চাঁদাবাজির পর তিন লাখ ৭ হাজারে কেনা অপুর মোটরসাইকেলটি উদ্ধার
- ০৩ আগস্ট ২০২৫, ২১:৩২
রাজধানীর গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্যের বাসা থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া জানে আলম অপুর কাছ থেকে চাঁদাবাজির টাকায় কেনা একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিন লাখ সাত হাজার টাকায় কেনা ইয়ামাহা এফজেড-এক্স ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলটি মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের ১ নম্বর রোডের ২১ নম্বর বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়।
মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের দাবি, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক অপু চাঁদার টাকায় এই মোটরসাইকেলটি কিনেছিলেন। শুক্রবার (১ আগস্ট) অপুর ধানমন্ডির বাসায় অভিযান চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলামতও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এর আগে, শুক্রবার সকালে রাজধানীর ওয়ারী এলাকার গোপীবাগ থেকে অপুকে গ্রেফতার করে ডিবি। বিকেলে মিন্টোরোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
আরও পড়ুন: গুলশানে চাঁদাবাজি: অবশেষে গ্রেপ্তার জানে আলম অপু
তিনি জানান, গ্রেফতারের পর অপুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে। গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় এ নিয়ে মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চাঁদাবাজ চক্রে আরও কেউ জড়িত কি না, তা নিয়ে তদন্ত চলছে।
ডিবির ভাষ্যমতে, গত ১৭ জুলাই গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডের বাসায় গিয়ে সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের স্বামীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা আদায় করেন অপু ও তার সহযোগীরা। তারা দাবি করেন, মোট ৫০ লাখ টাকা দিতে হবে। এরপর ১৯ জুলাই তারা ফের ওই বাসায় যান বাকি ৪০ লাখ টাকা আনতে, তবে সফল হননি। ২৬ জুলাই ফের গেলে ভুক্তভোগী পরিবার পুলিশে খবর দেয়, পুলিশ সেদিন পাঁচজনকে গ্রেফতার করলেও অপু পালিয়ে যান।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আদায়কৃত ১০ লাখ টাকার মধ্যে অপু ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান রিয়াদ ৫ লাখ করে ভাগ করে নেন।
আরও পড়ুন: ‘সি’ ক্যাটাগরির যোদ্ধা, ‘এ’ ক্যাটাগরির অপরাধী!
গ্রেফতার অন্যরা হলেন—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য রিয়াদ, ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহীম হোসেন মুন্না, মহানগর সদস্য সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব, এবং আন্দোলনের কর্মী আমিনুল ইসলাম।
এর আগে, গত ৩০ জুলাই ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর নাখালপাড়ায় রিয়াদের ভাড়া বাসা থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার চারটি চেক উদ্ধার করা হয়। পরদিন ৩১ জুলাই ভোরে রিয়াদের বাড্ডার বাসা থেকে আরও ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা উদ্ধার করে গুলশান থানা পুলিশ।
উল্লেখ্য, জানে আলম অপু বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। চাঁদাবাজির ঘটনায় সংগঠন থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উদ্যোগে কয়েক মাস আগে ছাত্রসংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। এ সংগঠন হওয়ার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত ফেব্রুয়ারিতে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছিল, সেই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছিল আবদুর রাজ্জাককে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত গণঅভ্যুত্থানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষে বহু আন্দোলনকারী আহত হন। আন্দোলনে আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে সরকার ‘জুলাই যোদ্ধা’ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই প্রেক্ষিতে সরকারিভাবে তিনটি ক্যাটাগরিতে ‘জুলাই যোদ্ধা’ তালিকা প্রকাশ করা হয়। ক্যাটাগরি ‘এ’-তে গুরুতর আহত, ক্যাটাগরি ‘বি’-তে মাঝারি আহত এবং ক্যাটাগরি ‘সি’-তে সামান্য আহতদের অন্তর্ভুক্ত করে সরকার। এ তালিকার ‘সি’ ক্যাটেগরিতে স্থান পান বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সাবেক (বহিষ্কৃত) যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু।