কোরবানির জন্য কেনা পশু বিক্রি করা কি জায়েজ? জানুন শরীয়তের বিধান কি
- ১৭ জুন ২০২৫, ০১:৫১
কোরবানি মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম মাধ্যম। তবে কোরবানির পশু কেনা-বেচা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন দেখা দেয়। কেউ কেউ কোরবানির জন্য পশু কেনার পর তা বিক্রি করে দেন কিংবা বিক্রি করার ইচ্ছা করেন নানা কারণে। কিন্তু শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি কি বৈধ? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের কোরবানির উদ্দেশ্য, পশু কেনার পর তার মর্যাদা এবং বিক্রি সংক্রান্ত ইসলামী বিধান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি।
কোরবানির নিয়তে পশু কেনার পর তার বিধান
যখন কেউ কোরবানির নিয়তে কোনো পশু ক্রয় করে, তখন সেই পশু শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে নির্ধারিত হয়ে যায়। শরিয়ত বলছে, এই পশু এখন ইবাদতের অংশ এবং ইচ্ছামতো তা বিক্রি করা বৈধ নয়। ইসলামী ফিকহ গ্রন্থে একবাক্যে বলা হয়েছে, ‘কোরবানির জন্য নির্ধারিত পশু বিক্রি করা জায়েজ নয়। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/২৯৫; আদদুররুল মুখতার: ৬/৩১৮)
যদি পশু কোরবানির অযোগ্য হয়ে যায়
জীবজন্তু যেমন তেমন নয়, অসুস্থতা, জখম বা অন্য কোনো কারণে পশুটি যদি কোরবানির অযোগ্য হয়ে পড়ে, তখন কী হবে? ইসলামী বিধান বলছে, তখন ওই পশুটি বিক্রি করে তার সমমূল্যের অথবা উত্তম গুণমানের অন্য একটি পশু কিনে কোরবানি দিতে হবে। তবে লক্ষ্যণীয়, বিক্রয়লব্ধ অর্থ ব্যক্তি নিজের অন্য কোনো প্রয়োজনে খরচ করতে পারবে না। এ অর্থ দিয়ে অবশ্যই নতুন কোরবানির পশু কিনতে হবে। (দ্রষ্টব্য: রদ্দুল মুহতার: ৬/৩১৮)
কোরবানির পশুর অংশ বিক্রির বিধান
অনেকে কোরবানির পর পশুর মাংস, চামড়া বা চর্বি বিক্রির চিন্তা করেন। আবার কেউ কেউ কসাইয়ের পারিশ্রমিক মেটাতে এসব বিক্রি করে দেন। শরিয়তের দৃষ্টিতে এগুলোও বৈধ নয়। হাদিসের আছে, হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) আমাকে তার কোরবানির উটগুলোর দায়িত্ব দিলেন এবং বললেন, ‘তাদের গোশত, চামড়া ও কাপড় গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দাও; তবে কসাইকে এসব থেকে কিছু দিয়ো না। আমরা চাইলে নিজের পক্ষ থেকে পারিশ্রমিক দেব।’ (সহিহ বুখারি: ১৭১৭, সহিহ মুসলিম: ১৩১৭)
অন্য হাদিসে আরও কঠোরভাবে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোরবানির চামড়া বিক্রি করে, তার কোরবানি নেই।’ (মুসনাদে আহমদ: ৪/৩০৩)
আরও পড়ুন: ঋণগ্রস্তদের কোরবানির ব্যপারে ইসলামের যে বিধান
তাহলে কী করণীয়
কোরবানির জন্য পশু কেনার পর তা বিক্রির চিন্তা করা উচিত নয়। যদি বিক্রি করতেই হয়, তাহলে সেটা হবে শুধুমাত্র পশুটির অযোগ্যতা প্রমাণিত হলে এবং তার সমমূল্যে নতুন পশু কিনতে হবে। কোরবানির কোনো অংশ—মাংস, চামড়া বা চর্বি—বিক্রি করা যাবে না। কসাইয়ের পারিশ্রমিকও এসব থেকে দেওয়া যাবে না, বরং আলাদা অর্থ থেকে দেওয়া উচিত। যদি কেউ ভুল করে কোরবানির কোনো অংশ বিক্রি করে ফেলে, তবে তা সদকা করে দিতে হবে।
কোরবানি শুধুই একটি সামাজিক অনুষ্ঠান নয়, এটি একান্তই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একটি পবিত্র ইবাদত। তাই কোরবানির নিয়ম-কানুন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখা এবং তা যথাযথভাবে পালন করাই আমাদের কর্তব্য।