‘ভালো করে পড়ো, অবশ্যই সফল হবে’—মায়ের কথায় গৌরব যখন ক্যাডার হলেন, তখন মা পাশে নেই
- ০৮ জুলাই ২০২৫, ১৭:৫০
৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন পাবনা খন্দকার গৌরব মুস্তাফা। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সক্রিয় এই তরুণ নিজের দৃঢ় সংকল্প, অধ্যবসায় এবং পরিবার, বিশেষ করে মায়ের অনুপ্রেরণায় অর্জন করেছেন জীবনের অন্যতম কাঙ্ক্ষিত সফলতা।
গৌরব পাবনা পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। বাবা খন্দকার গোলাম মুস্তাফা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত ছিলেন এবং ২০১৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। মা মরহুমা গুলশান আরা একই প্রতিষ্ঠানে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে চাকরি করতেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
আর আমার সফলতার জন্য সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব আমার মায়ের। মা সবসময় আমাকে বলতেন, ভাল করে পড়ো, ইনশাআল্লাহ একদিন অবশ্যই সফল হবে। আজ তিনি আমার পাশে নেই, কিন্তু আমি জানি, আজকের দিনে তিনি পাশে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। বাবাও সবসময় সাপোর্ট দিয়ে গেছেন, সাহস যুগিয়েছেন। বলতেন, চেষ্টা করো, সবসময় পাশে আছি।’
পরিবারের একমাত্র সন্তান গৌরব যথাক্রমে ২০১১ সালে পাবনা জেলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ২০১৩ সালে পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেন। এরপর ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
স্নাতকের পরই শুরু করেন বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি। পড়াশোনার পাশাপাশি গৌরব একজন প্রশিক্ষিত সংগীতশিল্পী, যা তাকে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে সহায়তা করেছে।
এই দীর্ঘ প্রস্তুতির ফল এসেছে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার মাধ্যমে। নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে গৌরব বলেন, ‘প্রথমেই আমি কৃতজ্ঞতা জানাই মহান আল্লাহ্তায়ালার প্রতি। আর আমার সফলতার জন্য সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব আমার মায়ের। মা সবসময় আমাকে বলতেন, ভাল করে পড়ো, ইনশাআল্লাহ একদিন অবশ্যই সফল হবে। আজ তিনি আমার পাশে নেই, কিন্তু আমি জানি, আজকের দিনে তিনি পাশে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। বাবাও সবসময় সাপোর্ট দিয়ে গেছেন, সাহস যুগিয়েছেন। বলতেন, চেষ্টা করো, সবসময় পাশে আছি।’
আরও পড়ুন: সাইকেল মেকানিকের ছেলে আশিক এখন বিসিএস ক্যাডার
একইসঙ্গে তিনি তার সফলতার জন্য তার শিক্ষাজীবনের সকল শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বিসিএস প্রত্যাশীদের জন্য পরামর্শ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ভাল কিছু অর্জন করতে হলে অবশ্যই ধৈর্যের সঙ্গে লেগে থাকতে হয়। নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে, নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে কঠোর পরিশ্রম দিয়ে। ব্যর্থতা আসতেই পারে, কিন্তু তা যেন লক্ষ্য থেকে সরিয়ে না দেয়। ভাগ্য সহায় হলে অবশ্যই সফলতা আসবে।’
ব্যক্তিগত জীবনে গৌরব বিবাহিত এবং তার দুই বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। স্ত্রী পেশায় একজন চিকিৎসক। পরিবার, শিক্ষা এবং সংস্কৃতি—এই তিনের মেলবন্ধনে গড়া এই তরুণ বিসিএস প্রশাসনে পদার্পণের মাধ্যমে দেশসেবায় আত্মনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। তিনি নিজের ও তার পরিবারের সুস্থতার জন্য সকলের দোয়া প্রার্থনা করেন।