর

তিনি আরো বলেন, জাহাঙ্গীর বিভিন্ন ভুয়া কনজুমারস ফুড প্রোডাক্টস কোম্পানির নামে ডিলারশিপ দেওয়া ও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন। প্রতারণার কৌশল হিসেবে তিনি প্রথমে বিভিন্ন জায়গায় সুন্দর পরিপাটি অফিস ভাড়া নেন এবং সেখানে বিভিন্ন কনজুমারস প্রোডাক্টস মজুদ করতেন। প্রথমে জাহাঙ্গীর স্থানীয় খোলা বাজার থেকে ভালো গুণসম্পন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য যেমন- চিনি, ডাল ইত্যাদি কিনতেন এবং সেগুলো ভুয়া নামীয় মোড়কে প্যাকেটজাত করে বাজার দর থেকে তুলনামূলক কম দামে পাইকারি ক্রেতাদের কাছে বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেন। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও লিফলেট বিতরণ ও অন্যান্য মিডিয়াতে ডিলারশিপের বিজ্ঞাপন প্রচার করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতেন। আকৃষ্ট ক্রেতারা ডিলারশিপ নেওয়ার আগ্রহ জানালে প্রথমে তিনি বাজার দর থেকে কম মূল্যে পণ্য সরবরাহ করতেন। এভাবে কিছুদিন মালামাল সরবরাহ করে বিশ্বাস অর্জন করার পরে আরও বড় ও সাশ্রয়ী অফার দিয়ে ডিলারদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা সংগ্রহ করে পণ্য না দিয়েই সেই অফিস বন্ধ করে দিতেন।

আরও পড়ুন: ক্লাস শুরুর দাবিতে অনশনে প্রস্তাবিত সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা

১৫টিরও বেশি ভুয়া অফিস : সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে, অর্ধ যুগেরও বেশি সময় ধরে পরিচালিত এই প্রতারণার কাজে জাহাঙ্গীর বিভিন্ন স্থানে ১৫টিরও বেশি ভুয়া অফিস খুলে সময় সময় সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করেন। কম দামে পণ্য দেওয়াই তার প্রতারণার মূল হাতিয়ার। সর্বশেষ ডিএমপির মোহাম্মদপুর এলাকার রেসিডেন্সিয়াল কলেজের পাশে অবস্থিত একটি বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় ‘তালুকদার এন্টারপ্রাইজ, নামে অফিস খুলে প্রতারণা করে। সেখানে সিআইডির ঢাকা মেট্রো পূর্ব বিভাগ কর্তৃক হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। 

২৬ মামলার আসামি
সিআইডি জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি মতিঝিল থানা ছাড়াও আরও ২৫টি মামলার তথ্য পাওয়া যায়। সবগুলো মামলা প্রায় একই রকম প্রতারণা কেন্দ্রিক। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় রুজু হওয়া এসব মামলায় অসংখ্য ভুক্তভোগী রয়েছে। 

চাকরির নামেও প্রতারণা
শুধু ডিলারশিপ নয়, চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েও প্রতারণার ঘটনা ঘটিয়েছে চক্রটি। অফিসের বিভিন্ন পদে লোভনীয় বেতনে চাকরি দেওয়ার নাম করে জীবন বৃত্তান্ত ও অন্যান্য তথ্যের পাশাপাশি চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নিতো। পরবর্তীতে বেতন দেওয়ার আগেই রাতের আঁধারে অফিস বন্ধ করে গা ঢাকা দেয়।

কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ
গ্রেপ্তার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন গত অর্ধ যুগেরও বেশি সময়ে অন্তত ৩০০ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এ রকম প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। 

আরও পড়ুন: লটারির মাধ্যমেই স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি

গ্রেপ্তারের সময় জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কর্মী ও ডিলারশিপ নিয়োগের জন্য ভিকটিমদের নাম ও ছবি সম্বলিত আবেদনপত্র, কর্মী নিয়োগের ছবিসহ জীবনবৃত্তান্ত, গ্রেপ্তার ব্যক্তির বিভিন্ন পরিচয় সম্বলিত ভিজিটিং কার্ড, পণ্যের ভুয়া মূল্য তালিকা, কোম্পানির পণ্যের নমুনা এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার জব্দ করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর বিগত অর্ধযুগেরও বেশি সময়ে অন্তত ৩০০ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এমন প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।