রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন, জানুন রাগ কমানোর ৯ কৌশল
- ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১১:৫০
রেগে গেলেন ত হেরে গেলেন! এই ছোট একটি কথায় জীবনের বড় সত্য লুকিয়ে আছে। রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে চিৎকার, ভাঙচুর, এমনকি হিংসাত্মক আচরণের মাধ্যমে। রেগে গেলে আপনি কেবল মানসিক শান্তি হারান না, হারান সম্পর্ক, সুযোগ আর নিজের উপর নিয়ন্ত্রণও। অনেক সময় সামান্য উত্তেজনায় বলা একটি তিক্ত বাক্য কিংবা রাগের মাথায় নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত জীবনে অপূরণীয় ক্ষতি ডেকে আনে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাগ ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে তা হয়ে উঠতে পারে ধ্বংসাত্মক। তাই নিজেকে প্রশ্ন করুন, রাগ করে আপনি আসলে কী জিতছেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাগ যেমন একদিকে আত্মরক্ষা বা অন্যায় প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে অন্যদিকে মাত্রাতিরিক্ত বা দমন করা রাগ ডেকে আনতে পারে বিষণ্নতা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এমনকি সম্পর্ক ভাঙনের ঝুঁকি।
কেন হয় রাগ
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এলি মার্কম্যান বলেন, রাগ হলো দ্বিতীয় স্তরের একটি আবেগ। এর পেছনে থাকে ভয়, অপমান, হতাশা কিংবা মানসিক চাপ। রাগের সঙ্গে মানসিক রোগ যেমন বিষণ্নতা, পিটিএসডি, পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারের সম্পর্কও রয়েছে। শিশুদের ক্ষেত্রেও রাগ হতে পারে মানসিক বিপর্যয়ের লক্ষণ। আবার অতীতের যেকোনো আঘাত, পারিবারিক অবহেলা কিংবা যানজট, ঘুম ও খাবারের অভাব থেকেও সহজেই রাগ জন্মাতে পারে।
রাগের ধরণ
রাগ প্রকাশের ধরন একেক জনের মধ্যে ভিন্ন রকম:
ভেতরে পুষে রাখা রাগ: সামাজিক চাপে অনেকেই রাগ প্রকাশ করেন না, যা পরে বিষণ্নতা বা উচ্চ রক্তচাপে রূপ নেয়।
উগ্র ও প্রকাশ্য রাগ: কেউ কেউ রাগ দমন করতে না পেরে চিৎকার-চেঁচামেচি, গালিগালাজ এমনকি সহিংস আচরণে জড়িয়ে পড়েন।
প্যাসিভ অ্যাগ্রেশন: কেউ কেউ সরাসরি কিছু না বলে ঘুরিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন, যার পেছনে লুকিয়ে থাকে দমন করা রাগ।
আরও পড়ুন: মেধা বাড়াতে চাইলে বদলে ফেলুন এই অভ্যাসগুলো
রাগ থেকে যে ক্ষতি হতে পারে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন অনিয়ন্ত্রিত রাগ থেকে দেখা দিতে পারে: উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ, সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি, কর্মস্থলে সংঘর্ষ, মানসিক ব্যাধি, বিষণ্নতা ও দুশ্চিন্তা এবং আত্মহননের প্রবণতা।
রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল
বিশ্বখ্যাত ‘মায়ো ক্লিনিক’ এবং মনোচিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী রাগ কমানোর কিছু কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো:
স্থান ত্যাগ করুন
রাগের সময় পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিন। দরকার হলে জায়গা পরিবর্তন করুন। এটি তাৎক্ষণিক রাগ কমাতে সাহায্য করে।
লিখে ফেলুন
রাগের কারণ, অনুভূতি এবং প্রতিক্রিয়া লিখে ফেলুন। এতে মনের ভার হালকা হবে এবং নিজেকে বিশ্লেষণ করা সহজ হবে।
পেছন থেকে সংখ্যা গুনুন
১০০ থেকে উল্টো গোনার অভ্যাস আপনাকে রাগের সময় কিছুটা সময় ও মনোযোগ সরাতে সহায়তা করবে।
বিশ্বস্ত কাউকে বলুন
রাগ জমিয়ে না রেখে কাছের কাউকে বলুন। অনুভূতি ভাগ করে নেওয়া মানসিক ভার কমায়।
নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করুন
গভীর শ্বাস নিন, কিছুক্ষণ ধরে রাখুন এবং ধীরে ছেড়ে দিন। এটি শরীর ও মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে।
বলার আগে সময় নিন
রাগের মুহূর্তে বলার আগে নিজেকে একটু সময় দিন। ভেবে বলুন, যাতে আপনি পরে অনুতপ্ত না হন।
ক্ষমা করতে শিখুন
রাগ পুষে না রেখে ক্ষমা করুন। এতে ভেতরের তিক্ততা কমে এবং মানসিক প্রশান্তি ফিরে আসে।
আরও পড়ুন: প্রকৃতির কল্পনায় কমে মানসিক চাপ
ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম
নিয়মিত ব্যায়াম ও ঘুম রাগ কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ঘুমহীনতা রাগের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
পেশাদারদের সাহায্য নিন
যদি রাগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। ‘অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং’ অনেক সময় রাগ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
রাগ কোনোভাবেই দুর্বলতা নয়, তবে এটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা সত্যিই সমস্যার। অনুশীলন, সচেতনতা ও প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তার মাধ্যমে রাগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। নিজেকে বোঝাতে হবে রাগকে আমি নিয়ন্ত্রণ করব, রাগ আমাকে নয়।