ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে যাওয়ার পথে বাস দুর্ঘটনায় নিহত ৬, শোকে স্তব্ধ তিন গ্রাম
- ২৯ জুন ২০২৫, ১৭:৫৪
ঢাকায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশে যোগ দিতে রওনা দেওয়া বাস দুর্ঘটনায় যশোরের ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন। এই দুর্ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে গেছে সদর উপজেলার পাগলাদাহ, মধুগ্রাম ও ঘুরুলিয়া গ্রামের জনজীবন। নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম, আত্মীয়স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পুরো অঞ্চল। শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে জানাজা শেষে নিহতদের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন—ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যশোর সদরের নওয়াপাড়া ইউনিয়নের সভাপতি ও পল্লী চিকিৎসক জালাল উদ্দিন (৬৫), পাগলাদাহ গ্রামের আব্দুল হালিম (৫৫), বাসের হেলপার আসিফ হোসেন (২৮), মুদি দোকানি জিল্লুর রহমান (৬০), সংগঠনের জেলা পর্যায়ের নেতা মাওলানা মোস্তফা কামাল (৫০) ও রওশন আলী (৫২)। প্রত্যেকেই যশোর সদর উপজেলার বাসিন্দা।
নিহত জালাল উদ্দিন এলাকায় ছিলেন একজন শ্রদ্ধেয় চিকিৎসক এবং ইসলামী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক। তিনিই বাসটির নেতৃত্বে ছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে পাগলাদাহ গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে শোক। কেউ কবর খুঁড়ছেন, কেউ সামিয়ানা টাঙাচ্ছেন, কেউবা চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না—পুরো এলাকা যেন শোকের ছায়ায় আচ্ছন্ন।
আরও পড়ুন: ১৪ দেশের ৪৯ প্রবাসী ফুটবলার বাফুফের ট্রায়ালে, সম্ভাবনার নতুন জোয়ার
দুর্ঘটনা থেকে জীবিত ফিরে আসা একই গ্রামের আইতুল্লাহ জানান, সমাবেশে যোগ দিতে হামদান এক্সপ্রেস নামে একটি বাস ভাড়া করে যাত্রা শুরু করেছিলেন তারা। বেশিরভাগই ছিলেন বয়স্ক। বাসে উঠে ঘুমিয়ে পড়েন। পথিমধ্যে চা-বিস্কুট খেয়ে ফের যাত্রা শুরু হলে সিংপাড়া-নওয়াপাড়া ও হাসাড়া ব্রিজ-২–এর মধ্যবর্তী স্থানে চলন্ত এক ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয় বাসটি। এরপরই বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক দ্বীপে রেলিংয়ে ধাক্কা খায়। ঘটনাস্থলেই নিহত হন দুজন, পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও চারজন।
নিহতদের একজন হেলপার আসিফ হোসেনের মৃত্যু যেন আরেক ট্র্যাজেডি। ছোটবেলায় পিতাকে হারিয়ে মায়ের গার্মেন্টসের আয়েই বেড়ে উঠেন তিনি। কিছুদিন আগে পরিবারের হাল ধরতে হেলপারের চাকরি নিয়েছিলেন। সেই চাকরির পথেই প্রাণ গেল। পেছনে রেখে গেলেন অসুস্থ মা, স্ত্রী ও আড়াই বছরের এক শিশু কন্যাকে। শোকে পাথর হয়ে গেছেন স্বজনেরা। বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন শোকাহত স্ত্রী। বলেন, “যেদিন বাসে ওঠে, সেদিনই বলেছিল, হুজুরদের প্রোগ্রাম শেষ না হলে ফিরা হবে না। কিন্তু যে ফিরবে না—তা বলেনি... আমার মেয়েটার এখন কী হবে?
এ দুর্ঘটনায় জালাল উদ্দিনের বড় ভাই মাকসুদুর রহমান বলেন, জালাল ছিল একজন আলেম ও পল্লী চিকিৎসক। তার মৃত্যুতে পুরো এলাকাই নিঃশব্দ। নিহত ও আহতদের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত বলেন, গণমাধ্যমের খবরে আমরা দুর্ঘটনার বিষয়টি জানতে পেরেছি। নিহতদের পরিবারে পুলিশ সদস্যরা গেছেন। একই ইউনিয়নে ছয়জনের মৃত্যু এলাকায় গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে।