২৮ বছরেও বিচারের মুখ দেখেনি যুবদল নেতা মোশাররফ হত্যা মামলা
- ২০ জুন ২০২৫, ২০:২১
ঘটনাটি ১৯৯৭ সালের ৪ আগস্টের। রাজধানীর রমনা থানাধীন পরীবাগ এলাকায় নির্মমভাবে খুন হন যশোরের শার্শা উপজেলার ভবেরবেড় গ্রামের তরুণ যুবদল নেতা মোশাররফ হোসেন। ঘাতকরা তাকে জবাই করে এবং মাথায় গুলি চালিয়ে হত্যা করে। সময়ের বিবেচনায় এটি ছিল একটি চাঞ্চল্যকর রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। কিন্তু দীর্ঘ ২৮ বছর পার হলেও আজও এই নৃশংস হত্যার কোনো বিচার হয়নি। মামলায় নেই দৃশ্যমান অগ্রগতি, গ্রেপ্তার হয়নি কোনো আসামি।
নিহত মোশাররফ হোসেনের বড় ছেলে নিপুণ হোসেন তখন ছিলেন শিশু। আজ তিনি প্রাপ্তবয়স্ক, কিন্তু বাবার স্মৃতি ও বিচার না পাওয়ার বেদনা যেন আরও তীব্র। তিনি বলেন, ‘আমরা তখন কিছুই বুঝিনি। এখন বুঝি, কত বড় শোক বয়ে বেড়াচ্ছি। এত বছরেও বিচার না পাওয়ায় আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। আমি আমার বাবার খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
নিপুণ জানান, বাবার হত্যার পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তার মা। ‘মা আজও পুরোপুরি সুস্থ নন। মাঝে মাঝেই তাকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে দেখা যায়। আমাদের পরিবারটা একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে।’
স্থানীয়রা বলছেন, মোশাররফ হোসেন ছিলেন একজন জনপ্রিয়, সংগঠিত ও সৎ রাজনীতিক। স্থানীয় রাজনীতিতে তার ক্রমবর্ধমান প্রভাব অনেকের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিল। ধারণা করা হয়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় তার পরিবার যেমন ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত, তেমনি সমাজ পেয়েছে এক অনিরসনযোগ্য ক্ষত।
আরও পড়ুন: ‘ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি’ বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন ঢাবি ছাত্রদল সেক্রেটারি
এলাকাবাসীর একজন বলেন, ‘২৮ বছর ধরে একটি পরিবার বিচারপ্রার্থী। অথচ রাষ্ট্রীয় কাঠামো একফোঁটাও নড়েনি। এটা শুধু একজন মোশাররফের হত্যার বিচার বিলম্ব নয়, এটি আমাদের বিচার ব্যবস্থার হতাশাজনক প্রতিচ্ছবি।’
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের জোর দাবি—আসামিদের পুনরায় শনাক্ত করে দ্রুত তদন্ত শেষ করা হোক এবং খুনিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
এই রকম রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচারহীনতা শুধু একটি পরিবারের নয়, একটি জাতির মননে ভয়ংকর বার্তা পাঠায়—বিচারহীনতা হলো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার সমান। এখনই সময় রাষ্ট্রকে এগিয়ে এসে মোশাররফ হোসেন হত্যা মামলার পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার।