‘ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ মানে ৩৫ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা’
- ২২ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৩২
বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ মানে ৩৫ বছর ধরে যত শিক্ষার্থী ভর্তি হবে, তাদের সকলকে ভালো শিক্ষক পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেট সদস্য ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন। তিনি বলেছেন, অযোগ্য শিক্ষক খারাপ পরিবেশ সৃষ্টি করে, বিশ্ববিদ্যালয় তথা শিক্ষার্থীদের নানাভাবে ক্ষতি করতে পারে।
আজ বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন। তিনি লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতির ত্রুটি নিয়ে অনেক লিখেছি, কিন্তু কোনও ফল হয়নি। অনেকবার বলেছি যে, একটা ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ মানে ৩৫ বছর ধরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যত শিক্ষার্থী ভর্তি হবে, তাদের সবাইকে একজন ভালো শিক্ষক পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা। একজন ভালো শিক্ষক যে কত শিক্ষার্থীকে আলোকিত ও অনুপ্রাণিত করতো সেটা থেকে জাতিকে বঞ্চিত করা।
তিনি বলেন, একজন অযোগ্য শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে খারাপ পরিবেশ সৃষ্টি করে, আরো অনেক আকাম-কুকাম করে বিশ্ববিদ্যালয় তথা শিক্ষার্থীদের নানা ভাবে ক্ষতি করতে পারে। শিক্ষকের গুরুত্ব বুঝে শিক্ষক বাছাইয়ে কোনও প্রকার ভুল করা যাবে না। এই ভুল করাকে কমানোর জন্যই সারা পৃথিবীতে শিক্ষক নিয়োগ হয় কয়েকটা স্তরে নানা ফিল্টারিং পদ্ধতির মাধ্যমে। যত বেশি স্তর হবে তত কম ভুল হবে।
যাকে-তাকে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য করার ক্ষমতা রহিত করা উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিয়োগ বোর্ডে বিদেশি শিক্ষাবিদদের দ্বারা একটা যাচাই করে প্রথমেই একটা শর্টলিস্ট করা উচিত এবং এরপরও যেই বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ হবে, সেই বিভাগের সিঅ্যান্ডডি’র নেতৃত্বে একটা ফিল্টারিং হতে পারে। এরপর ভিসি বা প্রো-ভিসির নেতৃত্বে ইন্টারভিউ হলে ভুল হওয়ার আশংকা কমে যাবে।
অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে কিছু সমস্যা আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। একজন প্রার্থী অনার্স এবং মাস্টার্সে প্রথম। শুধু তাই না, খুব ভালো সিজিপিএ পেয়ে প্রথম এবং তার দুইটা স্কপাস ইনডেক্সে গবেষণা পত্রও আছে। তাকে বাদ দিয়ে তার চেয়ে খারাপ ফলাফলধারীকে কেন নেওয়া হলো?
‘প্রভাষক নিয়োগে যেহেতু পিএইচডি থাকে না পিএইচডিতে গবেষণা ও গবেষণা ফিল্ড দেখার সুযোগ কম। এ ক্ষেত্রে কেবল অনার্স মাস্টার্সের রেজাল্টই একমাত্র ইয়ার্ডস্টিক। অনেক বছর যাবৎ বুয়েটে প্রভাষক নিয়োগে চোখ বুজে রেজাল্ট দেখে নিয়োগ দেয়। ভালো রেজাল্টধারীকে রেখে অপেক্ষাকৃত খারাপ রেজাল্টধারীকে নেওয়ার কোন সুযোগ নাই। ফলে সেখানে মেনিপুলেট করার সুযোগ কম’, যোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ঢাবির বিশেষ মাইগ্রেশন ও শূন্য আসনের বিভাগ মনোনয়ন প্রকাশ
তিনি আরও বলেন, আলোচ্য ক্ষেত্রে যে প্রার্থী অনার্স মাস্টার্সে প্রথম, কিছুটা শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা আছে, দুইটা স্কোপাস ইনডেক্সে গবেষণাপত্র আছে, তাকে বাদ দিয়ে অন্যকে নেওয়াযা প্রশ্ন জাগতেই পারে, এই প্রার্থীর ধর্মীয় সংখ্যালঘুর একজন বলে নেওয়া হয়নি। শুধু তাই না, নারী হওয়ায় জেন্ডার ইস্যুও সামনে চলে আসে। এমনিতেই এই সরকারের আমলে নানা ইস্যুতে এই দুই প্রশ্ন সামনে চলে আসছে। কোনও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব ইস্যু যেমন- জেন্ডার বা ধর্মীয় সংখ্যা লঘুর ইস্যু খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে।
সমস্যা কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই না উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, অন্যান্য অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশ থেকে ভালো র্যাঙ্কিং সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করেও শিক্ষক হতে পারছে না। অথচ দেশের অনেক প্রান্তিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি আছে, এমন শিক্ষকের মারাত্মক সংকট। অনেক বিভাগে শিক্ষকের সংখ্যার সংকট। দুই বা তিনজন শিক্ষক থাকলেও পিএইচডি ডিগ্রিধারী কেউ নেই। সহকারী অধ্যাপক যার কেবল মাস্টার্স ডিগ্রি আছে, এমন কেউ বিভাগের চেয়ারম্যান বা বিভাগীয় প্রধান হয়ে আছেন তথাপি পিএইচডি ডিগ্রী নিয়ে কেউ আবেদন করলে তাকে নিয়োগ পরীক্ষা নামে একটি পরীক্ষা নিয়ে সেখানেই আটকে দিচ্ছে বা এমনিতেই ইন্টারভিউ কার্ড দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, এমনভাবে আমাদের ট্যাক্সের টাকায় চলা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চললেতো দেশের শিক্ষার মানের উন্নতি হবে না। ২৪ এর অভ্যুত্থানের পরতো আশা করেছিলাম, শিক্ষক নিয়োগে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে, শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করা হবে। অথচ সবক্ষেত্রেই ততৈবচ অবস্থা দেখছি, বরং ক্ষেত্র বিশেষে আরও খারাপের পথে যাচ্ছে।