স্কুলে ছুটি ছাড়া অনুপস্থিতি বেড়েছে শিক্ষকদের

শিক্ষার্থী
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর

করোনার পর দেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকদের অনুমোদিত ছুটি ছাড়া অনুপস্থিতির প্রবণতা বেড়েছে। বিশেষত গ্রামাঞ্চল ও দুর্গম অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে এ সমস্যা সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ঝটিকা পরিদর্শনে এ তথ্যে উঠে এসেছে। 

মাউশির অধীনে বর্তমানে সারা দেশে ২০ হাজার ৩১৬ টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষকদের অনাকাঙ্ক্ষিত অনুপস্থিতি রোধে এ বিদ্যালয়গুলোতে গত বছর নভেম্বর থেকে ঝটিকা পরিদর্শন শুরু করে মাউশি। এরই ধারাবাহিকতায় গত জানুয়ারি মাসে চাঁদপুর, খুলনা, দিনাজপুর, রাজশাহী ও সিলেট অঞ্চলের ১০টি বিদ্যালয়ে গত জানুয়ারি মাসে ঝটিকা পরিদর্শনে যান মাউশির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এ সময় ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী অনুমোদিত ছুটি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে ফেব্রুয়ারি মাসে সারা দেশের ৫৫টি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন মাউশির কর্মকর্তারা। এ সময় ছুটির অনুমোদন ছাড়া বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন ৯৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী। 

মাউশির পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনুমোদন ছাড়া ছুটিতে থাকা শিক্ষকদের মধ্যে বেশির ভাগই সহকারী শিক্ষক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রধান শিক্ষক। এ ছাড়া সহকারী ইনস্ট্রাক্টরসহ অন্য কর্মচারীরাও রয়েছেন । এমনকি অনুপস্থিত এসব শিক্ষকের মধ্যে দুজন ছুটি ছাড়াই দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন। 

আরো পড়ুন: যেভাবে তৈরি হবে গুচ্ছের মেধাতালিকা

শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষকদের এধরনের অনুপস্থিতির কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) শিক্ষাক্রম ও মূল্যায়ন শাখার ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কুরবাতুল আয়েন সফদার বলেন, সারা দেশে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক ঘাটতি রয়েছে। আবার অনেক শিক্ষক অনুমোদিত বা অননুমোদিত ছুটিতে থাকেন। এতে একটি শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে ধারাবাহিক পাঠদান ব্যাহত হয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখন ঘাটতি তৈরি হয়।

এদিকে, শিক্ষকদের এমন অনুপস্থিতি প্রতিরোধে গত ৩ এপ্রিল মাউশির অংশীজনদের সভায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভা সূত্রে জানা যায়, ঝটিকা পরিদর্শনের সময় যেসব শিক্ষক-কর্মচারী কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন, তাঁদের ঢাকায় এসে মাউশিতে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। আবার যেসব শিক্ষক ছুটি ছাড়াই দীর্ঘদিন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকদের মাউশিতে কারণ দর্শাতে ডাকা হয়েছে।

আরো পড়ুন: সাধারণ জ্ঞানের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে যা পড়বেন

এ বিষয়ে মাউশির পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. আমির হোসেন বলেন, বিদেশে যাওয়া শিক্ষকদের বিষয়ে মাউশিকে না জানানোর কারণে প্রধান শিক্ষকদের আসতে বলা হয়েছে। এসব শিক্ষক দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যখন ঢাকায় আসবেন, তখন সময় আর অর্থ দুটোই অপচয় হবে। এই ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের পাশাপাশি অন্যরাও সতর্ক হবেন।

তিনি আরও বলেন, এর আগে ২০১৯ সালে এমন ঝটিকা পরিদর্শন চালু করা হয়। এতে একসময় অননুমোদিত ছুটি প্রায় শূন্যের ঘরে চলে আসে। করোনার পর আবার শিক্ষকদের মধ্যে অনুপস্থিতির প্রবণতা বেড়েছে। তাই আবার ঝটিকা পরিদর্শন শুরু করেছি। আমরা চেষ্টা করছি, শিক্ষকরা যেন অবহেলা না করেন। শিক্ষকদের সতর্ক করাই আমাদের বড় উদ্দেশ্য।