মধ্যপ্রাচ্যে কাতারসহ যেসব দেশে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি © সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি বহুদিনের। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এই অঞ্চলের মার্কিন ঘাঁটিগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এসব ঘাঁটি এখন ইরানের সম্ভাব্য পাল্টা প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তেহরান আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল—প্রয়োজনে সব ধরনের বিকল্প ব্যবহার করবে। এমনকি কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘাঁটিতে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ঘাঁটিগুলোর মধ্যে কিছু রয়েছে স্থায়ীভাবে, আবার কিছু তৈরি হয়েছে বিশেষ অভিযানের প্রেক্ষিতে। সামগ্রিকভাবে অন্তত ১৯টি স্থানে মার্কিন সামরিক স্থাপনা রয়েছে, যার বেশিরভাগই ‘সেন্ট্রাল কমান্ড’ বা সেন্টকমের অধীনে পরিচালিত হয়।

আরও পড়ুন: ইরাকের আরেক মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা

কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি হলো আল উদেইদ, যেখানে সেন্টকমের ফরওয়ার্ড হেডকোয়ার্টার রয়েছে। এই ঘাঁটি থেকে ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে চালানো মার্কিন অভিযানে বড় ভূমিকা পালন করা হয়েছে। এখানে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে—সম্প্রতি এই ঘাঁটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ যুদ্ধবিমান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইরানি পাল্টা হামলার সম্ভাবনা বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বাহরাইনে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ৫ম ফ্লিটের সদর দফতর রয়েছে। এটি পারস্য উপসাগর, লোহিত সাগর এবং আরব সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ উপস্থিতি নিশ্চিত করে। এখানে প্রায় ৯ হাজার সেনা এবং বিভিন্ন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রয়েছে। এই ঘাঁটিতে মাইনবিধ্বংসী জাহাজ থেকে শুরু করে সুপারক্যারিয়ার শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ পর্যন্ত রয়েছে।

কুয়েতেও যুক্তরাষ্ট্রের বড় সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। ক্যাম্প আরিফজান ও আলি আল-সালেম ঘাঁটি থেকে বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম ও লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করা হয়। আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় এই ঘাঁটিগুলোর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। বর্তমানে কুয়েতেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৩,৫০০ সেনা অবস্থান করছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল ধাফরা বিমান ঘাঁটিতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮০তম এয়ার এক্সপিডিশনারি উইং। এটি মূলত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও ড্রোন অভিযান পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।

ইরাকে একসময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাসংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি। বর্তমানে সেখানে প্রায় আড়াই হাজার সেনা রয়েছে, যারা ইসলামিক স্টেট বিরোধী আন্তর্জাতিক জোটের অংশ হিসেবে কাজ করছে। বাগদাদ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে এই সেনা ধীরে ধীরে প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া চলছে।

সিরিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে, যারা ইসলামিক স্টেটের পুনরুত্থান ঠেকাতে স্থানীয় বাহিনীর সঙ্গে কাজ করছে। ২০২৩ সালে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সিরিয়ায় মার্কিন ঘাঁটিগুলোর ওপর একাধিকবার হামলার চেষ্টা চালিয়েছে ইরানপন্থী গোষ্ঠীগুলো।

এই ঘাঁটিগুলোর অস্তিত্ব শুধু কৌশলগত নয়, বরং রাজনৈতিক এবং প্রতিরক্ষা বিষয়ক বাস্তবতার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলো যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে—সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সেটিই মনে করিয়ে দিচ্ছে। [সূত্র: বিবিসি বাংলা]