ঢাবি-মেডিকেল-বুয়েটে শতাধিক প্রেমিকা মেহেদীর

মেহেদী হাসান

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন আইডি খুলে কখনও পুলিশের এএসপি, কখনও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, কখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয়ে নিজেকে উপস্থাপন করতে মেহেদী হাসান (৩২)। এসব পরিচয়ে গত সাত বছরে বুয়েট, ঢাবি, মেডিকেলসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায়ে পড়ুয়া ধনাঢ্য পরিবারের শতাধিক তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান মেহেদী।

প্রথমে ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদ পেতে নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন মেহেদী। প্রেমের সম্পর্কের একপর্যায়ে নারীদের বিয়ের প্রলোভন ও আবেগতাড়িত করতেন। যারা তার ডাকে সাড়া দিতেন, সেসব নারীর কাছে থেকে কৌশলে তাদের নগ্ন ভিডিও ও ছবি সংগ্রহ করতেন।

আরও পড়ুন : ‘তোরা তো ঠিকঠাক রেপও করতে পারিস না’, র‌্যাগিংয়ের সময় ছাত্রলীগ নেতা

পরে তা অনলাইনে ছাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করতেন। কিন্তু এ প্রতারকের শেষরক্ষা হয়নি। এক বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্রীর বাবার মামলায় ঢাকার সাভার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম উত্তর বিভাগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১৫ ফেব্রুয়ারি এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর বাবা পল্টন থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে বাদী হয়ে মামলা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, তার শ্যালকের ফেসবুক মেসেঞ্জারে ৭ জানুয়ারি একটি ভিডিও আসে। ভিডিওটি ওপেন করে ভাগনির অশ্লীল ছবি দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তার ভাগনি রিমি (ছদ্মনাম) সঙ্গে আলোচনা করেন।

জানতে পারেন মেহেদী হাসান নামে একটি ছেলের সঙ্গে ২০২০ সালের প্রথম দিকে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তার। সম্পর্ক থাকার সময় মেহেদী নিজেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। ওইসময় রিমিকে বিভিন্ন প্রলোভনে নগ্ন ভিডিও ও ছবি পাঠাতে বাধ্য করেন মেহেদী।

আরও পড়ুন: ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরলে তোমাকে হট লাগে: কলেজছাত্রীকে ঢাবি ছাত্রলীগ নেতা

পরে রিমি জানতে পারেন মেহেদী কোনো চাকরি করেন না। তিনি একজন প্রতারক। নিজেকে সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক করে অশ্লীল ছবি ধারণ করেন। ব্ল্যাকমেইল করাই তার পেশা। এসব বিষয় জানার পর রিমি মেহেদীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন সময় মেহেদী রিমির অশ্লীল ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখান।

রিমি ভয় পেয়ে বিভিন্ন সময়ে মেহেদীকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আড়াই লাখ টাকা দেন। লোকলজ্জার ভয়ে রিমি বিষয়টি কারও কাছে প্রকাশ করেননি। একপর্যায়ে রিমি আর কোনো টাকা দেবেন না বলে জানিয়ে দেন। এতে মেহেদী ক্ষিপ্ত হয়ে রিমির আত্মীয়দের মোবাইল নম্বর ও ফেসবুক আইডি সংগ্রহ করে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ম্যাসেঞ্জারে ও হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে দেন।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গ্রেফতার মেহেদী ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে মেডিকেল, বুয়েট ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়েদের সঙ্গে ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। পরে নগ্ন ছবি ও ভিডিও নিয়ে তা সংরক্ষণ করতেন। এরপর তা ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়েছেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ধনাঢ্য পরিবারের শতাধিক শিক্ষার্থীর নগ্ন ভিডিও ও ছবি এবং চ্যাটিং হিস্ট্রি তার মোবাইল ফোনে পাওয়া গেছে। সাত বছর ধরে শতাধিক নারীর সঙ্গে এ ধরনের অপকর্ম চালিয়ে আসছিলেন মেহেদী।