গ্রীষ্ম এলেই জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের
- ১৯ মে ২০২৫, ১৭:৩৩
প্রচণ্ড দাবদাহে পুরান ঢাকার পিচঢালা রাস্তাগুলো যেন আগুন উগরে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাতাসে নেই একফোঁটা স্বস্তি, তার উপর জনাকীর্ণ অলিগলি ও ঘিঞ্জি অবকাঠামো—সব মিলিয়ে রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের জীবন যেন প্রতিদিন এক অগ্নিপরীক্ষার নাম।
গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহে নাকাল হয়ে পড়েছেন জবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই স্থায়ী আবাসিক হল, অধিকাংশ বিভাগে অনুপস্থিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শ্রেণিকক্ষ। ফলে মেস কিংবা ভাড়া বাসা থেকে প্রতিদিন ক্লাসে যেতে হয় হাজারো শিক্ষার্থীকে, যার ভোগান্তি অসীম।
এ বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “মাঝে কয়েকদিন তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির কাছাকাছি ছিল, তখন অবস্থা একেবারে অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। প্রতিদিন ক্লাস, টিউশনি, মেসে ফিরে রান্নাবান্না—সব মিলিয়ে একেবারে নাভিশ্বাস ওঠার মতো অবস্থা। গরম আর এইসব ঝক্কি যেন মরার উপর খাড়ার ঘা।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব হল না থাকায়, মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ আরও তীব্র। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, “হল না থাকায় বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়। প্রতিদিন ক্যাম্পাসে যেতে প্রায় আধাঘণ্টা সময় লাগে। এই গরমে বাসা থেকে বের হলেই মাথা ঘুরতে থাকে। ক্লাসেও জায়গা কম, এক টেবিলে চারজন গাদাগাদি করে বসতে হয়। এসি তো নেই-ই, ছোট কক্ষে ফ্যানের বাতাসেও যেন ক্লাসরুম আরও গরম হয়ে ওঠে। অনেক সময় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ি—মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব শুরু হয়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। গ্রীষ্মকাল যেন আমাদের কাছে শুধু একটি ঋতু নয়, বরং প্রতিদিনের ভোগান্তির নাম।”
আরও পড়ুন: গুলিস্থানের দলীয় কার্যালয় এলাকায় মিছিল, ‘নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগের ১১ কর্মী গ্রেপ্তার
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক জিলন বলেন, “আগে ধানমণ্ডিতে থাকতাম, জগন্নাথে ভর্তি হয়ে পুরান ঢাকায় মেসে উঠেছি। কিন্তু এখানকার ঘিঞ্জি ভবন, সরু গলি, দুর্গন্ধযুক্ত নর্দমা জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। গ্রীষ্মকালে অনিয়ন্ত্রিত লোডশেডিং, আলো-হাওয়াহীন ঘরবাড়ি জীবনযাপনকে আরও দুর্বিষহ করে তোলে। একজন মানুষের পক্ষে এখানে সুস্থভাবে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। পরিবেশ, পানি, বাতাস—সবই অস্বাস্থ্যকর। গত মাসে বাধ্য হয়ে আমি পুরান ঢাকা ছেড়েছি, একটু স্বাভাবিকভাবে বাঁচার আশায়।”
আরেক শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান বলেন, “পুরান ঢাকায় স্থানের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি, ফলে তাপমাত্রাও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। গরমকালে এখানে থাকা সত্যিই কষ্টসাধ্য। ঘিঞ্জি এলাকা, সরু গলি আর কংক্রিটের ভিড়ে বাতাস চলাচল করতে পারে না। সঙ্গে আছে লোডশেডিং আর পানির সমস্যাও।”
পুরান ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশজুড়ে পুরনো কংক্রিটের ভবন, অপ্রতুল সবুজ এলাকা, আর অসহনীয় যানজট। রাস্তায় রিকশা আর বাসের ভিড়ে দমবন্ধ পরিবেশ, তার ওপর ধুলাবালি ও ঘামে ভেজা মানুষের হাহাকার মিলিয়ে পরিবেশ আরও দুঃসহ হয়ে ওঠে।
এই বাস্তবতায় গ্রীষ্মকাল জবির শিক্ষার্থীদের কাছে শুধুই একটি ঋতু নয়—এ যেন প্রতিদিনের সংগ্রাম, ক্লান্তি আর স্বস্তিহীনতার আরেক নাম। জরুরি হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ, শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা এবং সাশ্রয়ী আবাসনের সুযোগ সৃষ্টি। অন্যথায়, প্রতিবছর গ্রীষ্মকাল শিক্ষার্থীদের জীবনে একটি অতিরিক্ত বোঝা হয়ে ফিরে আসবে—নিয়মিতই কেড়ে নেবে তাদের স্বস্তির শেষ বিন্দুটুকু।