গণরুম উচ্ছেদ ও ডাকসু নির্বাচনসহ ১০ দাবিতে উপাচার্যকে স্মারকলিপি

গণরুমের উচ্ছেদ ও ডাকসু নির্বাচনসহ ১০ দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে ছাত্রফ্রন্ট। আজ ৯ মার্চ (বৃহস্পতিবার ) সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে প্রথম বর্ষ থেকে সিট বন্টন নিশ্চিত, ডাকসু নির্বাচন, শিক্ষা ব্যয় হ্রাসসহ ১০ দফা দাবিতে ছাত্র সমাবেশ পরবর্তী উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপি ১০ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং তা উপাচার্য বরাবর শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।

স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে দফাগুলো বাস্তবায়নের জন্য ছাত্রফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। পরে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আরাফাত সাদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ। 

আরও পড়ুন: উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তিযুদ্ধে নামছে ১০ লাখ শিক্ষার্থী

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন জ্ঞান তৈরী ও চর্চার জন্যে উপযুক্ত মানবিক পরিবেশ নেই। হলে শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে থাকে। উচ্চদাম দিয়ে নিম্নমানের খাবার খায়। আদব কায়দা শেখানোর নামে ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। ক্লাসরুম সংকটের কারণে ক্লাসেও শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে বসে, পড়ানোর পরিবেশ নেই। ভালো সাউন্ড সিস্টেম নেই। 

তারা আরও বলেন, শিক্ষকরা গতানুগতিক সিলেবাসে ও উপায়ে পাঠদান করে। লাইব্রেরিগুলো ছোট পরিসরের হওয়ায় ও ৭ দিন ২৪ ঘন্টা খোলা না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা নিজ সুবিধামত পড়তে পারে না। শিক্ষা ব্যয় বাড়ছে প্রতিনিয়ত, নামে-বেনামে অতিরিক্ত ফি নেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান ডাকসুর কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসন নেই বললেই চলে। এগুলোসহ বিশ্ববিদ্যালয় আজ নানা সংকটে জর্জরিত।

তারা বলেন, অতীতে আমরা দেখেছি আন্দোলন না করলে প্রশাসন মৌলিক অধিকারগুলোও বাস্তবায়ন করে না। তাই আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সংকটসমূহ তীব্রতর হচ্ছে। এরূপ বৃহত্তর সংকটকাল দূর করতে পারবে শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ ও সংগ্রামশীল আন্দোলন।

শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি গুলোর মধ্যে রয়েছে, নতুন হল নির্মাণ করে ১ম বর্ষ থেকেই প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে সিট বন্টন নিশ্চিত করা। দখলদারিত্ত্বমুক্ত হল, গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস এবং  শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক স্বাধিনতা নিশ্চিত করা। অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে। বিভাগ উন্নয়ন ফি, হল স্থাপনা ফি সহ নামে বেনামে ফি নেয়া বন্ধ করতে হবে। সান্ধ্যকালীন কোর্স সহ সকল বানিজ্যিক কোর্স বন্ধ করতে হবে। ইউজিসির কৌশল পত্র অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় চালানো বন্ধ করা। 

প্রসাশনিক তত্ত্বাবধানে ডাইনিং চালু করে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দাও। খাবারের দাম কমাও, পর্যাপ্ত পুষ্টিমান নিশ্চিত কর। মোকাররম ও মোতাহার ভবন এলাকার অনুরূপ ক্যান্টিন স্থাপন করা। ফ্যাকাল্টিগুলোতে ক্লাসরুম সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নাও। বড় ক্লাসরুমগুলোতে সাউন্ড সিস্টেম নিশ্চিত করা সেমিনারগুলোর পরিসর বাড়িতে আধুনিক মানের জার্নাল সংগ্রহ করা আধুনিক মানের কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা। শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা। শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সামাজিক মর্যাদা ও বেতনকাঠামো নিশ্চিত করা। 

মেডিকেল সেন্টারকে আধুনিকীকরণ করা। আসন সংখ্যা বাড়াও। পর্যাপ্ত ঔষধের ব্যবস্থা করা। মেডিকেল সেন্টারের তত্ত্বাবধানে আনাসিক হলগুলোতে মেডিসিন কর্নার চালু করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা কমিয়ে উচ্চ শিক্ষা সংকোচনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পরিসর বাড়াও, সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা। ভাড়াভিত্তিক নয় নিজস্ব বাস ক্রয় করা রাত ১০ টা পর্যন্ত বাসের ট্রিপ চালু রাখা।  স্বাস্থ্য বীমার নামে হয়রানি বন্ধ করা। যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করা।