পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখছেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা

গত শনিবার পাঁচ দফা দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা
গত শনিবার পাঁচ দফা দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা © ফাইল ছবি

নতুন বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়া পর্যন্ত ইউজিসির তত্ত্বাবধানে সমন্বিত কাঠামোর অধীন চলবে ঢাকার সরকারি সাত কলেজের কার্যক্রম। অন্তর্বর্তী এই ব্যবস্থায় প্রশাসকের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন ঢাকা কলেজের সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস। চাকরির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ায় চুক্তি ভিত্তিতে প্রশাসক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন তিনি। অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রধান দপ্তর হবে ঢাকা কলেজে। খুব দ্রুতই প্রশাসক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। 

সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রেক্ষিতে আপাতত নতুন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একইসঙ্গে ৫ দফা দাবির বাকি দাবিগুলোর বিষয়েও নজর রাখা হবে।

আজ রবিবার (১৮ মে) সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের প্রতিনিধি মোঃ নাঈম হাওলাদারের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাত কলেজ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের সময়ক্ষেপণের প্রতিবাদে গতকাল শনিবার একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এখান থেকে ৫ দফা দাবি উল্লেখসহ ঝুলে থাকা অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রজ্ঞাপনের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রত্যক্ষ করছি, সরকার আমাদের দাবির বিষয়টি আমলে নিয়েছে। ইতিমধ্যে অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস স্যারকে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। 

এতে আরও বলা হয়, আমরা জানতে পেরেছি, আগামীকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অধ্যাপক ইলিয়াস স্যারকে সাত কলেজের অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রশাসক করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। যেহেতু সরকার আমাদের দাবির বিষয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে, সেহেতু আমরা আগামীকাল সোমবার (১৯ মে, ২০২৫ খ্রি.) কোনো কর্মসূচি রাখছি না। আমরা সম্পূর্ণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবো। একইসঙ্গে আমরা আমাদের ৫ দফা দাবির বাকি দাবিগুলোর বিষয়েও নজর রাখবো। সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের জন্য ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন: ‘জিপিএ’ ভিত্তিক ভর্তি পদ্ধতিতেই থাকছে সরকারি পলিটেকনিক!

প্রসঙ্গত, রাজধানীর ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ হল সাত কলেজের অন্তর্ভুক্ত। এই কলেজগুলো একসময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ছিল। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এরপর থেকে পরীক্ষা নেওয়া, ফল প্রকাশসহ বিভিন্ন দাবিতে সময়–সময় আন্দোলন করে আসছিলেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সমস্যাগুলো একপর্যায়ে বৃহৎ আন্দোলনের দিকে নিয়ে যায়। অবশেষে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে এই সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

পরে সাত কলেজের জন্য ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ কারণে সাত কলেজের জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার আগে যে সাময়িক কাঠামোতে এই সাত কলেজের কাজ চলবে, তাতে এ কাঠামোর প্রধান (প্রশাসক) হিসেবে কাজ করবেন সাত কলেজের যেকোনো একজন অধ্যক্ষ। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর, ভর্তি দপ্তর, রেজিস্ট্রার দপ্তর ও হিসাব দপ্তরের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। এ নিয়ে আবারও আন্দোলনের হুমকি দেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’–এর রূপরেখা ও মনোগ্রাম প্রকাশ এবং ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি করতে হবে।

আরও পড়ুন: দুই দশক পর ফরম ছেড়ে সদস্য সংগ্রহে ইবি ছাত্রদল