শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় উত্তাল ইবি, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন
- ২০ জুলাই ২০২৫, ২০:০৬
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর থেকে উদ্ধারকৃত আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একইসাথে তার মৃত্যুকে হত্যা বলে দাবি করে সুষ্ঠু তদন্ত ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনার দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এসব কর্মসূচি শুরু করেন সাজিদের সহপাঠী সংবর্ত ৩৬ ব্যাচের (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের) শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে কর্মসূচিতে যোগ দেন প্রজ্বলিত ৩৫ ব্যাচ (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) ও ইনকিলাব ৩৬ ব্যাচের (২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীরাও। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতারাও সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে যোগ দেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা— ‘কাজ না করে বেতন নে, বেতন কি তোর হালাল বে’, ‘ইবির পুকুরে ভাসছে লাশ, তদন্ত চলবে ২ মাস’, ‘কার দায় কে নেবে, জবাব চাই দিতে হবে’, ‘বেশি আবেগি হইও না তোমরা’, ‘তুমি কে আমি কে, সাজিদ সাজিদ’, ‘টাকা লাগলে টাকা নে, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দে’, 'শিক্ষার্থী মর্গে, প্রশাসন ঘুমায় স্বর্গে’, ‘জাস্টিস ফর সাজিদ’ সহ বিভিন্ন রকমের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
আরও পড়ুন: ক্যাম্পাসের পুকুরে মিলল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের লাশ, ছিলেন জুলাইযোদ্ধা
আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা কিছু দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো:
১. সাজিদের মৃত্যুর তদন্ত দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে। ২ থেকে ২.৫ মাস সময় গ্রহণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। রিপোর্ট প্রকাশে সময়সীমা কমিয়ে আনা আবশ্যক।
২. ১৭৫ একর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে। কোনো এলাকা যেন নজরদারির বাইরে না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. প্রত্যেকটি আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি ও এক্সিট শতভাগ মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজন হলে ডিজিটাল কার্ড বা বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করতে হবে।
৫. ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও সক্রিয় রাখতে হবে, যাতে কোনো শিক্ষার্থী অন্ধকারে চলাচল করতে বাধ্য না হয়।
৬. উল্লিখিত সমস্যা সমাধানে নির্দিষ্ট সময়সীমা (ডেডলাইন) ঘোষণা করতে হবে এবং তার বাস্তবায়নের নিয়মিত অগ্রগতি প্রকাশ করতে হবে।
৭. ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজন হলে প্রবেশের অনুমতি নির্দিষ্ট পরিচয় যাচাইয়ের মাধ্যমে দিতে হবে।
৮. উপাচার্য, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, হল প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা এদের সবাইকে নিয়মিতভাবে ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সমস্যা সমাধানে সরাসরি জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
৯. মেইন গেটের পাশাপাশি সকল এন্ট্রি পয়েন্টে নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দিতে হবে।
১০. সাজিদ মারা যাওয়ার পর ভিসি, প্রো ভিসি দেখা করা তো দূরের কথা কোন বিবৃতি দেয় নি কেন তার জবাবদিহি করতে হবে।
১১. হল ও প্রশাসনের তদন্ত কমিটিতে ২ জন শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
১২. আমাদের দাবিসমূহ সাত কর্ম দিবসের ভেতর বাস্তবায়ন করতে হবে, এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।