ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাসসহ ৭ দাবিতে রাজশাহী কলেজ ছাত্রশিবিরের স্মারকলিপি

রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দিচ্ছেন ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা
রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দিচ্ছেন ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা © টিডিসি

সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি পূরণের জন্য ও জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের আলোকে ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাসসহ ৭ দফা  দাবিতে রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মু যহুর আলী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে রাজশাহী কলেজ ছাত্রশিবির।

সোমবার (৭ জুলাই) বেলা ১১টায় রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান মাসুমের নেতৃত্বে রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষের নিজ কার্যালয়ে অধ্যক্ষ বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মো. মোশাররফ হোসেন, সাহিত্য সম্পাদক হাফেজ আসমাউল হকসহ ছাত্রশিবিরের অন্যান্য নেতা।

স্মারকলিপিতে তারা ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের হাতে ১৬ জুলাই ২০২৪-এ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার লক্ষ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে; বিগত ফ্যাসিবাদের শাসনামলে হোস্টেলগুলোতে ছাত্র নির্যাতনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হোস্টেল তত্ত্বাবধায়ক এবং অন্যান্য সদস্যদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; পতিত ও পলাতক ফ্যাসিবাদের দোসর ও আইকনদের নামে রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসে যেসব স্থাপনার নামকরণ করা হয়েছিল, তা অবিলম্বে পরিবর্তন করে জুলাই বিপ্লবের শহীদ সাকিব আনজুম ভাইয়ের নামে নামকরণ করতে হবে; রাজশাহী কলেজের জাদুঘর পুনরায় চালু করতে হবে এবং চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি বিশেষায়িত সেন্টার ও সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ইতিহাস, গুরুত্বপূর্ণ ছবি, সাহিত্য, ম্যাগাজিন, প্রকাশনা, পত্রিকা ও চিত্রকর্ম ইত্যাদি সংরক্ষিত থাকবে।

আরও পড়ুন: সাত কলেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিতুমীর কলেজকে অন্তর্ভুক্ত না করার দাবি শিক্ষার্থীদের

এ ছাড়া চব্বিশের জুলাই বিপ্লবে রাজশাহী কলেজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব ছাত্র-শিক্ষক ফ্যাসিবাদের ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করেছিল, প্রত্যক্ষভাবে গণহত্যাকে সমর্থন ও পরোক্ষভাবে গণহত্যার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছিল তাদের চিহ্নিত করে অতিদ্রুত তাদের বিরুদ্ধে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে রাজশাহী কলেজ প্রশাসনের অভ্যন্তরে সংঘটিত সকল দুর্নীতির তথ্য শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নিতে হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে ও ৩৬ জুলাই নামে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এ বিষয়ে কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান মাসুম বলেন, ‘আমরা জুলাইকে সামনে রেখে বিগত বছরের জুলাইয়ে কলেজে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আবারও কলেজ প্রশাসনকে জানানো হলো। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, জুলাইয়ের হামলার প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কলেজ প্রশাসন কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ ছাড়া যেসব শিক্ষক, কর্মচারীরা জুলাই আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আমরা ছাত্র সংগঠনগুলো সবসময় চাই ছাত্রদের পক্ষে কাজ করতে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা আবারও স্মারকলিপি প্রদান করলাম।’

রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মু. যহুর আলী বলেন, ‘আমরা স্মারকলিপি হাতে পেলাম, শিক্ষক পরিষদে বসবো এবং আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

আরও পড়ুন: জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে ষড়যন্ত্র মেনে নেওয়া হবে না: নাহিদ ইসলাম

এর আগেও স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে, সে প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা আগের স্মারকলিপি অনুযায়ী কিছু বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তবে ১৬ই জুলাই ২০২৪-এর হামলার বিষয়ে আমরা ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পাইনি, এ জন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তা ছাড়া যারা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল তারা অধিকাংশ গা ঢাকা দিয়ে আছে। যে দু-একজন সামনে আসছে, তাদের ইতোমধ্যেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা পুলিশে সোপর্দ করেছে।’

উল্লেখ্য, গত এক বছরে রাজশাহী কলেজ ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে এবং প্রতি বারই জুলাইয়ের হামলার বিচার ও হোস্টেলে ছাত্রদের নির্যাতনের দাবি জানানো হলেও কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কলেজ প্রশাসন।