জাবির সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, জানতে চায় ইউজিসি 

অভিযোগ
সহকারি অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনি’র বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদক্ষেপ জানতে চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন  (ইউজিসি)।

গত ১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চুক্তিভিত্তিক) রহিমা কানিজ বরাবর ইউজিসি’র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ-পরিচালক মৌলি আজাদ কর্তৃক এ পত্র  পাঠানো হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী অভিযোগ সেলের আহ্বায়কেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ললিপপ হাতে শিক্ষিকার সঙ্গে সেলফি তোলা জাবি প্রক্টরের পদত্যাগ

পত্রে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এবং একটি জাতীয় দৈনিকের বরাতে দিয়ে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনি বিভাগের একাধিক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন, ভুক্তভোগী ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং জোর করে দায়মুক্তিপত্র আদায় করেছেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি ব্যবস্থা নিয়েছেন কমিশনকে তা পত্র পাওয়ার পর সাত কার্যদিবসের মধ্যে পত্রযোগে এবং ইমেইলে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

পত্রের সত্যতা নিশ্চিত করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ-পরিচালক মৌলি আজাদ বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কি ব্যবস্থা নিয়েছে আমরা সেটা জানতে চেয়েছি। এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। চিঠি আসলে তারপর আমরা বিবেচনা করবো।

আরও পড়ুন: জাবি শিক্ষকের যৌন হয়রানির অভিযোগের তদন্ত নিয়ে ‘লুকোচুরি’র অভিযোগ

এর আগে, ২০২২ এর নভেম্বর মাসে পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ৪২তম ব্যাচের ছাত্রী ও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষিকা আনিকা বুশরা বৈচির সঙ্গে মাহমুদুর রহমান জনির অফিসকক্ষে তোলা অন্তরঙ্গ একটি সেলফি ফাঁস হয়। পরে ছবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর দেওয়ালে পোস্টারিং হওয়ার পর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের অভিযোগ জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সাবেক এক ছাত্রী বলেন, শিক্ষক বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল জনি। আমি তার কুপ্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি। পরে আমার যোগ্যতা ও পদ খালি স্বত্বেও আমাকে শিক্ষক হিসেবে নেওয়া হয়নি। উপরন্তু যাকে নেওয়া হয়েছে তার সঙ্গে জনির অন্তরঙ্গ ছবি ফাঁস হয়েছে। কিন্তু তার চেয়েও যোগ্য প্রার্থী ছিল।

আরও পড়ুন: জাবি শিক্ষকের যৌন হয়রানির অভিযোগের তদন্ত নিয়ে ‘লুকোচুরি’র অভিযোগ

এছাড়া, গত জানুয়ারি মাসে আবারও একই বিভাগের আরেক ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জনির পক্ষে ‘দায়মুক্তি’ পত্র লেখানোর অভিযোগ ওঠে। এসব ঘটনার জেরে জনির বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। পরবর্তীতে নানা টালবাহানার পর এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে গত ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তবে,তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন দাবি করলেও সিন্ডিকেটের আলোচ্যসূচিতে ছিল না প্রতিবেদনটি।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগে নিয়োগ পাওয়া এই মাহমুদুর রহমান জনি ২০১২ সালে জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।