স্বেচ্ছামৃত্যু বৈধতায় যুক্তরাজ্যে বিল পাস
- ২১ জুন ২০২৫, ২০:১৮
ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে মরণব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য স্বেচ্ছামৃত্যুর প্রস্তাবিত আইন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে পাস হয়েছে। শুক্রবার (২০ জুন) অনুষ্ঠিত বিতর্ক ও ভোটাভুটিতে ৩১৪ ভোটে বিলটি অনুমোদন পায়, যেখানে ২৯১ জন আইনপ্রণেতা এর বিপক্ষে ভোট দেন।
বিলটি পাশ হওয়াকে ব্রিটেনে কয়েক দশকের অন্যতম বড় সামাজিক পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। সমর্থকদের মতে, এটি মানবিকতা, মর্যাদা এবং দেহগত স্বাধিকার নিশ্চিত করার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
যা আছে নতুন আইনে
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী শুধু ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে, যাদের ছয় মাস বা তার কম সময় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আছে এমন রোগে আক্রান্ত রোগীরাই এই পদ্ধতির জন্য বিবেচিত হবেন। মরণঔষধটি একজন চিকিৎসক সরবরাহ করলেও, প্রয়োগ করবেন রোগী নিজেই।
সিদ্ধান্তটি কার্যকর করতে হবে দুই চিকিৎসক এবং একটি প্যানেলের সম্মতিক্রমে যেখানে থাকবেন একজন সমাজকর্মী, একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং একজন আইন বিশেষজ্ঞ।
বিলটি লেবার পার্টির সাংসদ কিম লিডবিটার প্রস্তাব করেন। এটি পার্লামেন্টে দলীয় অবস্থানের পরিবর্তে বিবেকের ভিত্তিতে ভোটাভুটির মাধ্যমে পাস হয়।
বাকি আছে আনুষ্ঠানিকতা
এখন বিলটি যাবে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউজ অব লর্ডসে। যদিও তারা এতে সংশোধনী আনতে পারে, তবে হাউস অব কমন্সের নির্বাচিত সদস্যদের সমর্থন থাকায় বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
আছে পক্ষ-বিপক্ষের যুক্তি
সমর্থকদের মতে, এই আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মৃত্যুর সময়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে এবং যারা বিদেশে (যেমন সুইজারল্যান্ড) গিয়ে গোপনে নিজের প্রাণনাশ করে থাকেন, তারা দেশে থেকেই মর্যাদার সঙ্গে জীবন শেষ করার সুযোগ পাবেন।
বিলটির প্রস্তাবকারী কিম লিডবিটার বলেন, এটা বাঁচা বা মরার মধ্যে কোনো পছন্দ নয়। এটি কেবল মরণব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর ধরন বেছে নেওয়ার অধিকার।
অন্যদিকে, বিলটির বিরোধীদের আশঙ্কা এটি দুর্বল ও প্রান্তিক মানুষদের জন্য এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কেউ কেউ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এর বিরোধিতা করেছেন, তবে বেশিরভাগই ব্যবহারিক সমস্যার দিকে আঙুল তুলেছেন।
লেবার পার্টির প্রবীণ আইনপ্রণেতা ডায়ান অ্যাবট বলেন, এই বিল পাস হলে এমন অনেক মানুষ প্রাণ হারাবেন, যাদের তা প্রয়োজন ছিল না এবং তারা হবেন আমাদের সমাজের সবচেয়ে দুর্বল ও প্রান্তিক অংশের প্রতিনিধি।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলে ইরানের সর্বশেষ হামলায় আহত ১৭, তিনজনের অবস্থা গুরুতর
হয়েছিলো প্রাথমিক ভোট
এই বিষয়ে গত বছরের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো একটি প্রাথমিক ভোট হয় এবং এর পর মাসব্যাপী কমিটি পর্যায়ে আলোচনা চলে। এ সময় আইনটি ঘিরে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিক ও জনমনে ব্যাপক মতভেদ তৈরি হয়। বিলটি পাস হওয়ার কয়েকদিন আগেই ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে গর্ভপাতকে নারীর জন্য অপরাধমুক্ত ঘোষণা করে, যদিও ২৪ সপ্তাহের পর চিকিৎসকদের জন্য এখনও শাস্তির বিধান রয়েছে।
স্বেচ্ছামৃত্যু যেসব দেশে বৈধ
যদি এই আইন কার্যকর হয়, তবে যুক্তরাজ্য সেই কিছু দেশ ও রাজ্যের তালিকায় যুক্ত হবে যেখানে স্বেচ্ছামৃত্যু বৈধ। যেমন: কানাডা, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, কিছু ইউরোপীয় দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি অঙ্গরাজ্য।