রাত পোহালেই ডাকসু নির্বাচন
প্রার্থী-ভোটারের মানতে হবে যেসব নিয়ম-কানুন, নির্বাচনের স্বচ্ছতায় যত পদক্ষেপ
- টিডিসি রিপোর্ট
- ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৫১
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে একদিন পরেই। আগামীকাল মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বকেল পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। গণঅভ্যুত্থানে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে হয়েছিল বিতর্কিত নির্বাচন। সে কারণে এবারের নির্বাচন স্বচ্ছ করতে চেষ্টার কমতি নেই কর্তৃপক্ষের। নেওয়া হয়েছে নানা ধরনের পদক্ষেপ। কড়া নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রার্থী ও ভোটারদের মানতে হবে অনেক নিয়ম-কানুন। রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিধি-নিষেধও।
ভোট গণনা দেখানো হবে এলইডি স্ক্রিনে
ভোট গণনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের বাহিরে এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে সরাসরি দেখানো হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রবিবার (৭ আগস্ট) রাতে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের চীফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ বিষয়ে জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর ভোট গণনা প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের বাহিরে এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে সরাসরি প্রদর্শন করা হবে।
ভোটকেন্দ্রে মোবাইল-ব্যাগসহ যেসব জিনিস বহনে নিষেধাজ্ঞা
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ৮টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে। ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের মোবাইল-ব্যাগসহ একাধিক জিনিস বহনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ডাকসু নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ভোটারদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ব্যাগ, মোবাইল ফোন, স্মার্ট ওয়াচ, যেকোনো ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, পানির বোতল ও তরল জাতীয় কোনো পদার্থ নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করা যাবে না।
আট কেন্দ্রের রিটার্নিং ও পোলিং কর্মকর্তা
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত ক্যাম্পাসের ৮টি কেন্দ্রে। সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ৮টি কেন্দ্রে বুথের ৮১০টি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বুথ সংখ্যায় সকল ভোটার উপস্থিত হলেও এবং একজন ভোটার গড়ে ১০ মিনিট সময় নিলেও কোনোরকম বিঘ্ন ছাড়াই সকল কেন্দ্রে নির্ধারিত সময় বিকাল ৪টার মধ্যে ভোটদান সম্পন্ন হওয়া সম্ভব বলে মনে করছে নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়। রিটার্নিং ও পোলিং অফিসারের দায়িত্বে যারা, দেখতে ক্লিক করুন।
চক্রাকার শাটল
ডাকসু নির্বাচনের দিনে শিক্ষার্থীদের ভোট দেওয়ার সুবিধার্থে নির্দিষ্ট সময় ধরে ক্যাম্পাসে চক্রাকারে শাটল সার্ভিস চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর জানিয়েছে, ডাকসু নির্বাচন ২০২৫ এর ভোটারদের সুবিধার্থে ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ সকাল ৭ টা ৪৫ মিনিট থেকে বিকাল ৩টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত শাটল সার্ভিস চলমান থাকবে।
রুটম্যাপ অনুযায়ী, শাটল সার্ভিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ থেকে, কার্জন হল হয়ে শাহবাগ, টিএসসি, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ক্লাব, ইউল্যাব স্কুল এন্ড কলেজ, সিনেট ভবন এবং শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র হয়ে আবার ভূতত্ত্ব বিভাগে চক্রাকারে চলমান থাকবে।
ভোটকেন্দ্রে ৮১০ বুথ
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে পূর্বের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে এ ৮টি কেন্দ্রে বুথের সংখ্যা ৭১০ থেকে বাড়িয়ে ৮১০ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে বুথের সংখ্যা ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৭১০ নির্ধারণ করা হয়েছিল। এতে সব ভোটার উপস্থিত হলেও এবং একজন ভোটার গড়ে ১০ মিনিট সময় নিলেও কোনোরকম বিঘ্ন ছাড়াই সকল কেন্দ্রে নির্ধারিত সময় বিকাল ৪টার মধ্যে ভোটদান সম্পন্ন হওয়া সম্ভব বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। নির্বাচনের দিন সকল শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে আনা নেয়ার জন্য নিয়মিত শিডিউলের বাইরে অতিরিক্ত বাস চলবে। সংশ্লিষ্ট সকলকে সর্বশেষ বাসের সময় দেখে নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
নিরাপত্তা
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ক্যাম্পাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কোনো প্রকার শঙ্কা বা সংশয় নাই বলে জানিয়েছেন চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শঙ্কা নিয়ে কোনো প্রকার গুজবে কান না দেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করা হচ্ছে। আজ সোমবার রাত ৮টা থেকে টানা ৩৪ ঘণ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রবেশপথ সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সোমবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথগুলো (শাহবাগ, পলাশী, দোয়েল চত্বর, শিববাড়ি ক্রসিং, ফুলার রোড, উদয়ন স্কুল ও নীলক্ষেত) সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ আইডি কার্ডধারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ প্রবেশ করতে পারবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরা স্ব স্ব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচয়পত্রের ফটোকপি প্রদর্শন করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন (অ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তার, রোগী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক ও ফায়ার সার্ভিসের যানবাহন) ব্যতীত অন্য কোন যানবাহন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই সময়ে নিজ নিজ পরিচয়পত্র সাথে রাখার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করা হয়েছেচ। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবারের সদস্য যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত নয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়, তারা জরুরি প্রয়োজনে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করতে চাইলে প্রক্টর অফিস থেকে নিরাপত্তা পাস সংগ্রহ করতে হবে। এ বিষয়ে সকলের সার্বিক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
ভোট দেবেন যেভাবে
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে যেকেউ যেকোনো সময়ে গিয়ে নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোতে ভোট দিতে পারবেন। কেন্দ্রে গিয়ে প্রথমেই লাইনে দাঁড়াতে হবে। সিরিয়াল অনুযায়ী এগিয়ে গিয়ে দায়িত্বরত পোলিং অফিসারকে নিজের পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীরা পে-ইন স্লিপ বা লাইব্রেরি কার্ড এবং অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীরা হল কার্ড, বিশ্ববিদ্যালয় কার্ড ও লাইব্রেরি কার্ড দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করবেন।
পরিচয় নিশ্চিতের পর বুড়ো আঙ্গুলের নখে অমুছনীয় কালিযুক্ত মার্কারের দাগ নিতে হবে এবং ভোটার তালিকায় নিজের নামের পাশে স্বাক্ষর করতে হবে। পোলিং অফিসারকে ভোটার নম্বর জানাতে হবে। সেই অনুযায়ী গোপন ভোট কক্ষে যেতে হবে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভোট কক্ষে মোবাইল বা কোনো ইলেকট্রিক ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। ভোট কক্ষে গিয়ে ব্যালট পেপার থেকে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও ব্যালট নং বের করে নামের পাশের ঘরে ‘ক্রস’ চিহ্ন দিতে হবে। ‘টিক’ চিহ্ন দিলে ভোট গ্রহণযোগ্য হবে না। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান শেষে ব্যালট পেপারগুলো নিয়ে গোপন কক্ষ থেকে বের হয়ে ব্যালট বাক্সে সেগুলো রাখতে হবে।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের অর্থাৎ ডাকসুর ব্যালট ‘ডাকসু’ নামক বাক্সে এবং হল সংসদের ব্যালট ‘হল’ নামক বাক্সে রাখতে হবে। তবে ব্যালট পেপার ভাজ করে বাক্সে রাখা যাবে না। বরং ভাজ না করেই রাখতে হবে। পরে বের হয়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুন: শেষ প্রচারণার দিন এক প্রার্থীকে শুভকামনা জানালেন পাকিস্তানি ক্রিকেটার
ওএমআর ফরমে ব্যালট, রাতেই ফল
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপার ব্যবহার হবে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রেকগনিশন) ফরমে। ফলে ভোটগ্রহণ শেষে সর্বোচ্চ ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, এবারের নির্বাচনে দ্রুত ফলাফল ঘোষণার লক্ষ্যে ওএমআর ব্যালট ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ইতোমধ্যে একাধিক ওএমআর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কেউ ৬ ঘণ্টায়, আবার কেউ ৮ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল প্রস্তুত করার সক্ষমতার কথা জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন মনে করছে, ওএমআর ব্যালট ব্যবহারের মাধ্যমে ফলাফল প্রক্রিয়া যেমন সহজ হবে, তেমনি ভোটগ্রহণ ও গণনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করা যাবে।
শিক্ষকদের স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষক প্যানেল
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে শিক্ষকদের নিয়ে একটি স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষক প্যানেল গঠন করার কথা জানিয়েছেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ভোটারদের আগ্রহী করতে প্রথমবারের মতো আমাদের বিভিন্ন বিভাগ এবং ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যানদের চিঠি দিয়েছি। ডাকসু নির্বাচনে যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা আগ্রহী হয়, সেই লক্ষ্যে তাঁরা কাজ করবেন। কারণ, এবার অধিকাংশই নতুন ভোটার। তাদের ভোটদানে উৎসাহ দিতে আমরা কাজ করছি।’
সাইবার বুলিংয়ে শাস্তি
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতীতের কর্মকাণ্ড নিয়ে সাইবার বুলিং এবং ব্যক্তিগত চরিত্রহননের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিশেষত ছাত্রী প্রার্থীদের নিয়েও নানাভাবে সাইবার বুলিংয়ের ঘটনা ঘটছে, যা মানবাধিকার পরিপন্থী। ৪ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।
এতে বলা হয়েছে, কারো বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে রিটার্নিং কর্মকর্তাগণ কর্তৃক গঠিত ডাকসু আচরণবিধি সংক্রান্ত টাস্কফোর্স এবং সাইবার নিয়ন্ত্রণ সেলের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সাইবার বুলিং কিংবা অপপ্রচারের বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।