মাত্র দুই বছর আগে থেকে শুরু হওয়া টাকা দিবস যেভাবে এসেছে

টাকা
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ১ টাকার ব্যাংক নোট

একটি স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্বের অন্যতম প্রতীক হলো নিজস্ব মুদ্রা। আজ টাকা দিবস। পৃথিবীতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিবস আছে। আবার অনেক বাণিজ্যিক দিবসও আছে। টাকা দিবস বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস। ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ প্রথমবারের মতো স্বাধীন বাংলাদেশের নিজস্ব ১ ও ১০০ টাকার ব্যাংক নোটের প্রচলন হয়। তার আগে এ দেশে পাকিস্তানের ব্যাংক নোট প্রচলিত ছিল এবং মুদ্রার নাম ছিল রুপি। স্বাধীন বাংলাদেশের মুদ্রার নাম রাখা হয় টাকা।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করতে নগদ টাকা (রুপি নোট) পুড়িয়ে দিয়েছিল। শুধু ঢাকার মতিঝিলে কয়েক’শ কোটি টাকার নোট তারা পুড়িয়ে ধ্বংস করেছিল। বাংলাদেশের সরকার ৯ মাসের ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠন বিষয়ে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ ছিল।

তাই সরকার আনুষ্ঠানিক বিজয়ের মাত্র ১০ দিনের মধ্যে ‘টাকা’কে বাংলাদেশের জাতীয় মুদ্রা হিসেবে ঘোষণা করে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আইন প্রণয়ন করে। সরকারি এক দলিলে দেখা যায়, স্বাধীনতা লাভের পক্ষকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বে বাংলাদেশের ‘টাকা’ ছাপানোর প্রক্রিয়া শুরু করে।

কাগজি নোটের নিরাপত্তা বজায় রেখে নোট ছাপানো সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হলেও তা ১২ থেকে ১৫ মাস সময়ের প্রয়োজন। বাংলাদেশের প্রয়োজন বিবেচনা করা বন্ধু রাষ্ট্র ভারত তাদের ব্যাংক নোট ছাপানোর ছাপাখানায় বাংলাদেশের নোট দ্রুততার সঙ্গে ছাপিয়ে দিতে রাজি হয়।

বিশ্বের কয়েকটি দেশের মুদ্রার নাম একই ধরনের। তবে বাংলাদেশের মুদ্রা হিসেবে টাকা নামটি স্বতন্ত্র। ভারতের সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে ৪ মার্চ ১৯৭২ তারিখে প্রকাশিত দুটি ব্যাংক নোট ১ টাকা ও ১০০ টাকা ছাপানো হয়। ১ টাকার নকশায় বাংলাদেশের মানচিত্র ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ কথাটি স্থান পায় এবং তাতে স্বাক্ষর করেছিলেন সে সময়ের অর্থসচিব কে এ জমান। 

অন্যদিকে ১০০ টাকার নকশায় দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশের মানচিত্র ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি এবং তাতে লেখা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ১০০ টাকার ব্যাংক নোটটি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম গভর্নর এ এন হামিদ উল্ল্যাহ্ স্বাক্ষরিত। 

বাংলাদেশের প্রথম ১০০ টাকার ব্যাংক নোট

জাতীয় জীবনে টাকার তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও ২০২১ সালের ৪ মার্চ মুদ্রা সংগ্রাহকদের সঙ্গে নিয়ে দিবসটি পালনের প্রথম উদ্যোগ নেয় কালেক্টার। কালেক্টার’, বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র ব্যাংক নোট ও মুদ্রা বিষয়ক তথ্য ও গবেষণাধর্মী পত্রিকা। বাংলাদেশের প্রথম কাগজি টাকার নোট প্রচলনের ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ‘কালেক্টার’ ২০২১ সালের ৪ মার্চ তারিখটিকে প্রথমবারের মতো ‘টাকা দিবস’ হিসেবে উদ্‌যাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

 উদ্যোগটিকে শুধু শৌখিন ব্যাংক নোট সংগ্রাহকেরা সাদরে গ্রহণ করেনি, জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোও যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে প্রচার করে। ২০২২ সালে বাংলাদেশের প্রথম কাগজি টাকা প্রচলনের সুবর্ণজয়ন্তীকে (১৯৭২-২০২২) সামনে রেখে ব্যাপক উদ্দীপনার সঙ্গে টাকা দিবস পালিত হয়েছিল। 

আরও পড়ুন: শিক্ষা আর স্কুলে নেই, সব চলে গেছে কোচিং সেন্টারে

টাকা ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ানোই এ উদ্যোগের লক্ষ্য। টাকাকে কেন্দ্র করেই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। তবে টাকা যত্নের সঙ্গে ব্যবহারে আমরা ততটা সচেতন নই। যার ফলে ব্যাংক নোট দ্রুত পুরোনো হয়ে যায় এবং স্থায়িত্ব যায় কমে। 

এখন বাংলাদেশে ১, ২, ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০ এবং ১০০০ টাকা মূল্যমানের কাগুজে নোট রয়েছে। পাশাপাশি ১, ২ এবং ৫ টাকা মূল্যমানের ধাতব মুদ্রাও আছে। আগে ১, ৫, ১০, ২৫ ও ৫০ পয়সার প্রচলন ছিল, যা বর্তমানে অচল। বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের পক্ষে কাগুজে নোট প্রচলনের ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ছাপানো টাকা ও কয়েন (মুদ্রা) মিলে রয়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। ব্যাংক নোট ২ লাখ ৯০ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকার। আর সরকারের নোট ও কয়েন ১ হাজার ৭১৭ কোটি টাকার। তবে দেশে ব্রড মানির পরিমাণ ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা।