চা, কফি খাওয়া নিয়ে বিভ্রান্তি? জেনে নিন কোনটি বেশি উপকারী

কফি ও চা
কফি ও চা © সংগৃহীত

চা আর কফি—দুটিই পৃথিবীব্যাপী জনপ্রিয় পানীয়। বিশেষ করে, সকালে ঘুম ভাঙাতে কিংবা কাজের ফাঁকে সতেজতা আনতে। তবে অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান, কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর বা উপকারী? চলুন দেখে নেওয়া যাক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোন পানীয়টি কার জন্য বেশি উপকারী।

ক্যাফেইন মাত্রা
প্রতি কাপ কফিতে প্রায় ৯৫-২০০ মি.গ্রা ক্যাফেইন থাকে, যা দ্রুত মনোযোগ বাড়ায়, ক্লান্তি কমায়। প্রতি কাপ চাতে ৩০-৭০ মি.গ্রা. ক্যাফেইন থাকে। তবে এতে এল থেনাইন থাকে, যা মনকে শান্ত রেখে ফোকাস বাড়ায়। কফি ত্বরিত জাগরণে ভালো, কিন্তু চা দীর্ঘস্থায়ী মনোযোগে সহায়ক।

হৃদ্‌যন্ত্র ও রক্তচাপ
অতিরিক্ত কফি উচ্চ রক্তচাপ বাড়াতে পারে, যদিও নিয়মিত সীমিত গ্রহণ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। অন্যদিকে চা বিশেষ করে সবুজ চা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা হৃদ্‌যন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে। কফির তুলনায় হৃদ্‌যন্ত্রের জন্য চা তুলনামূলকভাবে বেশি নিরাপদ ও উপকারী।

আরও পড়ুন: লিচু যখন শরীরের জন্য বিষ হয়ে ওঠে

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
চা ও কফি—দুটোতেই রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। চায়ে ক্যাটেচিনস, কফিতে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। যা ক্যানসার প্রতিরোধ ও কোষের বয়স ধীরে আনে। দুটোতেই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, তবে সবুজ চায়ের (গ্রীন টি) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি কার্যকর বলে বিবেচিত।

হজম ও মানসিক চাপ
চা বিশেষ করে হালকা ব্ল্যাক বা হ্যাবসান চা হজমে সাহায্য করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। অন্যদিকে কফি অনেক সময় খালি পেটে অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক বাড়াতে পারে। হজমের সমস্যা থাকলে চা বেছে নেওয়াই ভালো।

ঘুমের প্রভাব
সন্ধ্যার পর কফি খেলে ঘুমে সমস্যা হতে পারে, কারণ এতে ক্যাফেইন বেশি। বিশেষত ক্যাফেইনমুক্ত হার্বাল চা ঘুমের আগে পান করলে ভালো ঘুম হয়। রাতে কফির চেয়ে চা বেশি উপযোগী।

আরও পড়ুন: ভিটামিনের অভাব ওষুধ খেয়ে মেটাচ্ছেন? লাভের চেয়ে ক্ষতি হতে পারে বেশি

মিরপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী বলেন, চা ও কফি উভয় পানীয়তেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে এবং ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালস দূর করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এ দুটি পানীয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চা ও কফিতে বিদ্যমান ক্যাফেইন মস্তিষ্কের পারকিনসন্স রোগ প্রতিহত করতে সহায়ক এবং ক্লান্তি দূর করে শরীর ও মনকে সতেজ রাখে। বিশেষ করে কফি ও গ্রিন টি স্তন ও প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়াও এসব পানীয় রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে, ত্বককে মসৃণ করতে এবং হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে বলে তিনি জানান।

চা আর কফি—দুটিই আপনার স্বাস্থ্যের বন্ধু হতে পারে, যদি আপনি তা পরিমিত ও সঠিক সময়ে পান করেন। চাপা মানসিক চাপ বা ঘুমের সমস্যা থাকলে চা ভালো সঙ্গী। অন্যদিকে কাজে উদ্যম আর মনোযোগ চাইলে কফি হতে পারে আপনার সহায়ক। অতএব, আপনার শারীরিক চাহিদা ও দৈনন্দিন রুটিন বুঝেই বেছে নিন—চা বা কফি অথবা দুটোই, সঠিক পরিমাণে!