বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ফেসবুকে কী লিখেছিলেন নুসরাত ফারিয়া?

নুসরাত ফারিয়া
নুসরাত ফারিয়া © টিডিসি সম্পাদিত

চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঢালিউডের এই তারকাকে গ্রেপ্তারের খবরে সামাজিক মাধ্যমজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোড়ন। জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দিনগুলোতে আন্দোলনের পক্ষে সরব ছিলেন ফারিয়া। সামাজিক মাধ্যমে একাধিক পোস্টও করেছিলেন তিনি।

নুসরাত ফারিয়ার ফেসবুক ঘেঁটে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নৃশংস হামলার পর ১৭ জুলাই ফারিয়া ফেসবুকে লেখেন, ‘আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে’। ঠিক একদিন পর ফারিয়া ১৮ জুলাই পোস্ট করেন ছাত্র আন্দোলন নিয়ে। সে সময় সরকারের ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ‘গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিলের একটি ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে ফারিয়া লেখেন, ‘এর চেয়ে হতাশার কিছু নেই।’ এরপর তিনি নিয়মিত ছাত্র আন্দোলনের ছবি প্রকাশ করেন।

আন্দোলন চলাকালীন ১৮ জুলাই রাত পৌনে ৯টার পর থেকে দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ১৭ জুলাই মধ্যরাত থেকে সরকার ফোর-জি নেটওয়ার্ক বন্ধ করায় দেশের মোবাইল ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ হয়ে যায়। ব্রডব্যান্ড সংযোগ ২৩ জুলাই চালু হলেও মোবাইল ইন্টারনেট তখনও চালু হয়নি। সে সময়টাতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ফেসবুকে সক্রিয় ছিলেন ফারিয়া। আর দেশের বাইরে থাকাতেই এটা সম্ভব হয়েছে বলে তার একাধিক ঘনিষ্ঠজন দাবি করেছেন।

আরো পড়ুন: ‘কাকতাল’ ব্যান্ডদল হঠাৎ কেন বন্ধ হয়ে গেল?

১৯ জুলাই নিজের অসহায়ত্বের কথাও ফুটে ওঠে ফারিয়ার ফেসবুক পোস্টে। লেখেন, ‘২ দিন হয়ে গেল, বাংলাদেশে ইন্টারনেট নেই। দেশটি বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন। আমরা কি সত্যিই আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধান করতে পারি না? এটা এত কঠিন কেন? খুব অসহায় বোধ করছি।’

২৩ জুলাই আবারও ফারিয়া তার উৎকণ্ঠা জানান ফেসবুকে। লেখেন, ‘৬ দিন হয়ে গেল আমার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলিনি। আপনারা সবাই জানেন আমার বাবার অবস্থা তেমন ভালো না। কিন্তু আমি আমার সহকর্মী ছাত্র ভাই এবং বোনের জন্য অনুভব করি। সবার সুস্থতা ও দেশের শান্তি কামনা করছি।’

মামলার নথিপত্র থেকে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের সংশ্লিষ্ট ২৮৩ জন ও অজ্ঞাতনামা ৩-৪ শত জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেছেন এনামুল হক।

হত্যাচেষ্টা মামলার সময়কাল হলো, আন্দোলন চলাকালীন সময়। অর্থাৎ ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ সময়টার পুরোটাই ছাত্রদের আন্দোলনের পক্ষে কথা বলেছেন এ তারকা। সবচেয়ে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয় হলো, হত্যাচেষ্টার সময়কালের পুরোটা সময় দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন এ তারকা। এমনকি আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন ১৬ জুলাই কানাডার ক্যালগারিতে কনসার্ট মঞ্চে ছিলেন। নিজের গানগুলো পরিবেশনায় ব্যস্ত ছিলেন ফারিয়া। পরে ১৪ আগস্ট দেশে ফেরেন তিনি।

এর আগে রবিবার (১৮ মে) নুসরাত ফারিয়াকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নুসরাত ফারিয়ার বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় করা একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ওই মামলায় তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আসামি করা হয়। আজ সোমবার (১৯ মে) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।