শিপিং সেক্টরে অভাবনীয় সাফল্য মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের

চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরত পোর্ট অ্যান্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ‘তারিফ’
চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরত পোর্ট অ্যান্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ‘তারিফ’ © টিডিসি

উচ্চশিক্ষার প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখেন অনেকেই। তবে সেই স্বপ্নের পথে পা বাড়ানোর আগে আমাদের মনে আসে একটাই প্রশ্ন—চাকরির বাজার কেমন হবে? কিন্তু দেশের সামুদ্রিক অর্থনীতি বা ব্লু ইকোনমিকে এগিয়ে নিতে কাজ করা বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির পোর্ট অ্যান্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই ক্ষেত্রে এক দারুণ উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়টির পোর্ট অ্যান্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে প্রথম থেকে তৃতীয় ব্যাচ বের হওয়া শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই শিপিং সেক্টরে সফলতার সঙ্গে কাজ করছে। যাদের প্রায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী কাজ করছেন বিভিন্ন দেশীয় ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে। 

আমাদের দেশে প্রচলিত ধারণা হলো, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়াটাই সাফল্যের একমাত্র মাপকাঠি। কিন্তু মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করেছেন, পেশাগত জীবনের সাফল্য শুধু কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বন্দর ও লজিস্টিকস খাতের জন্য দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে চালু হওয়া এই বিভাগটি বর্তমানে দেশের শিপিং সেক্টরকে নতুন করে ভাবাচ্ছে। স্নাতক শেষ করার আগেই শিক্ষার্থীরা যুক্ত হচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।

এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে বহুজাতিক শিপিং কোম্পানি এপি মোলার-মার্স্ক থেকে শুরু করে ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং কোম্পানি ডিএইচএল, কুয়েন + নাগেল, কেরি লজিস্টিকস, ইউসেন লজিস্টিকস, ডিএসভিসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রতিষ্ঠান সফলতার সঙ্গে কাজ করছে। পোর্ট, শিপিং, লজিস্টিকস এসব বিষয়ে বিশেষায়িত জ্ঞান থাকে চাকরির বাজারে শুরু থেকেই এগিয়ে আছে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। দেশের অর্থনীতিতে শিপিং ও লজিস্টিকস খাতের গুরুত্ব অনেক বেশি এবং এই খাতকে এগিয়ে নিতে মেরিটাইমের গ্র্যাজুয়েটরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দেশের ব্লু ইকোনমিকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সেই উদ্দেশ্যকে বাস্তব রূপ দিতে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পোর্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড লজিস্টিকস বিষয়ে বছরে মাত্র ৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান, শুধু মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়েই এই বিষয়টি পড়ানো হয়। ফলে এ খাতে দক্ষ জনবলের চাহিদা সব সময়ই বেশি।

আরও পড়ুন: সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্থক্য— যেভাবে পরিচালিত হয় এসব প্রতিষ্ঠান

এই বিষয়ে স্নাতক শেষ করে শিক্ষার্থীরা পোর্ট ও টার্মিনাল, শিপিং, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং, শিপ ম্যানেজমেন্ট, ওয়্যারহাউস, শিক্ষকতা এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পান। সবচেয়ে বড় কথা হলো, শিপিং একটি বিশ্বব্যাপী শিল্প হওয়ায় দেশের বাইরেও কাজের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণেও তারা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন।

ইতোমধ্যে লজিস্টিকস বা শিপিংভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে পোর্টভিত্তিক সেক্টরেও কাজ করা শুরু করেছে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে রেড সি গেটওয়েতে কাজ করছেন প্রথম ম্যাচের শিক্ষার্থী। আগামী দিনে বিদেশি টার্মিনাল অপারেটর প্রতিষ্ঠানসহ, বন্দরে কাজ করার দ্বার উন্মুক্ত হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট সবাই। 

প্রথম ব্যাচের সফলতার পর দ্বিতীয় ব্যাচের ধারাবাহিকতায় তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই চাকরি পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, যা প্রমাণ করে এই সেক্টরে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদা কতটা। 

বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির পোর্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড লজিস্টিকস বিভাগটি কেবল একটি নতুন শিক্ষাক্ষেত্র নয়, বরং এটি একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দ্বার উন্মোচন করেছে। যারা চিরাচরিত পথের বাইরে গিয়ে নতুন কিছু করতে চান এবং নিজেদের জন্য একটি নিশ্চিত পেশা গড়তে চান, তাদের জন্য মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির এই বিভাগটি এক অসাধারণ সুযোগ নিয়ে এসেছে।

সম্প্রতি এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে www.bmu.edu.bd তে প্রকাশ করা হবে।