পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

পূজার ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লক্ষ টাকার টাইলস নিয়ে গেলেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী

পবিপ্রবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মো. ইউনুছ শরীফ
পবিপ্রবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মো. ইউনুছ শরীফ © সংগৃহীত

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মো. ইউনুছ শরীফের বিরুদ্ধে এবার লক্ষাধিক টাকা মূল্যের টাইলস আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটির সুযোগে এসব টাইলস সরিয়ে নেন তিনি। গত শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তার সহযোগিতায় টাইলসগুলো বের করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান এই প্রকৌশলী।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ চলাকালে একাধিক কোম্পানির পাঠানো ৫২০টি স্যাম্পল টাইলস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের সামনে রাখা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য কিংবা প্রশাসনকে না জানিয়ে টাইলস কোম্পানিকে এসব মালামাল নিয়ে যেতে উপযাজক হয়ে ‘অনুমতি’ দেন তিনি। শুক্রবার বেলা আড়াইটায় টাইলস সরিয়ে ফেলা হয়। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সিসি ক্যামেরায় টাইলস সরিয়ে ফেলার দৃশ্য ধরা পড়ে। এ সংক্রান্ত বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ ও ছবি ইতোমধ্যে প্রতিবেদকের হাতে পৌঁছেছে। অভিযোগ ওঠার পরও টাইলসগুলো কর্তৃপক্ষকে ফেরত দেওয়া হয়নি।

টাইলস আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবুল বাশার খান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘উপাচার্য মহোদয় কিংবা কর্তৃপক্ষের অজ্ঞাতসারে টাইলস নেওয়া হয়েছিল। আমাকে টাইলস উদ্ধারের জন্য উপাচার্য মহোদয় নির্দেশ প্রদান করেন। আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। টাইলসের সংখ্যা ও গন্তব্য সম্পর্কে তাদের বক্তব্যে গরমিল পাই। অদ্যাবধি টাইলস কর্তৃপক্ষকে ফেরত কিংবা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।’

89
এর আগেও অর্থ আত্মসাতের মামলায় কারাভোগ করেন ইউনুছ শরীফ

তবে এবারই প্রথম নয়, অভিযুক্ত কর্মকর্তা ইউনুছ শরীফের বিরুদ্ধে এর আগেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। জানা গেছে, বিধিবহির্ভূতভাবে ঠিকাদারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ টি কার্যাদেশ প্রদান করার অভিযোগে ২০১৯ সালে ইউনুছ শরীফের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ৫৩ লাখ ৫০ হাজার ৩৯০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, তিনি নয়টি প্রকল্পের দরপত্র নিয়ে জালিয়াতি, প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ২১ জুন থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুনের মধ্যে এ টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন। ওই মামলায় দেড় মাসের মতো কারাগারে ছিলেন ইউনুছ শরীফ। এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মসাৎকৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত দিয়ে মুক্তি পান তিনি।

আরও পড়ুন: ৫৩ লাখ টাকা আত্মসাতের পরও ‘চার-ছয় পিটিয়ে’ স্বপদে বহাল পবিপ্রবি কর্মকর্তা

ফলে নতুন করে লক্ষাধিক টাকার এই টাইলস আত্মসাত নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বারবার এমন কর্মকাণ্ডের পরও প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্কের খাতিরে স্বপদে বহাল আছেন তিনি। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) পদবীর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ দিয়ে আসছেন বলেও অভিযোগ আছে ইউনুছ শরীফের বিরুদ্ধে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৫১ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর প্রকল্প পরিচালক হিসেবে আছেন ইঞ্জিনিয়ার মো. ওবায়দুল হক। অভিযোগ আছে, ওবায়দুল হককে পদ থেকে সরে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে ইউনুছ শরীফ হুমকি দিয়ে আসছেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক ওবায়দুল হক বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ইউনুছ শরীফ আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। এমনকি সে নিজেও আমাকে পদ থেকে সরে যাওয়ার জন্য গালমন্দ করেছে। স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে সে আমাকে ভয়ভীতি দেখায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আমি এ বিষয়ে বারবার অভিযোগ দিয়েছি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মো. ইউনুছ শরীফ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিভিন্ন কোম্পানির প্রায় ৫০০ স্যাম্পল টাইপস আমাদের করিডরে ছিল প্রায় দেড় দুই বছর যাবত। এতে নোংরা হয়ে ছিল জায়গাটা। এসব টাইলসের কাজ না থাকায় আমি বলেছি যে স্যাম্পলগুলো যেন কোম্পানি নিয়ে যায়। কোম্পানি চাওয়ায় আমি একটা গেট পাস দিয়েছি। আমি ওই কাগজে লিখেছি যে এই কোম্পানির স্যাম্পল টাইলস ফেরত নেওয়ার জন্য অনুমতি দেওয়া হলো, এড্রেস করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি অফিসারকে। এটুকু বিষয়, এখানে আমার কি অপরাধ আমি আসলে বুঝতে পারছি না।

তিনি বলেন, ডিপার্টমেন্টাল হেড হিসেবে আমি সিকিউরিটি অফিসারকে এড্রেস করেছি। সিকিউরিটি অফিসার যদি প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেস করতে পারতেন। আমি শুধু আমার যতটুকু অথরিটি আছে, ততটুকু অনুমতি দিয়েছি। আমি নির্দেশও করিনি, অনুরোধও করিনি, শুধু অনুমতি দিয়েছি।

87 (1)
ইউনুছ শরীফ স্বাক্ষরিত গেটপাস

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নিয়ে আমার সাথে কারো কোন যোগাযোগ হয়নি। আমি কেবল আমার তরফ থেকে অনুমতি দিয়েছি। পরে ঢাকায় চলে এসেছি। আর আত্মসাতের অভিযোগ উঠছে, কিন্তু স্যাম্পল টাইলস তো বিশ্ববিদ্যালয় বা আমাদের কারোর ব্যবহার করার কোনো কায়দা নাই। একেকটা একেক ডিজাইনের। এটা কে ব্যবহার করতে যাবে? খুব বেশি হলে এতিমখানায়, মসজিদে কিংবা আল্লাহর রাস্তায় দিয়ে দিতে পারে।

প্রকল্প পরিচালককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। বলেন, আমি তাকে কষ্ট দেওয়ার কোনো দরকারও নাই, সুযোগও নাই। তিনি একজন সিনিয়র মানুষ। তার সাথে তো আমার কোন শত্রুতা নাই। তিনি আমার সিনিয়র ভাই, আমি তাকে স্যার সম্বোধন করি। তারপরও কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় ছোটখাটো জিনিস নিয়ে কথা হতে পারে। 

অপরদিকে পূর্বের মামলা প্রমাণিত হয়নি বলেও দাবি করেছেন ইঞ্জিনিয়ার ইউনুছ শরীফ। মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি।