ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হলেও কখনো গেস্টরুম করাইনি: হাসান আল মামুন

হাসান আল মামুন
হাসান আল মামুন © সংগৃহীত

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেছেন, আমি হলে (ঢাবির মুহসীন হল) কোনোদিন গেস্টরুম করাইনি। কোনোদিন কোনো শিক্ষার্থী নির্যাতন করিনি বরং এই পদ (সহ-সভাপতি) ব্যবহার করে অনেক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করেছি। হলের সবাই আমাকে ক্যাপ্টেন বলেই ডাকতো, সহ-সভাপতি হিসেবে না।

বুধবার (৮ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে গত মঙ্গলবার পলাশী মোড়ে আবরার ফাহাদ স্মরণে স্থাপিত আগ্রাসন বিরোধী আট স্তম্ভ উদ্ভোধন অনুষ্ঠানে বলেন, ছাত্রলীগের সাথে শিবিরের সাদিক-ফরহাদ মিছিল করেছে। 

এরপর এ সংক্রান্ত্র প্রকাশিত এক সংবাদ শেয়ার করে ফেসবুকে তিনি বলেন, আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে আমরা যখন রাজপথে আন্দোলন করি, তখন অনেকেই লীগের সাথে আবরার ফাহাদের বিরোধিতা করে আন্দোলন করে। এরই মধ্যে তার নিজেরই ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। তিনি ফেসবুকে বিষয়টি নিজেই স্পষ্ট করেছেন। 

দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য হাসান আল মামুনের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হল : 
প্রথমত আপনাদের পোস্টের জন্য ধন্যবাদ এবং যৌক্তিক সমালোচনাকে আমি স্বাগত জানাই। আমি মুহসিন হলে উঠি ২য় বর্ষে। প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভলিবল টিমের একজন সদস্য হিসেবে জায়গা পাই ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ভলিবল খেলতে যাই। একই বছর হলের টিমের হয়ে আন্তঃহল ভলিবল খেলি। হলের রাজনৈতিক নেতারা তখন আমাকে হলে উঠতে বলে। আমার নেত্রকোণা হওয়ার পরেও আমি উঠি বরিশাল গ্রুপে কারণ আমি হলের এসব গ্রুপিং রাজনীতি সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। এরমধ্যে ভালো ভলিবল খেলে মুহসিন হলকে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ান করি। তখন লীগের নেতারা এবং শিক্ষকরা মিলে আমার একটা সিটের ব্যবস্থা করে খেলোয়াড় কোটায়।

পরবর্তী সময়ে আমি তৃতীয় বর্ষে আমার ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ফুটবল টিমের অধিনায়ক হই এবং চতুর্থ ও মাস্টার্সে পড়াকালীন সময়ে আমি আমার নেতৃত্বে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ টানা দুবার আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ান হয়। এছাড়াও আমি মুহসিন হলের ফুটবল ও ভলিবল টিমের অধিনায়ক ছিলাম। সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভলিবল টিমের অধিনায়ক হয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ভলিবল টুর্নামেন্ট খেলতে যাই। সেখানে পুরো টিমের উপর হামলা করে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন এটি ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রতিবাদ হয়। আমি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের দুবার চ্যাম্পিয়ান টিমের অধিনায়ক হওয়ায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভলিবল টিমের অধিনায়ক হওয়ায় মোটামুটি সবাই চিনতো আমাকে।

আরও পড়ুন: শুধু এসি লাগানো নয়, ডাকসু ভবনের পরিত্যক্ত ছাদটাও সাজাবো: সর্বমিত্র চাকমা

এবার আসি কীভাবে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হলাম
তখন বরিশাল গ্রুপ এবং উত্তরবঙ্গ গ্রুপ একসাথে হলে রাজনীতি করে আর আমি তখন চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

বলে রাখা ভালো আমি দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো সময়টা কাটিয়েছি খেলাধুলায়।

তখন আমার হলে, আমাদের বন্ধু সার্কেল থেকে মেহেদী হাসান সানী সাধারণ সম্পাদক হয় মুহসিন হলের। সানী আমার ইয়ারমেট বন্ধু হওয়ায় আমাদের ইয়ার থেকে আমরা বেশ কয়েকজন পদ পাই। আমি হলে কোনোদিন গেস্টরুম করাইনি। কোনোদিন কোনো শিক্ষার্থী নির্যাতন করিনি বরং এই পদ ব্যবহার করে অনেক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করেছি। হলের সবাই আমাকে ক্যাপ্টেন বলেই ডাকতো সহ-সভাপতি হিসেবে না।

পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে সাধারণ কোনো শিক্ষার্থী এমনকি কোটা আন্দোলনে শীর্ষ কোনো নেতা সেই আন্দোলনের আহ্বায়ক বা আন্দোলনের প্রধান নেতা হতে অস্বীকৃতি জানায়। আমি তখন স্বেচ্ছায় আহ্বায়ক হই এবং বলি ছাত্রলীগের পদ কোনো বিষয় না, অধিকার আদায়ের এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিবো আমি। দেশকে কোটা মুক্ত করবো যেভাবেই হোক। তখনকার সময় এই সহ- সভাপতি পদের কারণে পুরো আন্দোলন (শিবিরের আন্দোলন) এই ট্যাগ থেকে রক্ষা পায়। এই সহ- সভাপতি পদতা থাকার কারণে এটি শিবিরের আন্দোলন, এই ট্যাগটিতে লীগ তখন ফেইল করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানতো তখন কতটা কঠিন ছিলো আমাদের পথ। কারণ এটা সবাই জানতো হলে থেকে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গেলে হাত পা ভেঙে হল থেকে বের করে দিবে ছাত্রলীগ।

২০১৪ সালে ৩৪তম বিসিএসের রেজাল্ট বাতিলের জন্য এবং কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হলে কুত্তার মতো পিটায় ছাত্রলীগ। কোটা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে হল থেকে আমার বিছানা চাদর, বই সবকিছু বাহিরে ফেলে দেয়। আমি আমার বিছানা পত্র এবং আমার বই কিছুই আনতে পারিনি। এই আন্দোলন সফল করতে গিয়ে ২২/২৩ বার হামলার শিকার হয়েছি। আমার বুকের একটা পাঁজর এখনো ভাঙা। এমনকি মিথ্যা বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলার আসামিও হয়েছিলাম, ১২টা মামলার আসামি ছিলাম। 

১১ মাস জেল কেটেছি। আমার কারণে আমার মামা এবং মামাতো ভাইকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। জেল থেকে বের হয়ে আমার গ্রামের বাড়িতে গেলে আমার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে লীগ। জেল গেটে হামলা করে লীগ। যে শিবিরের ভাইদের মুক্তির পথ খুলে দেওয়ার চেষ্টা করলাম সেই শিবিরের ভাইরা এখন আমাকে ধর্ষক বলে। এগুলো দেখে আমি তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলি। লীগের পোলাপানও এই অপবাদ দেওয়ার সাহস দেখাতো না কিন্তু শিবিরের ভাইরা এটি প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছেন। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। 

আরও পড়ুন: ৮ স্তম্ভের নেপথ্যে দুই অরাজনৈতিক ব্যক্তি, নাম জানালেন ফাইয়াজ

আমার বিরুদ্ধে যে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা হয়েছিল এগুলো নিয়ে দুই লাইন লিখি। একজন মেয়ে বা মামলার বাদী, ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আমাকে প্রধান আসামি করে একটি বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা করে। ঠিক এর পরের দিন ২১ সেপ্টেম্বর একই মেয়ে নাজমুল হাসান সোহাগ নামের আরেকজনকে প্রধান আসামি করে আরেকটি ধর্ষণ মামলা করে।

বাদীর অভিযোগ, মেয়ের সাথে আমার ফেইসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে পরিচয় হয় এবং প্রেম হয় কিন্তু সাইবার মামলার ফরেনসিক তদন্ত থেকে উঠে আসে বাদীর সাথে ফেইসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি। বাদীও এগুলোর তথ্য দিতে পারেনি। তখন মামলাটি থেকে আমাকে খালাস দেওয়া হয়।

এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো, বাদী আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনার সময় উল্লেখ করে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখ আর মামলা করেন সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখ। ঘটনার ৯ মাস পর। 

বাদী নাজমুল হাসান সোহাগের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করে, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ এবং ধর্ষণের সময় উল্লেখ করা হয় ফেব্রুয়ারি ২০২০, মানে জোরপূর্বক ধর্ষণের ৮ মাস পর। এই বাদী মোট ৪ টি মামলা করে এবং আসামি করে ৬ জনকে যাঁরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। আপাতত এই মামলা গুলো খারিজ হয়েছে। একটা মামলা উচ্চ আদালত কর্তৃক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এই মামলা কারা কত টাকার বিনিময়ে করিয়েছে এটি একদিন আমি বের করবো। সেদিনও আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলবো।

এবার আসি, সাদেক কায়েম ও ফরহাদকে নিয়ে আমি এই কথা কেনো বলেছি। 
কারণ এরা তখন তৃতীয় ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ১৮ সালের পর অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী লীগের বিরুদ্ধে আস্তে আস্তে লিখতে থাকে এমনকি প্রতিবাদও করে। ২০১৯ সালে আবরার হত্যার পর সবচেয়ে বেশি প্রতিবাদ হয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শত শত সাধারণ শিক্ষার্থী সেদিন নেমে আসে, প্রতিবাদ করে। যেহেতু শিবির ব্লেইম দিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সুতরাং এঁরা তো তখন শিবিরের পদে আছে তাহলে সাদেক কায়েম কিংবা ফরহাদ কেনো তখন আমাদের সাথে অন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে মিছিলে আসেনি সেই প্রশ্ন আমি অবশ্যই করবো। আর সেজন্যই আমি এই কথা বলেছি যে তাঁরা তখন, আমাদের সাথে মিছিলে আসেনি তাহলে কি সাদ্দামের নেতৃত্বে মিছিলে ছিলো!

এই কমেন্টে অনেকেই আজেবাজে, গালাগাল করে রিপ্লাই দেবেন তাদের আমি অগ্রিম সাধুবাদ জানাই। ধন্যবাদ।

কোথাও ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন, তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে অনুরোধ করবো কারো উপর মিথ্যা অপবাদ দিবেন না প্লিজ।