তিতুমীরের এক বিভাগে ৮০০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৪ শিক্ষক, কাটে না সংকট

সরকারি তিতুমীর কলেজ
সরকারি তিতুমীর কলেজ © ফাইল ফটো

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজে শিক্ষক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগে ৮০০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন মাত্র চারজন শিক্ষক। অন্যদিকে পরিসংখ্যান ও সাইকোলজি বিভাগে ২৮০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র দু’জন করে। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যায় শীর্ষস্থানীয় হলেও প্রতিষ্ঠানটিতে যেন সংকটের শেষ নেই। যাতায়াতের জন্য নেই পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা। লাইব্রেরীতে প্রয়োজনীয় বই না থাকা কিংবা বেহাল ক্যান্টিনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকা বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। 

বিশ্বব্যাপী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাতের নূন্যতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক থাকতে হবে। সেই অনুপাতে সরকারি তিতুমীর কলেজের কোনও বিভাগেই পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। বেশি সংকট মনোবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগে। এক বিভাগে প্রতি ২০০ জনের জন্য আছেন একজন শিক্ষক।

সরেজমিনে জানা গেছে, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স মিলিয়ে প্রায় ৮০০ এর বেশি শিক্ষার্থী হলেও শিক্ষক মাত্র চারজন। শিক্ষকের পদ আছে আটটি। বিভাগের লেকচারার মো. ইমরান ইবনে রাজ্জাক বলেন, ‘সবকিছু সামলাতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। কলেজ প্রশাসনকে বারবার বিষয় টা অবহিত করা হয়, তাঁরাও মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন, কিন্তু কোনও কাজ হয় না। বাকি চারটি পদও পূরণ করে যদি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হতো, তাতে আমরা কিছুটা স্বস্তি পেতাম। শিক্ষার্থীদের আরও মানসম্মত সার্ভিস দেওয়া যেত।

বিশ্বব্যাপী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাতের নূন্যতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক থাকতে হবে। সেই অনুপাতে সরকারি তিতুমীর কলেজের কোনও বিভাগেই পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। বেশি সংকট মনোবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগে।

ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্টের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা ঢাকার বাইরে হওয়ায় আমার বাসা থেকে যেতে দেয়নি। অবশেষে এখানে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু এখানে শিক্ষক সংকট থাকায় আমরা মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’

পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. গালিব হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে ২৮০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে শিক্ষক মাত্র ২ জন। এ বিভাগ বাদেও গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে নন-মেজর সাবজেক্ট হিসেবে পরিসংখ্যান আছে। সবমিলিয়ে আরও হাজারখানেক শিক্ষার্থী আমাদের দুই শিক্ষককে সামলাতে হয়। সব মিলিয়ে ভয়াবহ অবস্থা। শিক্ষক সংকট থাকায় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, সময়মতো অনেক কোর্স শেষ করা সম্ভব হয় না। 

কোর্স অসমাপ্ত অবস্থায় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে তাদের রেজাল্টে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দ্রুত শিক্ষক সংকট সমস্যার সমাধান করা গেলে আমাদের জন্য উপকার হয়। আমরা অসংখ্যবার কলেজ প্রশাসনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করেছি। কিন্তু কোন সাড়া পাইনি। এমনকি সপ্তাহখানেক আগেও একটা আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি।’

সাইকোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান  ড.মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘আমাদের বিভাগে ২৮০ শিক্ষার্থী থাকলেও ২০২২ সাল থেকে এখানে দুই শিক্ষক আছি। এর আগেও অসংখ্যবার পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে, বহুবার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে, কিন্তু কাজ হয়নি। বর্তমান অধ্যাক্ষ শিক্ষক সংকট নিরসনে চেষ্টা করছেন। আগে যিনি ছিলেন তিনিও অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।’

আরও পড়ুন: রাত পেরিয়ে তৃতীয় দিনে যমুনার পাশে অবস্থান জবি শিক্ষার্থীদের

সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক সাজিয়া আফরিন খান বলেন, ‘আমি সরকারি তিতুমীর কলেজের সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টে ২০১৫ সালে এসেছি। আমি যখন আসি, তখন আমরা তিনজন শিক্ষক ছিলাম। পরবর্তীতে দুজন পিএইচডি করার জন্য চলে গেছেন। মাঝে বছরখানেক আমি একাই সব সামলিয়েছি। পরবর্তীতে ২০২২ সালে মোহাম্মদ সোলায়মান স্যার এসেছেন। শিক্ষক সংকট সমস্যাটা দ্রুত সমাধান করা গেলে আমাদের জন্য উপকার হয়।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাইকোলজি ও পরিসংখ্যান ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষক সংকট থাকায় তারা প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চান তারা। 

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ছদরুদ্দীন আহমদ বলেন, শিক্ষকের জন্য একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে, কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে এবং শিক্ষক সংকট আছে কিনা জানতে চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু একেবারেই শিক্ষক না থাকা এই দুই-তিনটা বিভাগের ব্যাপারে কোনও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। 

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কলেজ ও প্রশাসন উইং শাখার পরিচালক অধ্যাপক বি এম আব্দুল হান্নান বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া তো আমাদের কাজ না, যে আবেদন আসে তা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেওয়া আমাদের কাজ। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে কোথায় কোন বিভাগে শিক্ষক সংকট, কোথায় কাকে নিয়োগ দেওয়া যায়, এগুলো নির্ধারণ করে। এখানে আসা তো আমার বেশিদিন হয়নি। তিতুমীর কলেজ থেকে শিক্ষক সংকটের ব্যাপারে কোনও আবেদন করা হয়ে থাকলে সেটি অবশ্যই মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’