সন্ধ্যা নামলেই মাহতাব টাওয়ারে বসে মাদকের আসর
- ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:১৬
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) প্রধান ফটক থেকে মাত্র ২ মিনিটের পথ মাহতাব টাওয়ার ছাত্রাবাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে থাকার জন্য অনেক শিক্ষার্থীরই পছন্দের জায়গা এটি। সে কারণে কেউ কেউ একে ছাত্রদের তৃতীয় আবাসিক হল বলেও অবিহিত করেন। কিন্তু এই ছাত্রাবাসের আছে একটি অন্ধকার দিক। সন্ধ্যা নামলেই এখানকার রুমগুলো থেকে আসে মাদকের গন্ধ। কেউ গাঁজা নিয়ে বসেন, কেউবা অন্য কিছু। মাহতাব টাওয়ারে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এমনটাই।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছাত্রাবাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একেবারে নাকের ডগায় হলেও এ নিয়ে প্রশাসনের কোনো তদারকি নেই। যে কারণে মাদকসেবী শিক্ষার্থীরা এই ছাত্রাবাসকে নিজেদের আস্তানা হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রাবাসটির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের রুমে বসেই গাঁজা সেবন করছেন। তাদের বেশির ভাগই রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী। স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের মাদক সরবরাহ করে থাকে। অভিযোগ আছে, এই মাদক ব্যবসায়ীরা গত বছরের ৫ আগস্টের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও মাদক সরবরাহ করতে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর হলের অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যাওয়াতে আগের মতো ঢালাওভাবে হলে মাদক সরবরাহ করতে পারে না। যার কারণে এদের প্রধান টার্গেট এখন মাহতাব টাওয়ার। এখানে আগে থেকেই মাদক সরবরাহ হতো। কিন্তু ৫ আগস্টের পর এ সরবরাহ বেড়েছে। কারণ শিক্ষার্থীদের যারা আগে হলে মাদক সেবন করতেন, তাদের মাদক সেবনের নিরাপদ জায়গা এখন মাহতাব টাওয়ার। ক্রেতার সংখ্যা বাড়াতে স্থানীয় মাদক ব্যববসায়ীরা এখানে তাদের মাদক সরবরাহ বাড়িয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মাহাতাব টাওয়ারে প্রায় প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর কিছু ছেলে গাঁজার আসর বসায়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বা মাহাতাব টাওয়ার কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে প্রশাসনের এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো দরকার। কারণ নেশাদ্রব্য সেবনকারীর দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা থেকে দিন দিন সরে যাচ্ছে। যেহেতু মাহাতাব এ সবাই আমাদের ভার্সিটির শিক্ষার্থী, সেহেতু সেখানে শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও প্রশাসনের দায়িত্ব।’
আরও পড়ুন: প্রকৌশল গুচ্ছে এবারও থাকছে না রুয়েট, ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের এই মেসে কয়েকজন আছে, যারা নেশা করে। মেসমালিকের কোনো নির্দেশনা নেই। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও কোনো নজরদারি চালানো হয় না। এ জন্য তারা কোনো ভয় ছাড়াই মাদক সেবন করছেন।’
মাহতাব টাওয়ার ছাত্রাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার জাকির হোসেনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, যদি কেউ এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করে, তাহলে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কামরুজ্জামান খান ছুটিতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. তানভীর হায়দার বলেন, ‘আমাদের অনেক শিক্ষার্থীই বিভিন্ন ছাত্রাবাসে থাকে। ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় আমরা সেভাবে তদারকি করতে পারি না ছাত্রাবাসগুলোয়। তবে বিষয়টি আমরা জানলাম। যখন প্রক্টর স্যার ছুটি শেষে এলে আমরা আরও তথ্য সংগ্রহ করব। আমরা প্রশাসন থেকে চেষ্টা করব মাহতাব টাওয়ারে মাঝেমধ্যে গিয়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেওয়ার।’
ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রাশেদুল হক বলেন, ‘ছাত্রাবাসগুলো ক্যাম্পাসের বাইরে ব্যক্তিমালিকানায় থাকায় আমরা সরাসরি তদারকি করতে পারি না। পর্যাপ্ত তথ্য না থাকলে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। তথ্য আদায়ের পর জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের কাছে মাদক পৌঁছানো বন্ধ হয়।’