এক কাপ চায়ের সঙ্গে বিষ? জানুন প্লাস্টিক কাপে চা খাওয়ার ক্ষতি

প্লাস্টিকের কাপ
প্লাস্টিকের কাপ © সংগৃহীত

চায়ের দেশ বাংলাদেশ। মোড়ের চা দোকানে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা না হলে যেন আড্ডা পূর্ণতা পায় না। এই চা এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরিবেশিত হচ্ছে রঙিন, পাতলা ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের কাপে। কিন্তু জানেন কি, সেই কাপেই লুকিয়ে আছে নীরব ঘাতক?


মাইক্রোপ্লাস্টিক: এক অদৃশ্য বিষবাষ্প

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্লাস্টিক কাপে যখন গরম চা বা কফি ঢালা হয়, তখন অতিক্ষুদ্র মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা তরলে মিশে যায়। এসব কণা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে সৃষ্টি করতে পারে ক্যান্সার, হরমোনের সমস্যা, কিডনি ও হৃদ্‌রোগ, এমনকি প্রজনন ক্ষমতা হ্রাসের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি।

আরও পড়ুন: রাতের সঙ্গী হোক বই, বদলে দিন ঘুমের অভিজ্ঞতা

গবেষণায় যা পাওয়া গেছে

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্লাস্টিক কাপের চা বা পানীয়তে ক্রোমিয়াম, লেড, ক্যাডমিয়ামসহ বিভিন্ন ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যেগুলো শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। একই পানীয় কাচের গ্লাসে রেখে পরীক্ষা করলে এসব উপাদান মেলেনি।

স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা ভয়াবহ?

বিসফেনল-এ (BPA) নামক একটি রাসায়নিক প্লাস্টিক থেকে নির্গত হয়। এটি ইস্ট্রোজেন হরমোনকে বাধা দেয়, নারীদের প্রজনন ক্ষমতা কমায় এবং পুরুষদের শুক্রাণু উৎপাদন হ্রাস করে। ক্রোমিয়াম ও লেড কিডনি ও লিভারের স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে। শিশুরা এবং গর্ভবতী নারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

শুধু স্বাস্থ্য নয়, পরিবেশও হুমকির মুখে

প্লাস্টিক কাপ পরিবেশে ৫০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। এটি মাটি, পানি ও বাতাসে মাইক্রোপ্লাস্টিক ছড়িয়ে বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস করে। বাংলাদেশে বছরে ৮৬,৭০০ টনের বেশি ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয় যার অধিকাংশই আসে খাবার প্যাকেজিং থেকে।

আরও পড়ুন: ঘন ঘন ক্ষুধা লাগে? জেনে নিন নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উপায়

চা-কফি খাওয়ার বিকল্প ব্যবস্থা

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডা. শাহনূর শারমিন ও সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ডা. হাসান মোস্তফার জানান, সামান্য সচেতনতাই আপনাকে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে। গরম তরল রাখবেন সিরামিক, কাচ, মাটি বা ফুড গ্রেড প্লাস্টিক পাত্রে। চা-কফি খেতে গেলে নিজস্ব কাপে নিয়ে নিন। ডিসপোজেবল প্লাস্টিকের বদলে ব্যবহার করুন বাঁশ, কাগজ বা মাটির কাপ। 

চা খাওয়া আমাদের সংস্কৃতির অংশ, তবে তার মাধ্যমে শরীরে বিষ ঢুকিয়ে নয়। এখন সময় হয়েছে এই “নীরব বিষের কাপ” বর্জনের। পরিবর্তন শুরু হোক একটি কাপ থেকেই।