নাসিরনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট, ব্যাহত স্বাস্থ্যসেবা
২১ পদের ১৭টিই শূন্য, নেই এনেসথেসিয়া
- ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮:২৮
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানে মোট ২১টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও মাত্র ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে কার্যক্রম চালানো হছে। যার কারণে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ভোগান্তি শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাইনি, সার্জারি, শিশু, চর্ম ও যৌন, অর্থপেডিক্স, মেডিসিন, এনেসথেসিয়াসহ বিভিন্ন বিভাগে মোট ২১টি পদের বিপরীতে ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ পদই খালি। জনবল সংকটে মাত্র ৪জন চিকিৎসক দিয়েই চলছে এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ১৭টি পদ শূন্য থাকা ছাড়াও ১০টি কনসালটেন্ট পদের বিপরীতে আছে মাত্র একজন। নার্স ৩৫টি পদের মধ্যে আছে ১৯ জন। নার্সদের মধ্যে আবার প্রেষণে চলে গেছে পাঁচজন, মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন দুইজন। এদিকে, এনেসথেসিয়ার জন্য চিকিৎসক না থাকায় চালু করা যাচ্ছে না সিজারসহ ছোটখাটো অপারেশন। অন্যদিকে, চিকিৎসকদের সহকারী সেকমো ১৫টি পদের বিপরীতে আছে তিনজন এবং একজন রেডিওলজিস্টটের অভাবে চালু হচ্ছে না এক্স-রে মেশিন।
আরও জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য যন্ত্রপাতি থাকার পরও মেডিকেল টেকনোলজিস্টের অভাবে এক্সরে মেশিনের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাওর বেষ্টিত নাসিরনগর উপজেলাসহ আশেপাশের কয়েকটি উপজেলা থেকে আসা সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিনের মত চিকিৎসকদের কক্ষের সামনে লম্বা লাইন। কথা হয় কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে। তারা জানান, প্রতিদিন কমপক্ষে গড়ে প্রায় ৫০০ রোগী এ হাসপাতালে বর্হিবিভাগ থেকে সেবা গ্রহন করে থাকে। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় এত মানুষকে সেবা দিতে আমাদের সমস্যা হয়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ শূণ্য থাকায় সাধারন মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ছাত্রলীগ নেতাকে ধরিয়ে দিতে থানায় গিয়ে হামলার শিকার বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা ৮০ বছর বয়স্ক নারী খায়রুন্নেসা বলেন, বয়স হয়েছে অনেক, কোমড়ে ব্যাথা। বইতামও পাড়িনা, নামাজও পড়তে কষ্ট হয়। আইছিলাম ডাক্তার দেখাইতে। এই ডাক্তার (অর্থপেডিক্স) বলে নাই, হের লাইগা চইলা যাইতাছি। আর কুমববালা (কখন) ডাক্তার আইব? আমি মরার পর।
চর্ম ও যৌন চিকিৎসা নিতে আসা শরীফুল হক বলেন, চর্ম ও যৌনের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে কোন ডাক্তার নাই। আমাদের হাওরবেষ্টিত নাসিরনগরে এত বড় একটা হাসপাতালে ডাক্তার মাত্র কয়েকজন, মানুষ চিকিৎসা পাবে কই। এগুলো দেখার কেই নেই।
হাসপাতালের বারান্দায় বসেছিলেন জয়নাল মিয়া। পাশেই একজন গর্ভবতী নারী। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। চিকিৎসক বলেছেন, নরমাল ডেলিভারি না হলে সিজার করাতে হবে। শুনলাম অজ্ঞানের (এনেসথেসিয়া) ডাক্তার নাই। আমার মত গরীব মানুষ অত টেহা পামু কই?
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিবাকর ভাট বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ায় পর থেকেই হাসপাতালের সেবার মান উন্নত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু অনেক চিকিৎসকের পদ খালি রয়েছে। ঢাকা থেকে যন্ত্রপাতি এনে অপারেশন থিয়েটার সচল করেছি কিন্তু একজন এনেসথেসিয়ার অভাবে সিজার করাতে পারছি না।
ব্রাহ্মণাড়িয়ার জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নোমান মিয়া বলেন, জনবল শূন্যতার বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। চিকিৎসকদের জন্য সামনে নিয়োগ আসছে। আশা করছি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা নিবেন এবং চিকিৎসক শূন্যতা অনেকটাই কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।