আজ মায়ের অপারেশন করার কথা ছিল সাংবাদিক তুহিনের, আসল লাশ 

আসাদুজ্জামান তুহিন
আসাদুজ্জামান তুহিন © টিডিসি সম্পাদিত

বৃদ্ধ মা সাবিয়া খাতুন বকুলের (৮০) চোখ অপারেশন করার কথা ছিল। বৃহস্পতিবার বাবা হাসান জামালের (৯০) মোবাইল একাউন্টে এক হাজার টাকা পাঠান হাত খরচের জন্য। শুক্রবার (৮ আগষ্ট) গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামের বাড়ীতে আসার কথা ছিল সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের। তুহিন আসলো ঠিক, কিন্ত লাশ হয়ে। 

পরিবারে চলছে নিয়ে চলছে শোকের মাতম। প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে গ্রামটিতে। সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে তার নিজ উপজেলা ফুলবাড়ীয়া প্রেসক্লাব মানববন্ধন করেছেন। মানববন্ধনে জেলা উপজেলার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। 

সরেজমিন নিহত সাংবাদিক তুহিনের গ্রামের বাড়ীতে গিয়ে দেখা গেছে, বৃদ্ধ মা সাবিয়া খাতুন বকুল ও বৃদ্ধা বাবা হাসান জামাল ছেলের শোকে বারান্দায় বসে বিলাপ করছেন। কখন ছেলের লাশ আসবে বারবার জিজ্ঞেস করছেন তারা। গ্রামের মানুষ বৃদ্ধা বাবা মাকে শান্তনা  দিতে এসে তারাও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে। পুরো গ্রামে চলছে শোকের মাতম।। 

সাংবাদিক তুহিন ছিল ৫ ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। নিহত তুহিনের বড় ভাই জসিম উদ্দিন ১৫ বছর আগে মারা যান। আলম, সেলিম শাহজাহান জীবিকার তাগিদে গ্রামের বাইরে বসবাস করেন। দরিদ্র পরিবারের ছেলে আসাদুজ্জামান তুহিন জীবিকার তাগিদে গাজীপুরে বসবাস করতেন। গাজীপুরে একটি বেসরকারী হাসপাতালের পার্টনারশীপ রয়েছে তার। প্রায় ৬ বছর ধরে তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ নামের একটি পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসাবে কাজ করতেন। বাড়িতে থাকা বৃদ্ধ বাবা মাকে তিনিই দেখা শুনা করতেন বলে জানান নিহত তুহিনের ভাবী জোহরা খাতুন।

আরও পড়ুন: ফ্যাসিস্টের সহযোগী ও সরকারের সমালোচনা, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি ঢাবি শিক্ষককে

তিনি জানাান, নিহত সাংবাদিক তুহিনের তৌকিব (৭) ও ফাহিম (২) নামে অবুঝ শিশু সন্তান রয়েছে। তার বৃদ্ধা মাকে গাজীপুর নিয়ে গিয়ে  চোখ অপারেশন করার জন্য  শুক্রবার (৮ আগষ্ট) বাড়ীতে আসার কথা ছিল সাংবাদিক তুনিনের। সাংবাদিক তুহিন বাড়িতে এসেছেন ঠিকই সকলকে কাঁদিয়ে লাশ হয়ে। দরিদ্র পরিবারটিকে এখন কে দেখবে বলে আঁচলে চোখ মুচলেন জোহুরা। 

চোখে কম দেখা ও কানে কম শুনা তুহিনের বৃদ্ধা মা ছেলের শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বৃদ্ধ বাবা হাসান জামাল ছেলের শোকে পাথর পাথর হয়ে গেছেন। শুধু বারবার জিজ্ঞেস করছেন কখন তার ছেলের লাশ আসবে বাড়িতে। বাবা হাসান জামালের চোখের জলে আগত মানুষের চোখে জল ঝরছে। তিনি বয়সের ভারে বেশি কথা না বলতে পারলেও তার সন্তান সাংবাদিক তুহিন হত্যার বিচার চেয়ে কেঁদেছেন।।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (৭ আগষ্ট) রাত ৮ টার দিকে গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে একদল দুর্বৃত্তরা।