আবাসন সংকটে খরচ চালাতে হিমশিম খুবি শিক্ষার্থীদের, সুযোগ নিচ্ছেন মেস-বাসা মালিক

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল © টিডিসি সম্পাদিত

দক্ষিণবঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) প্রতিষ্ঠার ৩৪ বছরে এসে গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রমের মান বেড়েছে। কিন্তু আবাসন সংকট ভোগাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর অন্তত ৭০ শতাংশ আবাসনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এরপরও প্রশাসন সমস্যা নিরসনে চোখে পড়ার মতো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ তাদের। ফলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীরা বেশি কষ্টে আছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আবাসন সংকটের কারণে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী মেস কিংবা বাসা ভাড়া করে থাকছেন। এরকম ১০-১৫টি ছাত্রাবাসে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ৪-৫ বছর আগের তুলনায় বাসা ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। এই সংকট কাজে লাগিয়ে ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে মেস ও ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়ার রমরমা ব্যবসা। এসব মেস ও বাসায় প্রতিনিয়ত লোডশেডিং, বিশুদ্ধ পানির সংকট, স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা না থাকায় অসহায় জীবন-যাপন করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রাসেল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে আর্থিক সমস্যায় পড়তে হয়। বিশ্ববদ্যালয় প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিয়েও এ সমস্যা নিরসনে কাজ করছে না। এসব আর্থিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আমাদের দিনভর টিউশন করাতে হয়, যার ফলে অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে, পাশাপাশি নানান দুশ্চিন্তায় পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। প্রশাসনের প্রতি শিক্ষার্থীদের একটাই দাবি, অতিদ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা বাড়িয়ে নতুন হল তৈরি করে এ সমস্যা নিরসনে পদক্ষেপ নিবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’

পাঁচটি হলে থাকছেন ২ হাজার ৪৭০ জন শিক্ষার্থী। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যে সংখ্যক নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়, তার তুলনায় আবাসন ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে ভৌতসমস্যাও। আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন মাত্র ৩০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী। অন্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে ভাড়া বাড়ি ও মেসে থাকেন। এ কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচের বাইরেও গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। নিরাপত্তাজনিত সমস্যাও রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাত হাজারের বেশি। কিন্তু সে তুলনায় হল রয়েছে মাত্র পাঁচটি। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর তুলনায় হল কম হওয়ায়, আবাসন সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। এর ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি হলে থাকছেন ২ হাজার ৪৭০ জন শিক্ষার্থী। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যে সংখ্যক নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়, তার তুলনায় আবাসন ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে ভৌতসমস্যাও। আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন মাত্র ৩০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী। অন্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে ভাড়া বাড়ি ও মেসে থাকেন। এ কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচের বাইরেও গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। নিরাপত্তাজনিত সমস্যাও রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন হলে আসন সংখ্যা ৫৭৬। হলটিতে ২০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী থাকেন। হলের ক্যানটিনের খাবারের মান নিয়ে আগে তেমন কোনো অভিযোগ না থাকলেও বর্তমানে খাবার মান নিয়ে নানান অভিযোগ এবং সিট পেতেও বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় বলে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন।

খানজাহান আলী হলে ৪০৪ জন আবাসিক শিক্ষার্থী থাকেন। তাদের অভিযোগ, এই হলের ক্যানটিনের খাবারের মান সন্তোষজনক নয়। ক্যান্টিন মালিকের কাছে বারবর অভিযোগ দিলেও এর কোনো সমাধান হয়নি বলে জানান শিক্ষার্থীরা। ওয়াশরুম এবং নালা ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক হওয়ায় শিক্ষার্থীরা শারীরিক এবং মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

আরও পড়ুন: ‘প্রকৌশলী’ পদ ব্যবহার ও নিয়োগে কোটা বিতর্ক––পাল্টাপাল্টি আন্দোলনের নেপথ্যে

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান গাজী রিপন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকটের পাশাপাশি হলগুলো ডাইনিং ও ক্যানটিনের খাবার মান এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রতিনিয়ত খাবার খাওয়ায় গত জুলাই মাসে প্রায় ছয়দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। এসময় ডাক্তাররা তার এ সমস্যা প্রধান কারণ হিসেবে অস্বাস্থ্যকর খাবারকে চিহ্নিত করেছেন।

খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা হলে আসন ৩৮৪টি। এখানেও রয়েছে নানান সমস্যা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ হলে সহজে সিট পাওয়া যায় না। দ্বিতীয়বর্ষে খুবই অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী সিট পেলেও অনেকের সিট পেতে তৃতীয়বর্ষ বা তৃতীয়বর্ষের শেষ পর্যায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। যা শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা, আর্থিক বিষয়াদির পাশাপাশি সার্বিক দিকে প্রভাব ফেলে। 

মেয়েদের অপরাজিতা হলে আসন ৫৭৬টি। এ ছাড়া আছে সাতটি গণরুম। এসব রুমের ৪৮টি বেডে বর্তমানে প্রায় ৬৫ জন মেয়েকে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী তামান্না জেরিন তমা বলেন, প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীরা যে কয়জন প্রথম বর্ষেই সিট পান, তাঁদের আট থেকে দশ মাস গণরুমে থাকতে হয়। তবে নতুন প্রশাসন গণরুম সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করেছেন।

এ ছাড়া মেয়েদের বিজয়-২৪ হলে আসন সংখ্যা ৮৬৪টি, যা মোট ছাত্রীর বিবেচনায় তুলনামূলকভাবে অনেক কম বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের ভাড়া বাড়ি বা মেসে থেকে আসা-যাওয়া করেন। তাঁদের অনেকেই বলেছেন, বাড়ি ও মেসের ভাড়া, খাবারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। খরচ জোগাতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে কত দিন চালিয়ে যেতে পারবেন, তা তারা জানেন না।

আবাসন সমস্যা নিরসণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আবাসনের সংকট নিরসনের জন্য নতুন হল তৈরি করা হবে। তবে জায়গা সঙ্কটের কারনে নতুন তা সম্ভব হচ্ছে না। ক্যাম্পাসের জায়গা বর্ধিত হলে পরবর্তীতে পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে।’