শহরের চেয়ে গ্রামের শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে আগ্রহ বেশি

  • স্কুল ব্যাংকিংয়ে প্রায় ৪৬ লাখ শিক্ষার্থীর সঞ্চয় ২২৩৩ কোটি টাকা
  • বেশি অ্যাকাউন্ট ডাচ বাংলা ব্যাংকে, ১০ লাখ ৫২ হাজার ১১৫টি

দেশে স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে শিক্ষার্থীদের সঞ্চয় বাড়ছে
দেশে স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে শিক্ষার্থীদের সঞ্চয় বাড়ছে © সংগৃহীত

শহরের চেয়ে গ্রামের শিক্ষার্থীরা টাকা সঞ্চয়ে বেশি আগ্রহী। দেশের স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। স্কুলজীবন থেকেই সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে এবং পরবর্তী সময়ে আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিতে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু হয় ২০১০ সালে। এ কার্যক্রম চালুর ১৫ বছরে স্কুল ব্যাংকিং সেবার আওতায় এসেছে প্রায় ৪৬ লাখ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৫৩.৫২ শতাংশ গ্রামের এবং ৪৬.৪৮ শতাংশ ছাত্রছাত্রী শহরাঞ্চলের।

সঞ্চয়ের পাশাপাশি আর্থিক ব্যবস্থাপনায় নিজেদের আরও উপযোগী করতে স্কুল ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ৪৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫৪৫টি স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এসব অ্যাকাউন্টে সঞ্চয় রয়েছে ২ হাজার ২৩৩ কোটির বেশি টাকা।

বেশি স্কুল ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট রয়েছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় (৬৯.৫৬ শতাংশ), তালিকায় এরপরে রয়েছে যথাক্রমে রাষ্ট্রয়াত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক (২৬.০৪ শতাংশ) এবং বিশেষায়িত ব্যাংক (৪.৩৪ শতাংশ)। এছাড়া সঞ্চয়ের ক্ষেত্রেও এগিয়ে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। মোট সঞ্চয়ের ৭৭.৪০ শতাংশই এসব ব্যাংকে জমা হয়েছে।

দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৯টি ব্যাংকই স্কুল ব্যাংকিং সেবা দিয়ে থাকে। এসব ব্যাংকে থাকা স্কুল ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে ছেলেদের থেকে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে মেয়েরা। এক্ষেত্রে ছেলেদের অ্যাকাউন্ট ৫১.০২ শতাংশ, যাদের জমাকৃত অর্থ মোট সঞ্চয়ের ৫২.৪৫ শতাংশ। মেয়েদের অ্যাকাউন্ট ৪৮.৯৮ শতাংশ ও জমাকৃত অর্থ মোট সঞ্চয়ের ৪৭.৫৫ শতাংশ।

দেশের স্কুল অ্যাকাউন্টধারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। এরপরে যথাক্রমে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর এবং সবশেষে ময়মনসিংহের অবস্থান। সবচেয়ে বেশি স্কুল ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট রয়েছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয়, ৬৯.৫৬ শতাংশ। তালিকায় এরপরে রয়েছে যথাক্রমে রাষ্ট্রয়াত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক (২৬.০৪ শতাংশ) এবং বিশেষায়িত ব্যাংক (৪.৩৪ শতাংশ)। এছাড়া সঞ্চয়ের ক্ষেত্রেও এগিয়ে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। মোট সঞ্চয়ের ৭৭.৪০ শতাংশই এসব ব্যাংকে জমা হয়েছে।

একক ব্যাংক হিসেবে সবচেয়ে বেশি অ্যাকাউন্ট রয়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের, ১০ লাখ ৫২ হাজার ১১৫টি। এরপরে রয়েছে যথাক্রমে ইসলামী ব্যাংক ৬ লাখ ৬১ হাজার ৭৪৮, অগ্রণী ব্যাংক ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩১, সোনালী ব্যাংক ৩ লাখ ৩৮ হাজার ২৬৩ এবং রূপালী ব্যাংক ২ লাখ ৯৩ হাজার ১৬।

কারা কীভাবে হিসাব খুলবেন

সরকার অনুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ৬-১৮ বছরের কম বয়সী যে কোনো শিক্ষার্থী, মাত্র ১০০ টাকা প্রাথমিক জমা দিয়ে এবং অভিভাবকের সহায়তায় ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে। এ ধরনের ব্যাংক হিসাব পরিচালনার জন্য কোনো চার্জ বা ফি আদায় করা হয় না, পাশাপাশি দেয়া হয় আকর্ষণীয় মুনাফা।

হিসাব খোলার জন্য ব্যাংক থেকে প্রথমে নির্দিষ্ট ফরম নিয়ে তা পূরণ করতে হবে। পরে ছাত্র-ছাত্রী এবং বাবা-মা কিংবা আইনগত অভিভাবক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমার মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।

প্রসঙ্গত, স্কুল ব্যাংকিংয়ের পরিধি বৃদ্ধি করতে সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকের শাখাকে নিকটবর্তী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে স্কুল ব্যাংকিং সেবা দিতে সম্প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়মিত ভিত্তিতে এসব প্রতিষ্ঠানে আর্থিক শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি হিসাব খোলা ও লেনদেনসংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ডলার মজুদে আইএমফের শর্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ

গত মার্চে দেশে আর্থিক সাক্ষরতা দিবসের আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত জানায়। দেশব্যাপী বিভিন্ন ব্যাংকের ১০ হাজারের বেশি শাখা রয়েছে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে চার লাখের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী নিকটবর্তী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ব্যাংকিং কার্যক্রম চালালে খুব দ্রুত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী এই কার্যক্রমের আওতায় আসবে।

এ বিষয়ে ডাচ বাংলা ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মূলত স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই আমাদের ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক এ কার্যক্রম মনিটরিং করেন। পাশাপাশি সারাদেশে থাকা শাখাগুলোর মাধ্যমে স্কুলগুলোতে আর্থিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়া এজেন্ট ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও এসব অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করার সুযোগ রয়েছে।’

এর ফলে অল্প সময়ে বড় সংখ্যক শিক্ষার্থীকে এ ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, আমরা এখন শাখাগুলোর নিকটবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে সব শিক্ষার্থীকে এ কার্যক্রমের আওতায় এনে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করার জন্য কাজ করছি।’

ডাচ বাংলা ব্যাংকের এ কর্মকর্তার ভাষ্য, স্কুল ব্যাংকিং হিসাবগুলোয় শিক্ষার্থীরা সাধারণত সঞ্চয় করে থাকেন। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ওঠানোর হার সাধারণ অ্যাকাউন্ট থেকে খুবই কম। অনেকে আবার ডিপোজিট পেনশন স্কিমেও (ডিপিএস) টাকা জমা করেন। এছাড়া এটিএম কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে কোন ফি নেই, যা এসব হিসাবের অন্যতম সুবিধা। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা সহজেই একক হিসাবে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ করতে পারে।