দীর্ঘদিনের বকেয়া
লবণশ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিতে দুশ্চিন্তায় রাজারহাটের চামড়া ব্যবসায়ীরা
- যশোর প্রতিনিধি
- ০৪ জুন ২০২৫, ১৬:০১
দীর্ঘদিনের বকেয়া আদায় হয়নি। সেই সঙ্গে বেড়েছে লবণের দাম ও শ্রমিকের মজুরি। তাই এবার ঈদুল আজহায় চামড়ার ব্যবসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম যশোরের রাজারহাটের চামড়া ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, সমস্যা কাটিয়ে উঠতে দরকার ঋণ সুবিধা। তবে বাজার স্থিতিশীল ও চামড়া পাচার বন্ধে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে চামড়া সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণে লিল্লাহ বোডিংগুলোতে বিনামূল্যে লবণ দেওয়ার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম চামড়ার হাট যশোরের রাজারহাট। খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী নাটোরের বড় ব্যবসায়ীরা চামড়া বেচাকেনা করেন এখানে। হাটটিকে ঘিরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ব্যবসায়ী ব্যবসা করেন। ঈদ-পরবর্তী প্রায় শতকোটি টাকার চামড়া হাতবদল হয় এখানে। কিন্তু ট্যানারি মালিক ও মহাজনদের কাছে থাকা বকেয়া আদায় না হওয়ার পাশাপাশি হঠাৎ লবণের মূল্যসহ শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিতে চামড়ার ব্যবসা নিয়ে হতাশ তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বকেয়া টাকা প্রাপ্তির পাশাপাশি ঋণ সুবিধা পেলে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারতেন। একই সঙ্গে বাজার চাঙা করতে ইউরোপের বাজার ধরতে সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তারা।
এই হাটে তিন দশকের বেশি সময় ধরে ব্যবসা করে আসছেন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ব্যবসার অবস্থা এবারও খারাপ হবে মনে হচ্ছে। গত বছরের ট্যানারি মালিকদের প্রতিনিধিদের কাছে চামড়া দিছিলাম, সেগুলোর টাকা এখনো পায়নি। তার পরও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এবারও প্রস্তুতি নিচ্ছি। সরকার এবার গরুর ৫৫ থেকে ৬০ বর্গ ফুট বেঁধে দিয়েছে, সেই দামে চামড়া কেনা যাবে না। ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার কাঁচা চামড়া কিনলে এর পরে লবণ, শ্রমিক, পরিবহন খরচে দাম হয়ে দাঁড়ায় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। এরপর আমরা ট্যানারি মালিকদের কাছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার ওপরে দাম পায় না। এতে খরচেই উঠে না। ফলে এবার চামড়া খুব হিসাব করে কিনতে হবে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে চামড়া কিনা কঠিন।’
আরও পড়ুন: শেখ মুজিব মাঠে ছিলেন না, তাজউদ্দীন নেতৃত্ব দিয়েও স্বীকৃতি বাতিল হয় কীভাবে: সারজিস
রাকিবুজ্জামান রাকিব নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃখের খবর হলো, প্রতি কোরবানি ঈদের সপ্তাহ খানিক আগে থেকে লবণের দাম দ্বিগুণ হয়। এবারও তার ব্যতয় ঘটেনি। হঠাৎ প্রতি বস্তায় ৫০০ টাকা দাম বেড়েছে। সেই সিন্ডিকেট রয়েই গেছে, সরকার ভাঙতে পারেনি। আমাদের দাবি, ট্যানারি মালিকদের কোটি কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। কিন্তু এই রকম না দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-ফড়িয়াদের যদি অল্প সুদে ঋণ দিতো, তাহলে এই ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারত।’
যশোরের বৃহত্তর চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আকিল আহমেদ জানান, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে এবার চামড়া কিনলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হবে। কেননা, ট্যানারি মালিকরা বাছাই করে চামড়া নিয়ে থাকেন। তারা দাম দিতে চান না। আবার কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ট্যানারি মালিকদের কাছে কয়েক কোটি টাকা বকেয়া পাবেন। সেই টাকা যদি তারা না পান, তাহলে তারা চামড়া কিনতে সমস্যার সম্মুখীন হবেন। ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ীদের রক্ষায় সরকারকে স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ দিতে। কিন্তু সরকার ট্যানারি মালিকদের এ সুবিধা দিচ্ছে।
এদিকে সরকার চামড়ার দাম বেঁধে দিলেও ক্রয়-বিক্রয়ে সেই দামে ব্যবসায়ীদের মধ্যে তেমন সাড়া থাকে না। ফলে স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা মনে করেন, এ সময়টায় চামড়ার দাম ভারতে একটু বেশি থাকবে। সে জন্য বেশি মুনাফার আশায় চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতে চামড়া পাচার রোধে শার্শা ও বেনাপোল সীমান্তে সতর্কতা জারি করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা।
আরও পড়ুন: আন্দোলনের ডাক দিয়েও শাহবাগে অনুপস্থিত এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা
যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, প্রতিনিয়ত আমাদের টহল অব্যাহত। ঈদের মৌসুদে সেটা আরও জোরদার করা হবে। বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে বিজিবি পোস্টে কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে।
একই সঙ্গে চামড়ার বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে ও সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘লবণকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে জেলায় ৩৭৭ টি লিল্লাহ বোডিংয়ে জন্য ২৫০ মেট্রিক টন লবণ ক্রয় করেছি। বিনামূল্যে এসব লিল্লাহ বোডিংয়ে বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া চামড়া নিয়ে যেন কোনো নৈরাজ্য না হয়, চামড়া যেন পচে না যায়, শৃঙ্খলার সঙ্গে যাতে বেচাকেনা হয়, সেই ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা আছে।’