কোরবানির মাংস প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া নিরাপদ

কোরবানির মাংস
কোরবানির মাংস © সংগৃহীত

কোরবানির ঈদ মানেই আনন্দ আর ভুরিভোজের এক অনন্য সম্মিলন। বিরিয়ানি, রোস্ট, কাবাব—নানান পদের গরু-খাসির মাংসে সেজে ওঠে ঈদের খাবার টেবিল। তবে আনন্দের এই উৎসবে অনেকেই অসচেতনভাবে অতিরিক্ত মাংস খেয়ে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন। অথচ কিছু সতর্কতা মেনে চললে ঈদের আনন্দ উপভোগ করা যায় সুস্থ দেহেই।

লাল মাংস: উপকারিতাও আছে, ঝুঁকিও আছে
গরু, খাসির মতো লাল মাংস প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ভিটামিন বি১২-এর ভালো উৎস। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, রক্ত গঠন, হাড় ও পেশি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে অতিরিক্ত গ্রহণ করলে বাড়তে পারে কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে, প্রক্রিয়াজাত মাংস ও অতিরিক্ত লাল মাংস ক্যানসার ঝুঁকি বাড়ায়। এনএইচএস (NHS)-এর মতে, প্রতিদিন ৯০ গ্রামের বেশি লাল মাংস খেলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে মাংস খাওয়া কতটা নিরাপদ
প্রতিদিন মাংস খাওয়ার পরিবর্তে সপ্তাহে ২ দিন, সর্বোচ্চ ৩–৫ বেলা খাওয়া নিরাপদ। প্রতি বেলায় ১৬–২৬ গ্রাম মাংস (২–৩ টুকরা) খাওয়া যেতে পারে। মোট মাংস যেন সপ্তাহে ৫০০ গ্রাম না ছাড়ায়। বয়স ও শারীরিক অবস্থাভেদে মাংসের পরিমাণ একজন সুস্থ ৫০ কেজি ওজনের ব্যক্তির প্রতিদিন প্রোটিন প্রয়োজন ৫০ গ্রাম। কিডনি রোগীরা খাবেন তার অর্ধেক ২৫ গ্রাম। গর্ভবতী বা মাসিককালীন নারীদের জন্য এই চাহিদা বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে থাকে ২৬ গ্রাম প্রোটিন ও ২ গ্রাম ফ্যাট।

চর্বিবিহীন মাংস খাওয়ার গুরুত্ব
বিশেষজ্ঞদের মতে, গরুর শরীরের 'রাউন্ড' (Round) এবং 'সিরলইন' (Sirloin) অংশে চর্বি কম। এসব অংশে চর্বির পরিমাণ ৪.২–৮.২ গ্রাম, যেখানে মুরগির থানের মাংসে তা ৯.২ গ্রাম। তাই মাংসের দৃশ্যমান চর্বি ফেলে চর্বিমুক্ত অংশ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

মাংস কিভাবে রান্না করলে ঝুঁকি কমবে
রান্নার আগে মাংসের চর্বি ভালোভাবে কেটে ফেলুন। ছোট টুকরো করে কাটলে চর্বি কমে যায়। সেদ্ধ করে প্রথম পানি ফেলে দিন, চর্বি ও অতিরিক্ত সোডিয়াম কমাতে সহায়ক। কম তেলে, ঝোল ঝোল করে রান্না করুন। ঘি, ডালডা, মাখন না ব্যবহার করাই ভালো। রান্নায় ভিনেগার, লেবুর রস বা টক দই ব্যবহার করলে ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে। গ্রিল, শিক কাবাব বা জালি কাবাব পদ্ধতিতে রান্না করে খেলে চর্বি কমে যায়। সবজির সঙ্গে মিশিয়ে রান্না করুন, যেমন: পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, বাঁধাকপি।

আরও পড়ুন: মস্তিষ্কের ক্ষতি ডেকে আনছে রোজকার এই খাবারগুলো

অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে যে বিপদ হতে পারে
অতিরিক্ত সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।
কোলেস্টেরল হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
হজমে সমস্যা, ডায়রিয়া, বমি বা গ্যাস্ট্রিক হতে পারে।

যাদের জন্য মাংসে সতর্কতা জরুরি
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাংস খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ঈদের আনন্দ উপভোগ করুন, তবে সচেতনতা ও পরিমিত খাওয়ার মধ্য দিয়ে। তাহলে শরীর থাকবে সুস্থ, মন থাকবে প্রফুল্ল। কোরবানির মূল শিক্ষা কেবল পশু জবাই নয়, বরং নিজের সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই।