শাকিলের মৃত্যু আত্মহত্যা নয়, মবের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের নিষ্ক্রিয়তার ফল: ছাত্র মৈত্রী
- ১১ জুন ২০২৫, ১০:২৬
মানিকগঞ্জে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের শাকিল আহমেদ (২৪) নামে এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার দক্ষিণ জামশা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্বজনদের দাবি অনুযায়ী, ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে এক ব্যক্তির পোস্টে মন্তব্যের জেরে তাকে স্থানীয় কিছু লোক হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি দেখানোর কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তার এ মৃত্যুর ঘটনায় মবভায়োলেন্সকে দায়ী করে এর তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
সংগঠনটি বলছে, শাকিলের মৃত্যু আত্মহত্যা নয় বরং রাষ্ট্রীয় মদদে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জায়গায় রাষ্ট্রের নিষ্ক্রিয়তার প্রেক্ষিতে মব তৈরি করে নানা ট্যাগ দিয়ে ভিন্ন মত ও পথের মানুষকে হত্যাযোগ্য করে তোলা হয়েছে৷
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা ও সাধারণ সম্পাদক সামি আব্দুল্লাহ্ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, গতকাল ৯ জুন দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাকিল ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে ক্রমাগত হুমকির মুখে আত্মহত্যা করেছে বলে জানা যায়। মৃত্যুর আগে তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়ে যান, তার সাথে কতিপয় ব্যক্তির ভুল বোঝাবুঝির জের ধরে তার বিরুদ্ধে অনলাইন মব লেলিয়ে দেওয়া হয় এবং তার পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়। ১ বছরের পুরোনো একটি ফেসবুক কমেন্টকে কেন্দ্র করে তার নামে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি ফেসবুকে বেশ কয়েকবার ক্ষমা চেয়েও মবের হাত থেকে রক্ষা পান নি। শাকিল মব ভায়োলেন্স এড়ানোর জন্যই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
আরও পড়ুন: এক বছর আগে ফেসবুকের কমেন্টে কী লিখেছিলেন শাকিল? আত্মহত্যার আগে ৪ স্ট্যাটাসে যা ছিল
তারা বলেন, শাকিল চিত্রকরের মৃত্যুর সাথে জড়িত সকলকে অনতিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে। শাকিলের মৃত্যু আত্মহত্যা নয় বরং রাষ্ট্রীয় মদদে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জায়গায় রাষ্ট্রের নিষ্ক্রিয়তার প্রেক্ষিতে মব তৈরি করে নানা ট্যাগ দিয়ে ভিন্ন মত ও পথের মানুষকে হত্যাযোগ্য করে তোলা হয়েছে৷ নব্য ধর্মীয় ফ্যাসিস্টরা তৌহিদী জনতার নাম ব্যবহার করে বারবার আদিবাসীদের উপর, নারীদের উপর, নাদিরা ইয়াসমিনসহ ভিন্ন মতের মানুষদের বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে তাদের হত্যাযোগ্য করে তুলেছে এবং তাদের উপর হামলার সম্মতি উৎপাদন করে চলছে। এসকল হামলায় রাষ্ট্রের সচেতন নিষ্ক্রিয়তার ধারাবাহিকতাই শাকিল হত্যাকাণ্ডের কারণ।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে এভাবে মব তৈরি করে ভিন্ন মত ও পথের মানুষের উপর আক্রমণ '২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের গণআকাঙ্ক্ষার পরিপন্থি। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রেজিমেও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ ও বিভিন্ন অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ তুলে মব তৈরি করে কাউকে হত্যাযোগ্য করার যে অপতৎপরতা তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের আপামর জন-সাধারণকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনের পর নব্য ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের যে উত্থান দেখা যাচ্ছে তা প্রতিহত করার আহ্বান জানাই।