৪৮তম বিসিএস: ওভারল্যাপিং কমিয়ে চিকিৎসক সংকট কাটাতে অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি জরুরি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি © টিডিসি সম্পাদিত

বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে স্বাস্থ্য একটি অত্যাবশকীয় মৌলিক অধিকার। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে ব্যাপক হিমশিম খাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবা অনেকটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মোতাবেক, বর্তমানে দেশে প্রায় ১২ হাজার ৯৮০ জন চিকিৎসক সংকট রয়েছে। এ সুবিশাল সংকটের সমাধানে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার ৪৮তম স্পেশাল বিসিএস আয়োজন করে। 

ইতোমধ্যে ৪৮তম স্পেশাল বিসিএস থেকে ৩ হাজার ১২০ জন চিকিৎসককে তালিকাভুক্ত করছে। দেশের চরম চিকিৎসক সংকট মোকাবেলায় এ সরকারের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু সরকারের পরিকল্পনা মোতাবেক ১২ হাজার ৯৮০ জনের শূন্য পদের বিপরীতে ৪৮তম বিসিএসের এ ৩ হাজার ১২০ জন চিকিৎসক এই মুহূর্তে দেশের স্বাস্থ্য সংকট সমাধানের জন্য যথার্থ নয়। 

৪৮তম বিসিএস ছাড়াও ৪৪তম বিসিএসের মাধ্যমে ১০০ জন,  ৪৫তম বিসিএসে ৮৯১, ৪৬তম বিসিএসে ১ হাজার ৬৮২ জন চিকিৎসক নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত রেজাল্ট প্রকাশ পেয়েছে। ৪৫তম বিসিএসের ভাইভা প্রক্রিয়া চলমান। ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে।  কয়েকটি বিসিএস কাছাকাছি সময়ে হওয়াতে দেখা যাচ্ছে, একজন প্রার্থী একাধিক বিসিএসে উত্তীর্ণ। যার ফলে বিসিএসে ওভারল্যাপিং জনিত সমস্যা দেখা দিচ্ছে।  

৪৮তম বিসিএসে রিকমেন্ডেশন পাওয়া ৩ হাজার ১২০ জন ডাক্তারের প্রায় অধিকাংশই ৪৪, ৪৫, ৪৬তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলের অপেক্ষায় আছে। কয়েকজন প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে, তাদের পরিচিত অনেকেই আছেন, যারা অন্তত দুটি বিসিএসে প্রিলিমিনারী, লিখিত বা ভাইভায় উত্তীর্ণ। এমন অনেক প্রার্থী আছেন, যারা ৪৪তম বিসিএস ও ৪৮তম উভয় বিসিএসে চূড়ান্ত ফলাফলে রিকমেন্ডেশন পাওয়া। আবার ৪৮তম স্পেশাল বিসিএসে রিকমেন্ডেশন পাওয়া একটি বিশাল অংশ আবার ৪৪, ৪৫, ৪৬ বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে রিকমন্ডেড হলে নিকট ভবিষ্যতেই প্রমোশন ও অন্যান্য সুবিধার কারণে তারা ৪৮তম ছেড়ে অন্য বিসিএসে জয়েন করবেন। 

এমতাবস্থায় ৪৮তম স্পেশাল বিসিএস আয়োজন করে চিকিৎসক সংকট সমাধান অনেকাংশেই প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হয়ে পড়বে। সরকারের এ মহৎ উদ্যোগকে ফলপ্রসূ করতে ৪৮তম বিসিএসের উত্তীর্ণ পদবঞ্চিত ফোরাম এ বিসিএস থেকে অতিরিক্ত ২ হাজার জনকে তালিকাভুক্ত করে দেশের স্বাস্থ্য সংকট সমাধানে এবং জনকল্যাণে নিজেদের মেধা ও শ্রমকে  কাজে লাগাবার সুযোগ করে দেবার দাবি জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। 

আরও পড়ুন: সচিবের আশ্বাসে অনশন ভাঙলেন ১৮তম নিবন্ধনের চাকরিপ্রত্যাশীরা

৪৮তম বিসিএসে উত্তীর্ণ পদবঞ্চিত ফোরাম উল্লেখ করেছে, দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উচিত, ৪৮তম বিসিএস থেকে আরও ২ হাজার পদ বৃদ্ধি করে দেশের স্বাস্থ্যসেবায় আমাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা। উল্লেখ্য, ৩৯ ও ৪২তম স্পেশাল বিসিএসেও আগের পদসংখ্যার দ্বিগুণ প্রার্থীকে তালিকাবদ্ধ করা হয়েছিল। বিপুল সংখ্যক শূন্য পদের বিপরীতে চলমান বিসিএসের মাধ্যামে প্রায় ৬ হাজারের মতো চিকিৎসক প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। 

তাছাড়া চলমান বিসিএসগুলোয় ওভারল্যাপিং ইস্যু জনিত কারণে দেখা যাবে, খুব নিকট ভবিষ্যতে চলমান বিসিএসের মাধ্যমে ৪ হাজারের বেশি চিকিৎসকের উপজেলায় নিয়োগ করা দুঃস্বাধ্য হয়ে উঠবে। এর ফলে ৪৮তম স্পেশাল বিসিএস আয়োজন অনেকাংশেই অর্থহীন হয়ে উঠতে পারে। সংশ্লিষ্ট মহলের তাই এ মূহুর্তে স্বাস্থ্য সংকট সমাধানে দ্রুত কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।

ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে ৩ হাজার নতুন চিকিৎসক নিয়োগের চাহিদাপত্র জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। গতানুগতিক ধারায় যদি চলতে থাকে, তবে ৫০তম বিসিএসের মাধ্যমে এ নিয়োগ হবে। যেখানে এখনও ৪৪তম-এর নিয়োগই শেষ করা সম্ভব হয়নি, সেখানে ৫০তম বিসিএসের নিয়োগ সম্প্রতিক সময়ে সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে নিয়োগের আগ পর্যন্ত পদগুলো ফাকা থাকবে। সাধারণ মানুষ পর্যাপ্ত সেবা পাবে না। এতে চিকিৎসা হয়ে পড়বে প্রাইভেট সেক্টর ও বিদেশ নির্ভর। 

বিত্তশালীরা এ খরচ বহন করতে পারলেও সাধারণ মানুষ এটা করতে পারবে না। বর্তমান সরকারের সফলতাগুলো এভাবেই ম্লান হয়ে যাবে। সেজন্য ৪৮ তম বিসিএসের চূড়ান্ত ভাইভায় উত্তীর্ণদের মধ্য হতে এ নিয়োগ প্রদান করা হলে দেশের সাধারণ মানুষ দ্রুত তুলনামূলক ভালো স্বাস্থ্য সেবা পাবেন।

লেখক: মেডিকেল অফিসার, আইসিইউ
সিটি হসপিটাল, লালমাটিয়া, ঢাকা