ফেসবুকে মন্তব্য করে শিক্ষক বরখাস্ত, যে ব্যাখ্যা দিল মন্ত্রণালয়

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় © সংগৃহীত

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিরূপ মন্তব্যের জেরে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকের প্রকৃত ঘটনা স্পষ্ট করতে বিবৃতি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় বলছে, সম্প্রতি ‘উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, চার মাস পর বরখাস্ত শিক্ষক’ শিরোনামে জাতীয় কয়েকটি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এই প্রতিবেদনে বরখাস্ত হওয়া সহকারী শিক্ষক মনিবুল হক বসুনীয়ার বক্তব্য মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর, এটি জনমনে ভুল বার্তা দিচ্ছে। তাই প্রকৃত ঘটনা স্পষ্ট করতে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার আবুল কাশেম বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনিবুল হক বসুনীয়া ১২ মে ২০২৫ তারিখে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে একটি কুরুচিপূর্ণ ও শিষ্টাচারবহির্ভূত পোস্ট দেন। সেখানে তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিখনঘণ্টা বৃদ্ধি, শনিবার স্কুল খোলা রাখা এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে অশালীন ও অবমাননাকর মন্তব্য করেন।

আরও পড়ুন: উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে বিরূপ মন্তব্য, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক বরখাস্ত

এই পোস্টে ১০ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রদান অনুষ্ঠান ও শিক্ষা সপ্তাহ উদ্বোধনে ঘোষিত শিক্ষানীতিকে আক্রমণ করে ভাষা প্রয়োগ করা হয়, যেখানে তিনি বলেন, এইযে শিখন ঘণ্টা বাড়াতে চাচ্ছে কেডা এইডা? এইডা আবার দেকতাসি শনিবারও স্কুল খোলার কতা কইতাসে।

তিনি আরো লেখেন, এইগুলারে কই থেকে ধইর‌্যা আইনা এই ডিপার্টমেন্টে বসায়? আর কারাই বা বসায়?... প্রাথমিক ডিপার্টমেন্টের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসার জন্য এরা কী কী পরীক্ষা দিয়ে তবে এসেছে? নাকি ক্যাডার-ম্যাডার হইলে যেকেউ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বোদ্ধা হয়ে যায়? এমনকি তিনি ডিজি, সচিব, উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টাকেও উদ্দেশ করে বলেন, ফাইজামো করেন সমস্যা নাই। তয় লিমিট ক্রসে যাইয়েন না।

মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ওই পোস্ট সরকারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা ২০১৯ এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একজন সরকারি শিক্ষক হিসেবে এমন বক্তব্য শুধুমাত্র অশোভন নয়, তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আরও পড়ুন: শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন কবে—জানাল মন্ত্রণালয়

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে শিক্ষকদের কর্মঘণ্টা ঠিক রেখে শনিবার বিদ্যালয় খোলা রাখা ও ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে নন-ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্টে রূপান্তর। বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে শিখন দিনের সংখ্যা অনেক কম—মোটে ১৭৯ দিন। এই প্রেক্ষাপটেই শিখনঘণ্টা বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে, যা নিয়ে মনিবুল হকের পোস্ট ছিল ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং ‘প্রশাসনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের স্পষ্ট চেষ্টা’ বলে উল্লেখ করেছে মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে জানায়, নিয়ম অনুযায়ী প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে বরখাস্ত হওয়ার পরে শিক্ষক যেভাবে মিডিয়ায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন, মন্ত্রণালয় তা ‘পুরোপুরি মিথ্যা ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিহিত করেছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনো বিভ্রান্তি না ছড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।